Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ভরা পৌষে ঠান্ডার দেখা নেই শহরে

ভরা পৌষে যেন শরত্‌ ফিরে এসেছে! সকাল থেকে কড়া রোদ আর হাওয়ায় সামান্য হিম ভাব। ঠিক যেন শরত্‌কালের ঝলমলে সকাল। বোঝার উপায় নেই যে সময়টা ডিসেম্বরের শেষ নাকি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। মঙ্গলবারের পর বুধবার, দু’দিন স্বাভাবিকের থেকেও বেশি উষ্ণ থাকল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি দুই শহর।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৩
Share: Save:

ভরা পৌষে যেন শরত্‌ ফিরে এসেছে! সকাল থেকে কড়া রোদ আর হাওয়ায় সামান্য হিম ভাব। ঠিক যেন শরত্‌কালের ঝলমলে সকাল। বোঝার উপায় নেই যে সময়টা ডিসেম্বরের শেষ নাকি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। মঙ্গলবারের পর বুধবার, দু’দিন স্বাভাবিকের থেকেও বেশি উষ্ণ থাকল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি দুই শহর। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার জলপাইগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকাতার তাপমাত্রা ছিল প্রায় ২৯ ডিগ্রি। যা কিনা স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি। একই রকম তাপমাত্রা ছিল শিলিগুড়িতেও। সাম্প্রতিক অতীতে, বছরের শেষ দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার এমন উর্দ্ধগতি দেখা যায়নি বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সুবীর সরকার বলেন, “সূর্যের তাপ খুবই বেশি ছিল। এককথায় এ দিন শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে ছিল ঝলমলে দিন। সে কারণেই উষ্ণতা বেড়েছে।”

কিন্তু ইংরেজি বছরের শেষ দিনে ফি বছর যেখানে কুয়াশা এবং কনকনে হাওয়া দেখেছে দুই শহর, সেখানে এবার এমন উলটপুরাণ?

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শীত কতটা জাকিয়ে পড়বে তা মূলত নির্ভর করে দু’টি বিষয়ের উপর। নিম্নচাপ এবং পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। কোনও এলাকায় নিম্নচাপ তৈরি হলে আশেপাশের অঞ্চল থেকে মেঘ টেনে আনে, বৃষ্টিপাতও হয়। যার ফলে সূর্যের আলোর অনেকটাই কম পড়ে। আর বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা একলাফে অনেকটা কমে যায়। অন্যদিকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কোনও এলাকার উপর দিয়ে চলে গেলে, ঝড়-বৃষ্টির কারণেও তাপমাত্রা কমে। যেমন চলতি মাসের শুরুতেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা হুহু করে নীচের দিকে নামতে শুরু করে। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, শীত জাকিয়ে পড়ার এই দুই শর্তই হঠাত্‌ করে উধাও হয়ে গিয়েছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির আকাশ থেকে। তার জেরেই ভরা মরশুমেও শীত পিছু হঠেছে বলে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

কেন এমন হল তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সুবীরবাবু। বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে কাশ্মীরে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা তৈরি হয়েছে। দুই প্রান্তে দু’টি নিম্নচাপ শক্তিশালী হওয়ায় শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি এলাকার উপরে উচ্চচাপ তৈরি হয়েছে। তার জেরেই আকাশ পরিষ্কার হয়েছে। সূর্যের তাপও বেড়েছে। সুবীরবাবুর কথায়, “কোনও এলাকায় উচ্চচাপ তৈরি হলে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। সূর্যের আলো বেশি করে আসে। রোদের তেজ বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই উষ্ণতা বাড়ে।”

তবে এই পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে বলেও সুবীরবাবু জানিয়েছেন। কাশ্মীরে তৈরি হওয়া পশ্চিমী ঝঞ্ঝা যেমন উত্তরবঙ্গের দিকে এগোতে শুরু করে, তেমনিই বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া নিম্নচাপও ক্রমশ উত্তরবঙ্গের দিকে ধেয়ে আসছে বলে জানানো হয়েছে। যার জেরে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবহাওয়া বদলাতে শুরু করবে বলে সুবীরবাবু জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রেও আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আকাশ কিছুটা মেঘলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে। নিম্নচাপের টানে উত্তুরে হাওয়াও দ্রুত বেগে উত্তরবঙ্গে ঢুকে পড়বে বলে মনে করছে আবহাওয়া দফতর।

আবহাওয়া দফতর এবং ভূগোল বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস সত্যি হলে, ইংরেজি বছরের শেষ দিনে উষ্ণ হলেও, নতুন বছরের প্রথম দিনে ফের শীত ফিরে পেতে চলেছে উত্তরবঙ্গের দুই শহর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anirban roy siliguri winter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE