পেট্রোল পাম্পের সামনে ধীরগতিতে থাকা গাড়ির মধ্যে অ্যাসিড ছুড়ে পানশালার দুই গায়িকা-সহ ৩ জনকে জখম করে পালাল মোটরবাইক আরোহী দুই দুষ্কৃতী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে। তিন জনকেই গুরুতর জখম অবস্থায় ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জখম দুই তরুণীই লুধিয়ানার বাসিন্দা। পেশার সূত্রের শিলিগুড়ির ইসকন মন্দির রোডে ভাড়াবাড়িতে থাকেন তাঁরা। জখম তৃতীয় জন হলেন গাড়ির চালক মহম্মদ নাসির। হাসপাতালের চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, দুই তরুণীর মুখ ও শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছে। তাঁদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, পানশালায় নিয়মিত যাতায়াতকারীদের কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। প্রত্যক্ষদর্শীদের জেরা করে পুলিশ কিছু তথ্য পেয়েছে। পানশালার মালিকের ভূমিকা নিয়েও এলাকায় প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ওই পানশালায় অতীতেও একাধিক গোলমালের অভিযোগ রয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ তদন্তে গেলেও অজ্ঞাত কারণে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেই প্রসঙ্গে পুলিশের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগও তুলেছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের কয়েকজন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “আমি ট্রেনে রয়েছি। এসিপিকে জিজ্ঞাসা করুন।” শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পূর্ব) তপন আলো মিত্রও বিশদে কিছু বলতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, “তদন্ত হচ্ছে।”
অ্যাসিড মাখা গাড়ি সরাতে গিয়ে জখম যুবক।
বৃহস্পতিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
পানশালা সূত্রের খবর, সপ্তাহখানেক আগে ওই দুই তরুণী লুধিয়ানা থেকে এসে সেবক রোডের বিশাল সিনেমা হলের পাশের গলির একটি পানশালায় গায়িকা হিসেবে কাজ করছেন। এ দিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সেবক রোড এলাকার ওই পেট্রোল পাম্পের সামনে তাঁদের নিয়ে গাড়িটি থামে। তেল ভরার পরে গাড়িটি বাইর হয়। তখন গাড়িটি ধীরগতিতে চলছিল। তখনই একটি বাইক গাড়িটির পাশে চলতে থাকে। একজন চালাচ্ছিলেন ও আরেকজন পেছনে বসেছিলেন। দু’জনের মুখ পুরোটাই হেলমেট দিয়ে ঢাকা ছিল। পিছনে বসা আরোহী একটি বোতল থেকে গাড়িতে অ্যাসিড ছিটিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে দুই তরুণী আর্তনাদ করে ওঠেন। গাড়ির সিটও পুড়ে যায়। চালকের গায়েও অ্যাসিড লাগে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই তরুণী গাড়ি থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে রাস্তার উপরেই পড়ে যান। চালক নিজে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পরিচিতদের ফোন করেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী ইজাজ আহমেদ বলেন, “হঠাত্ হইচই শুনে দেখি, দু’জন মোটরবাইকে চড়ে পালাচ্ছে। দুজন মহিলা মাটিতে পড়ে আর্তনাদ করছেন। তাদের মুখ ঝলসে গিয়েছে।” জখম চালক নাসিরের দাদা মহম্মদ ফিরোজ বলেন, “ভাইয়ের দুর্ঘটনার কথা শুনে এসেছি। পরে জানতে পারি কেউ অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছে।” এলাকাবাসীর সন্দেহ, পানশালায় কোনও গোলমালের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে।
শিলিগুড়িতে পানশালায় গোলমালের ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। কয়েক বছর আগে সেবক রোডের শালুগাড়ায় একটি পানশালায় একটি ‘ডান্স-বার’-এ গোলমালের ঘটনায় প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার নাম জড়িয়ে পড়ে। জখম ওই নেতাকে নার্সিংহোমে চিকিত্সাধীন থাকতে হয়। সম্প্রতি দাগাপুরের একটি পানশালায় দু-দল মদ্যপ খোলাখুলি গুলির লড়াই চালায়। ঘটনাচক্রে, দাগাপুর ও সেবক রোডের পানশালা দুটির পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সরযূ শর্মা। ঘটনার পরে তিনি তরুণী দুটিকে দেখতে হাসপাতালে যাননি কেন তা নিয়ে অন্য গায়িকাদের কয়েকজন প্রশ্ন তুলেছেন। সরযূর বক্তব্য, “আমি হাসপাতালে গিয়ে কী করব! আমি মেয়ে দু’জনকে চিনি না। ওঁরা নতুন গাইছে। ব্যান্ড লিডার সব জানেন। পুলিশ দোষীদের ধরুক।” শিলিগুড়ির পানশালা মালিক সংগঠনের এক কর্তা জানান, আজ, শুক্রবার তাঁরা জরুরি বৈঠকে বসবেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “ভয়ঙ্কর চেহারা হয়ে যাচ্ছে শিলিগুড়ির। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ছে। সে দিকে নজর না দিয়ে শুধু উত্সবে মাতলে হবে? তা ছাড়া কী ধরনের যোগসাজশে শহরে সমাজবিরোধীরা বেপরোয়া হয় সেটা শহরবাসী বুঝতে পারছেন। সময় হলে জবাবও দেবেন শিলিগুড়ির বাসিন্দারা।”