শিলিগুড়ির হিন্দি হাইস্কুলের পড়ুয়াদের জলপাই মোড়ে। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
স্কুলের কয়েকটি ঘর তালা মেরে রাখা হয়েছে, ভর্তির মতো বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে না -- এমন নানা অভিযোগ তুলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন ছাত্র-অভিভাবকদের একাংশ। বুধবার বেলা সাড়ে ৯টা থেকে বর্ধমান রোডের উপর জলপাইমোড়ে অবরোধ করেন শিলিগুড়ি হিন্দি হাই স্কুলের ছাত্র অভিভাবকদের একাংশ। পরে পুলিশ প্রশাসনের তরফে বন্ধ করে রাখা ঘরগুলি খুলে দেওয়া হয় এবং সমস্যা নিয়ে বৈঠক ডেকে আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হলে বেলা ১১টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।
ছাত্র অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, স্কুলের সমস্যা নিয়ে বারবার আবেদন করেও ফল হয়নি। প্রশাসন এবং স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। এমনকী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও বৈঠক করেছেন। কিন্তু, সমস্যা মেটেনি। এ বছর পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। নতুন ক্লাসে ওঠা ছাত্রদের ভর্তির প্রক্রিয়াও হয়নি। ভর্তির জন্য মাত্রাতিরিক্ত টাকা চাইছেন কর্তৃপক্ষ। তার উপর বুধবার সীতারাম ডালমিয়া নামে এক ব্যক্তি স্কুলের কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে তালা দিয়ে ছাত্রদের বসতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। এর পরেই স্কুলের ঘরগুলি খুলে দেওয়া, অবিলম্বে সমস্যা মেটানোর দাবিতে এবং বিষয়টি যাতে মুখ্যমন্ত্রীর নজরে পড়ে সে কারণে পথ অবরোধ শুরু হয়। বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফরে পাহাড়ে রয়েছেন। সরকারের তরফে স্কুলের সমস্যা সমাধানের দাবি তোলেন আন্দোলনকারীরা। পরে থানায় সীতারাম ডালমিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করের অভিভাক মঞ্চের সম্পাদক সন্দীপন ভট্টাচার্য এবং অভিভাবকদের একাংশ।
সীতারামবাবু স্কুলের একজনের পরিচালন কমিটির একমাত্র সদস্য তথা ভগবতী প্রসাদ ডালমিয়ার ছেলে। তিনি বলেন, “স্কুলটি বেসরকারি এবং ভাষাগত ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সোসাইটির অধীনে রয়েছে। আমি সেই সোসাইটির এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য। অথচ ছাত্রদের ভর্তির জন্য স্কুলের নির্ধারিত টাকা দিতে চাইছেন না অভিভাবকদের একাংশ।” তাঁর অভিযোগ, সন্দীপন ভট্টাচার্য এবং অভিভাবক মঞ্চের আরও কিছু লোক তাদের উস্কে দিচ্ছে। গোলমাল পাকিয়ে তারা অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা টাকা তুলতে চাইছে। আমরা তা হতে দেব না।”
অবরোধ ওঠার পর বেলা ১টা নাগাদ মহকুমাশাসকের দফতরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ছাত্র, অভিভাবক, শিক্ষক এবং অভিভাবক প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে স্কুল পরিদর্শকের দফতরের দুই প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি থানার আইসি অচিন্ত্য গুপ্ত-ও ছিলেন। মহকুমাশাসক না-থাকায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপ দাস বলেন, “স্কুল চালানোর ক্ষেত্রে যাতে সমস্যা তৈরি না করা হয় সে জন্য সব পক্ষকে জানানো হচ্ছে। পঞ্চম, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া এবং নতুন ক্লাসে যারা উঠেছে তাদের নথিভুক্তকরণ শুরু করতে জানানো হচ্ছে। বিস্তারিত রিপোর্ট স্কুল শিক্ষা দফতরেও পাঠানো হচ্ছে।”
অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক সন্দীপনবাবু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলের সমস্যা মেটাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে গত ৭ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক হিসাবে এক জনকে নিযুক্ত করলেও ভগবতী প্রসাদ ডালমিয়া তাকে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়ে সেই কাজ করতে নিষেধ করেন। অন্যায়ভাবে স্কুলের ক্লাসঘর তালা মেরে দেওয়ায় সীতারাম ডালমিয়ার নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” তবে প্রশাসনের তরফে স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া এবং প্রতিদিন যাতে স্কুল ঠিক ভাবে চলে তা দেখার আশ্বাস দেওয়ায় তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকারি হারে ২৪০ টাকা ফি রয়েছে। অথচ স্কুল কর্তৃপক্ষ অন্যায় ভাবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ৪৮০০ টাকা, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণিতে ১৬০০ টাকা এবং নবম, দশম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ২০২০ টাকা দাবি করছেন।
এ দিন পড়ুয়ারা অবরোধ শুরু করলেও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন নর্থ বেঙ্গল গার্ডিয়ান ফোরামের কর্তারা এবং বহু অভিভাবক। ওই ৩১-ডি জাতীয় সড়কটি শিলিগুড়ির সঙ্গে জলপাইগুড়ির যোগাযোগের অন্যতম সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম হওয়ায় সাত সকালেই এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (ইস্ট) পিনাকী মজুমদার এবং শিলিগুড়ি থানার আইসি অচিন্ত্য গুপ্ত অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা মোটানোর জন্য তাঁদের বোঝানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy