Advertisement
১০ মে ২০২৪

মোদীর বক্তৃতায় গোর্খাল্যান্ড নেই, বিপাকে গুরুঙ্গরা

হাতের খাদা হাতেই থেকে গেল। সভা মঞ্চে তা বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীকে পরানোর সুযোগই পেলেন না গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। দার্জিলিং কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে সমর্থন করেছে মোর্চা। সে জন্য তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির অদূরে খাপরাইলে সেই প্রার্থীর সমর্থনে সভা করতে এসেছিলেন মোদী। কিন্তু দীর্ঘ বক্তৃতায় একবারের জন্য ‘গোর্খাল্যান্ড’ শব্দটি উচ্চারণ পর্যন্ত করলেন না তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:২৮
Share: Save:

হাতের খাদা হাতেই থেকে গেল। সভা মঞ্চে তা বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীকে পরানোর সুযোগই পেলেন না গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুঙ্গ।

দার্জিলিং কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে সমর্থন করেছে মোর্চা। সে জন্য তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির অদূরে খাপরাইলে সেই প্রার্থীর সমর্থনে সভা করতে এসেছিলেন মোদী। কিন্তু দীর্ঘ বক্তৃতায় একবারের জন্য ‘গোর্খাল্যান্ড’ শব্দটি উচ্চারণ পর্যন্ত করলেন না তিনি। মোদী এ দিন শুধু বলেন, ‘গোর্খাদের স্বপ্ন, আমারও স্বপ্ন’। বিজেপি-র নির্বাচনী ইস্তাহারেও গোর্খাল্যান্ডের কথা নেই। মোর্চার চাপাচাপিতে ইস্তাহার প্রকাশের পরে সংযোজনী ছাপিয়ে তাতে গোর্খাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের আশ্বাস অবশ্য দিয়েছে বিজেপি, কিন্তু সেখানেও গোর্খাল্যান্ড শব্দটি রাখা হয়নি। এ দিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে সহযোগী দলের নেতারা হাত মিলিয়ে ছবি তোলানোর সময়েও মোদীর পাশে দাঁড়ানোর জায়গা পাননি গুরুঙ্গ। তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।

বিজেপি-র অন্দরের খবর, গোর্খাল্যান্ডের দাবি পূরণ নিয়ে কোনও আশ্বাস দিলে রাজ্যের সমতলে তার খারাপ প্রভাব পড়বে, এই আশঙ্কাতেই দলের রাজ্য নেতৃত্ব গোড়া থেকে সতর্ক। রাহুলবাবু তো বারেবারেই স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, তাঁরা আলাদা গোর্খাল্যান্ডের পক্ষপাতী নন। তাই মোদী সভা মঞ্চে পৌঁছনোর পরে যখনই দেখা গেল গুরুঙ্গ গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, মুহূর্তে সেখানে পৌঁছে গেলেন রাহুলবাবু। মোদী ও গুরুঙ্গের মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা গেল বিজেপি-র রাজ্য সভাপতিকে।

কিন্তু খাদা পরানোর সুযোগটুকুও মিলল না কেন? বিজেপি-র দার্জিলিং জেলার সভাপতি রথীন্দ্র বসু বললেন, “সময় সুযোগ মিলল কই!” অনুষ্ঠানে মোদী কেবল বিজেপি-র স্থানীয় নেতাদের দেওয়া একটি বড় মালা একবার মাথায় ঠেকান।

রাহুলবাবু সভায় বলেছেন, “গুরুঙ্গরা তৃণমূলের মঞ্চে গেলে ভাল মানুষ। কিন্তু বিজেপি-র সঙ্গে থাকলে তাঁদের গ্রেফতারের চেষ্টা হয়। যাই হোক, আইন-আদালত আছে। আদালত বিমলদের জামিন দিয়েছে।” কিন্তু মোর্চার আলাদা রাজ্যের দাবি-দাওয়ার প্রসঙ্গে একটি শব্দও খরচ করেননি বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি।

এই প্রেক্ষাপটে মোদী কী বলেন, তা নিয়ে সব মহলেই কৌতূহল ছিল। কিন্তু দীর্ঘ বক্তৃতায় গোর্খা সম্প্রদায়ের ‘সুখ-দুঃখ-মান-সম্মান’-এর নানা প্রসঙ্গ তুললেও পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে কোনও কথা বলেননি বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। বরং তিনি বলেছেন, “গোর্খারা দেশের সুরক্ষার কাজ মনপ্রাণ দিয়ে করেন। গোটা দেশে এমন কোনও রাজ্য নেই, যেখানে গোর্খারা সুরক্ষার কাজে নিযুক্ত নন। পুলিশ না-থাকলেও বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে সর্বত্রই গোর্খাদের দেখা যায়। তাঁদের উপরে নির্ভর করা যায়। তাঁদের উপরে বিশ্বাস করা যায়। এটা গোর্খাদের পক্ষে বিরাট সম্মানের বিষয় বলে আমি মনে করি।”

কিন্তু মোর্চা যে বিষয়কে সামনে রেখে পাহাড়ে কর্তৃত্ব কায়েম করেছে, সেই গোর্খাল্যান্ডের দাবির ব্যাপারে মোদীর নীরবতা নিয়ে গুরুঙ্গরা পাহাড়ে ফিরে কী জবাব দেবেন? এটা ভেবেই যেন মোদীর বক্তৃতার সময়ে মূল মঞ্চের বাঁ দিকে বসে থাকা মোর্চা নেতা-কর্মীদের অনেকেই একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলেন। তাই মোদী যখন বললেন, ‘গোর্খাদের স্বপ্ন আমারও স্বপ্ন’, তখন হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাস্থল। এর পরেই তাঁর সংযোজন, “দার্জিলিং পাহাড়ের জন্য আলাদা ভাবে ভাবতে হবে। অনেক কাজ করার রয়েছে। পাহাড়ের চা-পর্যটনের উন্নয়ন থমকে রয়েছে। তা করতে হবে। পাহাড়ের বৃদ্ধদের জন্য বৃদ্ধাবাস তৈরি করতে হবে।”

এর পরে ম্লান হলেও কিছুটা যেন হাসি দেখা গেল গুরুঙ্গ ও তাঁর স্ত্রী মোর্চা নেত্রী আশা গুরুঙ্গের মুখে। কিন্তু সভায় গোর্খাল্যান্ড শব্দটি একেবারেই অনুচ্চারিত থাকায় দুশ্চিন্তার বোঝা যে বেড়েছে, সেটা স্বীকার করলেন মোর্চার অনেকেই। তাঁদের ভরসা কেবল মোদীর সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে গুরুঙ্গের বাগডোগরা যাত্রা। সভায় বক্তৃতা দিয়ে ফেরার পথে মোদীর সামনে গিয়ে দাঁড়ান সস্ত্রীক গুরুঙ্গ। আশাদেবীর সঙ্গে খানিকক্ষণ কথা বলেন মোদী। এর পরে বিমলকে হেলিকপ্টারে তুলে বাগডোগরা বিমানবন্দর পর্যন্ত নিয়ে যান। ৭ মিনিটের উড়ানে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর সফরসঙ্গী হাওয়ার পরে ফেসবুকে তা ঘটা করে লিখে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করার চেষ্টাও শুরু করে দিয়েছেন গুরুঙ্গ। মোর্চা সভাপতির প্রতিক্রিয়া, “মোদী তাঁর সঙ্গে হেলিকপ্টারে বাগডোগরা যাওয়ার সুযোগ দেওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।”

যা দেখার পরে পাহাড়ের অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএম, জিএনএলএফ-এর মতো দলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই বিস্মিত। গোর্খা লিগ, সিপিআরএমের একাধিক নেতার প্রতিক্রিয়া, “গোর্খাল্যান্ডের নামগন্ধ নেই কেন বিজেপি-মোর্চার যৌথ সভায়? কেন মোর্চা নেতারা সেখানে আলাদা রাজ্যের দাবিতে সরব হলেন না? নাকি গোটাটাই রাজনীতি?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi gorkhaland gurung
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE