মশালডাঙায় চলছে সমীক্ষা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
নাগরিকত্ব নেই। প্রশ্ন ওঠে না অধিকারের। পরিষেবা তো অনেক দূরের কথা। সকাল থেকে রাত যাঁদের জীবনের সঙ্গে লড়াই শব্দটা মিশে গিয়েছে, ছিটমহলের সেই বাসিন্দাদের কাছে বৃহস্পতিবারের ভোরটা ছিল অন্যরকম। খবরের কাগজ, রেডিওতে ছিটমহল বিল পাশের সম্ভাবনার কথা জানতে পেরেছেন তাঁরা।
সকাল থেকেই ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সদস্যদের জন্য অপেক্ষা করছে ছিটমহল। “কবে মিলবে স্বাধীনতা?”- এই প্রশ্নটাই ভেসেছে ছিটমহলগুলিতে। তাঁরা বলেছেন, এ বার নিজের পরিচয় চান তাঁরা। তবে, একই সঙ্গে ঠাঁই নাড়া হতে অনাগ্রহও চাপা থাকেনি।
শুক্রবার সকালে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির সমীক্ষক দল ছিটমহলগুলিতে সমীক্ষার কাজ শুরু করে। শুরুতেই দিনহাটার মশালডাঙায় বাংলাদেশি ছিটমহলে কাজ শুরু করেন সমীক্ষক দল। বাসিন্দারা সকলেই জানতে চান, সংসদে বিল পেশ হবে কবে? আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তাঁদের? বয়স্কদের কেউ কেউ আবার আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন। আশাবাদী ছিলেন সমীক্ষক দলের সদস্যরাও। দু-দেশের মধ্যে থাকা ১৬২ টি ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে কত পরিবার ছিটমহল বিনিময় হলে ঠিকানা বদলাতে আগ্রহী? সে ব্যাপারেই সমীক্ষার কাজ শুরু করে ছিটমহল বিনিময় কমিটি।
শুধু মশালডাঙা নয়, সব ছিটমহলেই এ দিন ছিল একই ছবি। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাইছি। সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতে স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল অনুমোদন হওয়ায় আমরা আশাবাদী।”
কমিটির দাবি , এদিন তাঁরা সাড়ে চার হাজার পরিবারের কাছে পৌঁছতে পেরেছেন। ঠিকানা বদল নিয়ে যে মতামতও জানতে পেরেছেন, তাতে বাংলাদেশি ছিটমহল থেকে কেউই বাংলাদেশে যেতে আগ্রহী নন। ভারতীয় ছিটমহল থেকে হাতে গোনা কিছু পরিবার ভারতে আসতে চাইছেন। ২০১৩ সালে প্রথমবার দুই দেশের ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের তালিকা করা হয়। সেখানে বাংলাদেশ ভূখণ্ড ঘেরা ভারতের ১১১টি ছিটমহল থেকে ১৪৯ পরিবারের ৭৪৩ জন ঠিকানা বদলে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে থাকার আগ্রহের কথা জানান। এবারে ওই সংখ্যা আরও কমবে বলে কমিটির দাবি। আজ, শুক্রবার সমীক্ষার কাজ শেষ হলে স্পষ্ট চিত্র আসবে বলে দাবি কমিটির।
এদিন মশালডাঙা ছিটমহলে একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের সামনে সমীক্ষকরা পৌঁছতেই ভিড় জমে যায়। আলি হোসেন, আব্দুল সারাম শেখ, আনোয়ারা বেওয়ারা বলেন, “এত দিনে হয়তো অপেক্ষা শেষ হবে।” দীর্ঘদিন ছিটমহল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত রশিদ আলি আবার এদিন দুপুরে বাড়িতে মাংস-ভাতের আয়োজন করেছিলেন। তিনি বলেন, “অপেক্ষার কয়েকটা দিন একটু ভালমন্দ খেয়ে কাটাতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy