Advertisement
E-Paper

রাজ-শহরে মেলে না তেষ্টার জলটুকুও

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জনসংখ্যা। বেড়েছে বাড়িতে বাড়িতে জলের সংযোগও। অথচ তৈরি করা হয়নি পানীয় জল সরবরাহের নতুন প্রকল্প। কয়েক দশক আগে সেই সময়ের চাহিদা মেনে যে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল, তা দিয়েই চলছে পানীয় জল সরবরাহের কাজ। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। কোথাও সুতোর মতো ধারায় জল পড়ে।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০২:২৬
এই সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্গী। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

এই সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্গী। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জনসংখ্যা। বেড়েছে বাড়িতে বাড়িতে জলের সংযোগও। অথচ তৈরি করা হয়নি পানীয় জল সরবরাহের নতুন প্রকল্প। কয়েক দশক আগে সেই সময়ের চাহিদা মেনে যে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল, তা দিয়েই চলছে পানীয় জল সরবরাহের কাজ। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। কোথাও সুতোর মতো ধারায় জল পড়ে। আবার কোথাও টিপটিপ করে পড়ছে। এক বোতল জল ভরতেই সময় চলে যাচ্ছে অনেকটা। ফলে ট্যাপকলগুলির সামনে পড়ছে দীর্ঘ লাইন।

বাড়িতে জলের সংযোগ নিয়েও অসুবিধের শেষ নেই বাসিন্দাদের। গরম পড়তেই সঙ্কট আরও তীব্র হয়ে উঠছে কোচবিহারে। প্রয়োজন মতো পানীয় জল না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অধিকাংশ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, বার বার অভিযোগ করলেও পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বাসিন্দারা অনেকেই জানান, পানীয় জল নিয়ে ক্রমশই সঙ্কট বাড়ছে কোচবিহারে। আগামী এক-দু’বছরের মধ্যে পানীয় জলের আলাদা কোনও ব্যবস্থা না করা হলে জল নিয়ে হাহাকার শুরু হবে।

কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান দীপক ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, পানীয় জলের সমস্যা আগামী এক বছরের মধ্যেই মিটে যাবে। তোর্সা নদী থেকে জল তুলে পরিশোধিত করে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। ৩৬ কোটি টাকার ওই কাজ এক বছরের মধ্যে হয়ে যাবে বলে আশা করছি।

কোচবিহারে পানীয় জলের ইতিহাস বহু পুরনো। রাজ আমলে বাসিন্দাদের জন্য পানীয় জল সরবরাহের জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজারা। সেই সময় জলাধার তৈরি করা হয় পাওয়ার হাউস মোড়ে। বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয় ট্যাপকল। কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গের জেলা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পরে পুরসভায় উন্নীত হয়। সেই সময় থেকে পুর কর্তৃপক্ষ শহরের বাসিন্দাদের জন্য ফের পানীয় জল সরবরাহের জন্য উদ্যোগী হন। প্রায় তিন দশক নতুন করে পানীয় জল সরবরাহের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা হয়।

বর্তমানে কোচবিহার পুরসভা এলাকায় ২০টি পাম্প হাউস রয়েছে। চারটি পাম্প হাউসের কাজ চলছে। তিনটি জলাধার রয়েছে। ১৫ হাজারের বেশি বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গত চার বছরে জলের সংযোগের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। পুর কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতি বছরই জনসংখ্যা বাড়ছে পুরসভা এলাকায়। ফলে বাড়িতে জলের সংযোগের সংখ্যাও বাড়ছে। তবে সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, পুরসভা প্রতিদিন তিনবার জল সরবরাহ করে। জলের গতি ঠিক না থাকায় ওই সময়ের মধ্যে অনেকেই জল নিতে পারেন না। বিশেষ করে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড, ১২ নম্বর ওয়ার্ড, ৩ নম্বর ওয়ার্ড, ২ নম্বর ওয়ার্ডে সমস্যা তীব্র। তবে কমবেশি প্রায় সব ওয়ার্ডেই পানীয় জল নিয়ে সমস্যা রয়েছে।

বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বর্তমানে পুরসভা এলাকায় বাড়িতে জলের সংযোগ নিতে হলে তিন হাজার টাকা জমা দিতে হয়। গত তিন বছর ধরে টাকা জমা দিতে রাজি হওয়া কয়েকশো পরিবার জলের সংযোগ এখনও পাননি। জলের গতি যে সমস্ত এলাকায় ঠিক রয়েছে তা দেখে কিছু পরিবারকে জলের সংযোগ দেওয়া হয়। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কুমার রাজীব নারায়ণ অভিযোগ করে বলেন, “জলের মান খুব খারাপ হয়েছে। মাঝে মধ্যে ঘোলা জল পড়ছে। জল পড়ার গতিও খুব কম। এ ভাবে আর চলা যায় না।”

১৫ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক বাসিন্দা জানান, চড়া রোদ মাথায় নিয়েই ট্যাপ কলের সামনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে জল নিতে হয়। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা মহানন্দা সাহা বলেন, “পুরসভা এলাকায় বহু পরিবার রয়েছে, যারা টাকা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও জলের সংযোগ পাচ্ছেন না। জলের সংযোগ যে সব বাড়িতে রয়েছে তাঁরাও জলের গতি নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। পুরসভা উদ্যোগী না হওয়ায় পানীয় জলের সঙ্কটে পড়তে হয়েছে আমাদের।”

(চলবে)

amar shohor water crisis drinking water namitesh ghosh cooch behar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy