প্রশাসনের কাছে বারবার বলেও সুরাহা হয়নি। স্কুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবিতে এ বার কর্মবিরতি করে লাগাতার ধর্না অবস্থান শুরু করলেন শিলিগুড়ি হিন্দি হাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
শুক্রবার সকাল থেকেই স্কুলের ঢোকার গেটের পাশে মঞ্চ করে ধর্না অবস্থান শুরু করেছেন। সকাল ৮ টা থেকে বেলা দেড়টা টা পর্যন্ত স্কুল চলার কথা। কিন্তু শিক্ষক, শিক্ষিকারা কর্মবিরতি করে অবস্থান আন্দোলন শুরু করায় এ দিন স্কুল হয়নি। অভিযোগ, জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু হলেও স্কুলে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি নেওয়া হয়নি। অন্যান্য ক্লাসে নতুন শিক্ষা বর্ষের ছাত্রদের নাম নথিভুক্ত হয়নি। বই দেওয়া হয়নি বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রদের। তাতে ক্লাসে পড়াতে সমস্যা হচ্ছে। সম্প্রতি অন্যায় ভাবে দুই অস্থায়ী শিক্ষককে স্কুল থেকে ছাটাই করে দেওয়া হয়েছে। যুক্তিসঙ্গত, কারণ ছাড়াই শিক্ষকদের বেতন অন্যায় ভাবে কাটা হচ্ছে। সরকারি স্কুল হলেও কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাইছেন না। তারা ভাষাগতভাবে সংখ্যা লঘু দাবি করে নানা সমস্যা তৈরি করছেন। প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন নিবেদন করেও কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে এ দিন থেকে তাঁরা ধর্না শুরু করলেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
স্কুলটি যে সোসাইটির অধীনে বলে দাবি করা হয় তার অন্যতম সদস্য সীতারাম ডালমিয়া জানান, তাঁরা পুরো বিষয়টি নজরে রাখছেন। স্কুলটি ভাষাগত সংখ্যা লঘুদের। তা নিয়ে মামলা চলছে। আদালতের নির্দেশ মতো তাঁরা পদক্ষেপ নেবেন। স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমি) প্রাণগোবিন্দ সরকার বলেন, “স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখান থেকেই নিদের্শের অপেক্ষায় রয়েছি।”
স্কুলের সমস্যা নিয়ে সরকারি স্তরে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবক মঞ্চের সদস্যরা। এমনকী স্কুলটি ভাষাগত সংখ্যা লঘু দাবি করে পরিচিলন কমিটির লোকজন যে মামলা করছে তার বিরুদ্ধে সরকারি উকিল অতীতে মামলা লড়েনি। এখনও বিষয়টি নিয়ে সরকার উদাসীন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিভাক মঞ্চের সম্পাদক সন্দীপন ভট্টাচার্য বলেন, “২৯ জানুয়ারি শুনানিতে গিয়ে দেখেছি সরকারি পক্ষের আইনজীবী আদালতে কোনও কথা বলছেন না। আমরা আমাদের আইনজীবীকে দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি। জেলাশাসক সরকারি হারে ফি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জানানো হয়েছে।”
স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকেও সহযোগিতা মিলছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন অভিভাক মঞ্চ। ৭ জানুয়ারি স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে সরকারি হারে ফি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে কোনও অজ্ঞাত কারণে ২০ জানুয়ারি সেই নির্দেশ চুপিসারে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ ২১ জানুয়ারি স্কুলের সমস্যা সমাধানের দাবিতে পথ অবরোধ হলে মহকুমাশাসকের দফতরে বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে স্কুল পরিদর্শকের প্রতিনিধি ছিলেন। তারাও বিষয়টি জানতেন না। সমস্ত বিষয়টি স্কুল শিক্ষা দফতরে জানালে ২২ জানুয়ারি জেলাশাসকের মাধ্যমে স্কুলে সরকারি হারে ফি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে। তা ফের ফের আদালতের দ্বারস্থ হন সীতারামবাবুরা। সন্দীপনবাবুর অভিযোগ, “স্কুলটিকে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। স্কুল তুলে ওই জমি বিক্রি করে প্রমোটিং করার পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। স্কুলের ওই জায়গা অন্তত ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি। বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলও তাতে মদত দিচ্ছে বলে আমাদের সন্দেহ।” কেন তিনি সরকারি নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তা নিয়ে কোনও সদুত্তর দেননি স্কুল পরিদর্শক। তবে তিনি বলেন, “জেলাশাসক সরকারি হারে ফি নিতে নিদের্শ দিয়েছেন। সেই মতোই চলবে।”
স্কুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবিতে এ দিন থেকে তারা লাগাতার ধর্না বসেছেন যাঁরা তাদের তরফে শিক্ষক জয়রাজ গুপ্ত জানান, সরকারি স্কুল। সেই মতো সরকারি নিয়ম মেনে স্কুল চলুক এটাই তাঁরা চান। জয়রাজবাবু বলেন, “অবিলম্বে সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমরা অনশন আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।” স্কুলের এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবির বিষয়টি সরকারের তরফে অবিলম্বে দেখা উচিত বলে দাবি করেন বিজেপি’র জেলাসভাপতি রথীন বসু। তিনি বলেন, “শুনেছি এ বছর স্কুলে নতুন ভর্তি নেওয়া হয়নি। এমন হলে তো ধীরে ধীরে স্কুল উঠে যাবে। হিন্দি ভাষাভাষীদের অনেকেই এই স্কুলে পড়েন। সরকারের তরফে স্কুলটি চালাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বিভিন্ন জায়গায় হিন্দি স্কুল, কলেজ করার কথা বলা হচ্ছে। অথচ সে স্কুল রয়েছে সেটা রক্ষা করতে রাজ্য সরকার কেন তৎপর নয় সেটাই বুঝতে পারছি না।”