Advertisement
০২ মে ২০২৪

মিড ডে মিলে নজির গড়েছে তপনের স্কুল

মিড ডে মিলের রান্না নিয়ে দুই গোষ্ঠীর গোলমাল থানা অবধি গড়ায়। ১৬ জন গ্রামবাসীকে ১৪ দিন জেলও খাটতে হয়। টানা ৬ বছর বন্ধ ছিল মিড ডে মিলের রান্না। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের গোফানগর পঞ্চায়েতের সেই চেঁচাই প্রাথমিক স্কুল সুষ্ঠু মিড ডে মিলের ব্যাপারে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। কোনও দিন ডিমের ঝোল, ভাত। কখনও ভাতের সঙ্গে কলাইয়ের ডাল বা ছোলার ডালের সঙ্গে আলুভাজা ও সয়াবিনের তরকারি।

খাওয়া চলছে স্কুলের দোতলায়। অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

খাওয়া চলছে স্কুলের দোতলায়। অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৩
Share: Save:

মিড ডে মিলের রান্না নিয়ে দুই গোষ্ঠীর গোলমাল থানা অবধি গড়ায়। ১৬ জন গ্রামবাসীকে ১৪ দিন জেলও খাটতে হয়। টানা ৬ বছর বন্ধ ছিল মিড ডে মিলের রান্না। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের গোফানগর পঞ্চায়েতের সেই চেঁচাই প্রাথমিক স্কুল সুষ্ঠু মিড ডে মিলের ব্যাপারে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

কোনও দিন ডিমের ঝোল, ভাত। কখনও ভাতের সঙ্গে কলাইয়ের ডাল বা ছোলার ডালের সঙ্গে আলুভাজা ও সয়াবিনের তরকারি। স্কুলের এক টুকরো জমিতে চাষ করা সব্জির ঝোল। শেষ পাতে আম, কাঁঠালের মতো মরসুমি ফল। গ্রামবাসীরা খেতের লাউ কুমড়ো দিয়ে যান। গাঁয়ের স্বনির্ভর দলের মহিলারা বৈদ্যুতিক চিমনি সহ গ্যাস-ওভেনে রান্না করেন। দোতলার রান্না ঘরে রয়েছে ফ্রিজ এবং পরিস্রুত জলের মেশিন। সেখানে চেয়ারটেবিলে খুদেদের যত্ন করে খাওয়ানো হয়। যা দেখে রাজ্যের মিড ডে মিল প্রকল্পের অধিকর্তা নরেন্দ্রনাথ বর্মন সন্তুষ্ট। সোমবার সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রশংসা করেন তিনি।

২০০৪ থেকে ২০১০ সাল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বিবাদে স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না বন্ধ ছিল। সে সময়ে পড়ুয়া কমে ১০ জনে দাঁড়ায়। ৫ মাস ধরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের বোঝানোর পর রান্না চালু হয়। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান পবিত্র মোহান্ত। একাধিক বার গ্রামবাসীদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। ২০১১ সালে স্কুলে চালু হয় মিড ডে মিল। ফের পড়ুয়া বাড়তে থাকে। এর পরে পবিত্রবাবু খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে পিঠে-পার্বন, লুচি-পায়েস খাওয়ানোর মতো নানা বিশেষ কর্মসূচিতে গ্রামবাসীদের আয়োজনে সামিল করান।

তাতে ফলও মিলেছে হাতেনাতে। এখন পড়ুয়া সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫২ জন। পবিত্রবাবু জানান, গ্রামের বাসিন্দা নিমাই টিগ্গা ২ শতক জমি স্কুলকে দান করেছেন। ওই জমিতে এখন পুঁইশাক, ঢ্যাড়স ফলছে। তিনি বলেন, “মিড ডে চালু হওয়ার পর পড়ুয়া বেড়েছে। স্কুলের কচিকাঁচারা সব গাঁয়েরই। তাই বাজারে বিক্রির আগে খেতের সেরা সব্জিটা ওদের জন্য বেছে রাখি।”

দুপুর দেড়টা নাগাদ স্কুলে গেলে দেখা যাবে খাওয়ার ঘণ্টা পড়লে সারি দিয়ে কলের সামনে খুদে পড়ুয়ারা সাবানে হাত ধুয়ে নিচ্ছে। তার পরে দোতলার রান্নাঘরে বসছে। রান্নার দায়িত্বে থাকা গোষ্ঠীর নেত্রী দয়াময়ী বর্মনের কথায়, “বিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থা ও ধোঁওয়াহীন পরিবেশে রান্নার কাজে সদস্যরাও উৎসাহিত। স্কুলের নিজস্ব থালা আর গ্লাসে পড়ুয়া খাবার খায়।” গত বছর চেঁচাই প্রাথমিক স্কুল ‘নির্মল বিদ্যালয়’ ও ‘শিশুমিত্র পুরস্কার’ পায়। সম্প্রতি ইউনিসেফ-এর এক প্রতিনিধি দল স্কুল ঘুরে প্রশংসা করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mid day meal anupratan mohanta tapan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE