Advertisement
E-Paper

মার, মনোনয়ন ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত টিএমসিপি

পুলিশের সামনেই বিরোধী সংগঠনের ছাত্রীদের জাপটে ধরে তাঁদের তল্লাশি করে মনোনয়ন পত্র ‘ছিনতাই’-এর অভিযোগ উঠল টিএমসিপির বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে বাগডোগরার কালীপদ ঘোষ তরাই মহাবিদ্যালয়ের সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি নিয়ে এসএফআই, ছাত্র পরিষদ ও এবিভিপি কর্মী-সমর্থকেরা সরব হওয়ায় আসরে নামতে বাধ্য হন পুলিশের একাংশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৪
বীরপাড়া কলেজে জখম বিজেপি সমর্থক।—নিজস্ব চিত্র।

বীরপাড়া কলেজে জখম বিজেপি সমর্থক।—নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের সামনেই বিরোধী সংগঠনের ছাত্রীদের জাপটে ধরে তাঁদের তল্লাশি করে মনোনয়ন পত্র ‘ছিনতাই’-এর অভিযোগ উঠল টিএমসিপির বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে বাগডোগরার কালীপদ ঘোষ তরাই মহাবিদ্যালয়ের সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি নিয়ে এসএফআই, ছাত্র পরিষদ ও এবিভিপি কর্মী-সমর্থকেরা সরব হওয়ায় আসরে নামতে বাধ্য হন পুলিশের একাংশ। এরফলে টিএমসিপি ও তৃণমূলের নেতাদের হামলার মুখে পড়তে হল পুলিশকেও। হামলার মুখে শেষ পর্যন্ত পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে টিএমসিপি সমর্থকদের তাড়া করে। উত্তরবঙ্গের অন্য একাধিক কলেজে অবশ্য এদিন পুলিশের সামনেই টিএমসিপি লাগাতার তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ।

মনোনয়ন তোলা নিয়ে গত মঙ্গলবার থেকেই গোলমাল চলছে বাগডোগরা কলেজে। পুলিশ দর্শকের ভূমিকা নেওয়ায় মনোনয়ন পত্র জমা করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে বিক্ষোভ দেখায় এবিভিপি ও ছাত্র পরিষদ। শুক্রবার ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। গোলমালের আশঙ্কায় এ দিন কলেজের একশো মিটারের পরিবর্তে ২০০ মিটার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছিল পুলিশ। যদিও, সকাল থেকেই কলেজের গেটের আশেপাশে ভিড় জমায় টিএমসিপি সমর্থকরা। বিরোধী সমর্থকরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে, তাঁদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিরোধী দলের মনোনয়ন পেলে, তা ছিনতাইও করে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এরপরেই পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। টিএমসিপি নেতাদের বাধা দিতে এগিয়ে আসেন পুলিশ অফিসাররা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি মানবেন্দ্র দাস এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা লাঠি চালাতে শুরু করেন। এরপরেই প্রকাশ্যে এসিপিকে হুমকি দিতে শুরু করে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। আঙ্গুল উঁচিয়ে কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা রাজ্যে শাসক দল। আমাদের আপনি মারছেন? পরে সামলাতে পারবেন তো।’’ তৃণমূলের যুব নেতা সঞ্জয় পাল, টিএমসিপির জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়ের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে এবিভিপি এবং ছাত্র পরিষদ হামলা চালিয়ে তাঁদের প্রাণে মারার চেষ্টা করেছে বলে টিএমসিপি’র জেলা সভাপতি নির্ণয় রায় এ দিন বিকেলে বাগডোগরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এসিপি মানবেন্দ্রবাবু ওই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আজ, শনিবার জেলা জুড়ে কালা দিবস পালনের ডাক দিয়েছে টিএমসিপি। টিএসিপি’র জেলা সভাপতি বলেন, “এসিপি বারবার আমাদের লোকদের টার্গেট করে মেরেছেন। আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল।” পুলিশের তরফেও এ দিনের গোলমালের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এ দিন অবশ্য কলেজে বিরোধী সংগঠনের সমর্থকরাও মনোনয়ন জমা করেছেন।

মনোনয়ন জমাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মালদহের গাজল কলেজ। টিএমসিপির পোস্টার-ফেস্টুন ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ সংঘর্ষ শুরু হয়। ব্লক সিপিএম নেতা সুচিৎ দাস গাড়ি নিয়ে কলেজে এলে তার গাড়িতে টিএমসিপি সমর্থকরা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। অন্যদিকে পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগে কলেজের সামনে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় টিএমসিপিও। কলেজ সূত্রে জানা গিয়ে আজ শনিবার থেকে গাজল কলেজে মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমার দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

কুমারগ্রামের কামাখ্যাগুড়ি শহীদ ক্ষুদিরাম কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের ভয় দেখিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ছাত্র সংসদ দখল করার অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপির বিরুদ্ধে। এলাকায় বিজেপির একটি পার্টি অফিসও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের সামনেই মনোনয়ন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বাম সংগঠনগুলিও।

টিএমসিপির বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে বীরপাড়া কলেজেও। এবিভিপি এবং বিজেপি কর্মীদের উপর লাঠি, খুকরি দিয়ে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। হামলায় তাদের ৬ জন কর্মী-সমর্থক জখম হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজেপি। তাঁদের মধ্যে ৪ জনের মাথা ফেটে যায়। খুকরির আঘাতে জখম ২ জনকে বীরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বিজেপি-র অভিযোগ হামলার ঘটনায় ছ’জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও, কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আলিপুদুয়ারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “কী ঘটেছিল খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

হামলার প্রতিবাদে শনিবার ১২ ঘণ্টার ডুয়ার্স বন্ধ ডেকেছে বিজেপি। তবে কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী।

এবিভিপি কর্মীদের তোলা মনোনয়ন পত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়িতেও। এ দিন আইটিআই কলেজের ছাত্র বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ১১টি আসনে এবিভিপি মনোনয়ন পত্র তোলে বলে দাবি। টিএমসিপির পাল্টা দাবি, এবিভিপির হয়ে কোনও পড়ুয়া মনোনয়ন সংগ্রহ না করাতেই, মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

টিএমসিপির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজেও। এসএফআই নেত্রী সায়শ্রী ভৌমিককে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় কলেজ চত্বরে। প্রতিবাদে দুপুর তিনটে নাগাদ অধ্যক্ষের ঘরের সামনে আমরন অনশন শুরু করেন সায়শ্রী। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে রায়গঞ্জ থানায় বিক্ষোভ শুরু করেন এসএফআইয়ের কর্মী সমর্থকেরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অনশন তুলে নেন সায়শ্রী। আগামী ২৮ জানুয়ারি এই কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা।

bagdogra tmcp abvp nomination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy