মধ্যরাতের পানশালায় তখন বাজছিল বলিউডি সুর। কেউ কেউ নাচছিলেন। আচমকা কান ফাটানো শব্দ। সকলে দেখলেন, ছাদ থেকে ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ছে প্লাস্টারের সিমেন্ট-বালি-রং। এক তরুণী ছুটে পালালেন পর্দার আড়ালে। তাঁর হাত ধরে টানার চেষ্টা করছে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দুই যুবক। হঠাৎ নিভে যায় আলো। প্রাণভয়ে শুরু হয় হুড়োহুড়ি।
ঠিক হিন্দি ছবির মতো এই ঘটনা খাস শিলিগুড়ি শহরের। সোমবার রাত ১২টা নাগাদ প্রধাননগর এলাকার ওই পানশালায় পালাতে গিয়ে একে অন্যের ঘাড়ে পড়ে জখম হন অন্তত ন’জন। তাঁদের মধ্যে তিন জন তরুণী। দু’জনের ঠোঁট ফেটে যায়। একজনের কপাল কেটে যায়। শেষ পর্যন্ত আলো জ্বালিয়ে পানশালার নিরাপত্তা রক্ষীরা সকলকে নিরাপদে বাইরে বার করে দেন। ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গিয়েছে। ঘরের কোণে মিলেছে রিভলবারের ফাঁকা কার্তুজ।
প্রধাননগর থানা এলাকায় একটি মন্দির লাগোয়া এলাকার বিনোদন পার্কের মধ্যে ওই পানশালাটি। ক্লোজড সার্কিট টিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে মালিক পক্ষ দু’জনকে চিহ্নিত করেছে। পানশালা কর্তৃপক্ষের সন্দেহ, দু’জনেই মাটিগাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে পানশালার তরফে থানায় এফআইআর করা হয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন ও ডিসি (সদর) অংমু গ্যামসো পাল, দু’জনেই দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধাননগর থানার আইসি জানান, ওই দু’জনের সঙ্গে কারা ছিল তাও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
শিলিগুড়িতে গভীর রাত পর্যন্ত পানশালা খোলা থাকার ঘটনা নতুন নয়। অতীতেও পানশালায় একাধিক গোলমালের ঘটনা ঘটেছে। শালুগাড়ায় পানশালায় নাচগানের সময়ে এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় রাজ্যে তোলপাড় হয়। বছর চারেক আগে হিলকার্ট রোডের মাল্লাগুড়ি এলাকার এক ডান্স বারে এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে শহর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিছু পানশালায় নাচগানের আড়ালে দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগও পুলিশের কাছে অতীতে পৌঁছেছে। তখন সেবক রোডের একটি হোটেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে। বাম আমলে সিঙ্গিং বার, ডান্স বার-এ দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগ ছিল। তৃণমূল জমানায় তার অন্যথা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পানশালায় গান-বাজনা চলাকালীন দুই যুবক সঙ্গীদের নিয়ে এক তরুণীকে টানাটানির চেষ্টা করে। তিনি বাধা দেন। উপস্থিত কয়েকজন তার প্রতিবাদ করেন। তখন এক যুবক রিভলবার বার করে শূন্যে দু-রাউন্ড গুলি ছোড়েন পানশালায় আতঙ্ক ছড়ায়। পুলিশ গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়া আছে বলে চেঁচামেচি করছিল হামলাকারীরা। পুলিশের দাবি, দু’জনকে ধরা গেলেই অনেক কিছু স্পষ্ট হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy