দেওয়াল তৈরি নিয়ে বিবাদের জেরে এক মহিলাকে আম গাছে বেঁধে ‘বিবস্ত্র’ করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তাঁর ৪ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। মালদহের বামনগোলা থানার কাশিমপুর এলাকায় গত বুধবার রাতে ওই ঘটনার পরে সেই রাতেই মুদিপুকুর হাসপাতালে ওই মহিলার প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মহিলার অভিযোগ পাওয়ার পর শুক্রবার পুলিশ মহিলাকে মারধরে অভিযুক্ত দুই প্রতিবেশীকে গ্রেফতারও করে। পুলিশ জানায়, ধৃতরা হল সখিন সিংহ ও সাগর সিংহ। বাকি দুই অভিযুক্ত এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
তবে মহিলাকে আটকে মারধরের কথা স্বীকার করলেও তাঁকে বিবস্ত্র করার কথা পুলিশ মানতে চায়নি। যদিও নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। বৃহস্পতিবার সকালে অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাকি দুই অভিযুক্ত পালিয়ে গিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। এমনকী অভিযোগপত্রের প্রতিলিপিও না দেওয়া ও মহিলার বয়ান বদলে দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগও পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছে। পুলিশ সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে। মালদহের পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “প্রতিবেশীর দেওয়াল তোলা নিয়ে দুই পরিবারে বেশ কিছুদিন ধরে ঝামেলা চলছিল। মহিলাকে মারধরের অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বিবস্ত্র করার অভিযোগ ঠিক নয়।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার বাড়ির পাশেই বাড়ি ধৃত সখিন সিংহের। সখিন তাঁর বাড়িতে একটি মাটির দেওয়াল তৈরি করছিলেন। সেই দেওয়াল তাঁদের জায়গা দখল করে দেওয়াল তোলা হচ্ছে বলে ওই মহিলার পরিবার বাধা দেয়। বেশ কয়েকবার দেওয়াল ভেঙেও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপরেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। সখিনও পাল্টা অভিযোগ করেন, ওই মহিলার কীর্তন গাওয়া নিয়ে।
ওই দিন রাতে বাড়িতে সন্ধ্যারতির সময় কীর্তন গাইছিলেন ওই মহিলা। সে সময় সখিন মুখে কালো কাপড় বেঁধে দলবল নিয়ে ঢুকে তাঁকে জোর করে বাড়ি থেকে তুলে প্রথমে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। তারপর একটি আমগাছে বেঁধে ‘বিবস্ত্র’ করে তাঁকে লাঠিপেটা করতে থাকে বলে অভিযোগ। ওই সময় ওই মহিলার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে তাপস ভয় পেয়ে প্রথমে লুকিয়ে পড়লেও পরে সে চিৎকার শুরু করে। তারপর তার কাকা দ্বিজেন সরকার সেখানে ছুটে গেলে অভিযুক্তরা পালায়। ওই মহিলা বলেন, “দড়ি দিয়ে আমগাছে বেঁধে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়। চিৎকার শুনে আমার দেওর এসে আমাকে বাঁচায়।”
পরদিন সকালে ওই মহিলা পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরও প্রথমে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। শুক্রবারই পুলিশ দুজনকে ধরে। এপিডিআরের বামনগোলা ব্লক সম্পাদক বাহাদুর মণ্ডল বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরও পুলিশ কেন সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিল না তা স্পষ্ট নয়।” বামনগোলার ওসি অলক ভৌমিক নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অভিযোগ ঠিক নয়। দুজনকে ধরেছি। বাকি দু’জনের খোঁজ চলছে।” জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “বিবস্ত্র করা হোক বা না হোক, বাড়ি থেকে কোনও মহিলাকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হবে আর পুলিশ চুপচাপ বসে থাকবে এ কেমন কথা। এরকম ঘটনায় পুলিশের তো দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy