আশা করেছিলেন ওঁরা। আশা করেছিলেন হোসেনপুরে শিল্পতালুক গড়ার ব্যাপারে হয়তো আশার আলো দেখাবে মুখ্যমন্ত্রীর শিল্পসভা। বছরের পর বছর শিল্পে বঞ্চনার পর মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এবার হয়তো বালুরঘাটের এই প্রস্তাবিত শিল্প তালুক আদায় করে আনতে পারবেন শিল্পদ্যোগীরা। কিন্তু, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মূল বণিকসভা ফোসিন কর্তৃপক্ষকে ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ না জানানোয় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা থেকেও ওই সংগঠনের কোনও প্রতিনিধি উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যোগ দেননি।
এদিন দক্ষিণ দিনাজপুর চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি সুদীপ বাগচি বলেন,“মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ শিল্প সম্মেলনে যোগ দেওয়ার চিঠি জেলাশাসকের দফতর থেকে আমরা পেয়েছি। জেলার সবগুলি বণিকসভা এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোগীদের ওই সভায় থাকতে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু আমাদের মূল সংগঠনকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি জানতে পেরে আমরা হতাশ।”
২০০৮ সালে বালুরঘাটের হোসেনপুরে সরকারি খাস জমিতে শিল্পতালুক গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল জেলা প্রশাসন ও শিল্প দফতরের যৌথ উদ্যোগে এক ছাতার তলায় জেলার শিল্পদ্যোগীদের বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলা। এরজন্য প্রায় ছয় একর জমি শিল্পদ্যোগীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। কথা ছিল, প্রশাসনের উদ্যোগেই সেখানে জল, আলো, বিদ্যুত্, রাস্তা, তৈরি হবে। কিন্তু এর কিছুই এখনও হয়নি বলে অভিযোগ। প্রশাসনকে এই শিল্প তালুক গড়ার দীর্ঘ আবেদন জানিয়েও সাড়া মেলেনি। আশায় ছিলেন সোমবার শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রীর শিল্পসভা থেকে আশার আলো মিলবে। কিন্তু সেটাও অধরাই থাকল। সুদীপবাবু জানান, বালুরঘাটের হোসেনপুরে প্রস্তাবিত শিল্পতালুক গড়তে কয়েকমাস আগে জেলাশাসক এবং জেলা ভূমি রাজস্ব আধিকারিককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু আশ্বাস দিলেও ওই প্রকল্পটি এখনও অথৈ জলে। প্রস্তাবিত ওই শিল্পতালুক এখন ধান জমি। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী অবশ্য বলেন, “প্রস্তাবিত শিল্পতালুকের জন্য হোসেনপুরে বেশ কয়েক একর খাসজমি চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে হোসেনপুরের ওই প্রকল্পটি কী পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।”
হিলির বাসিন্দা এক শিল্পদ্যোগী মহাবীর সারোগী জানান, তিনি হোসেনপুরে গাড়ির টায়ার রিসোল ফ্যাক্টরি এবং বহুমুখী ছোট হিমঘর তৈরির প্রকল্প নিয়ে এগিয়েছিলেন। বালুরঘাট শহরের বিশ্বনাথ লাহা ২০ শতক জমি পেয়ে স্টিল ফ্যাব্রিকেশন এবং টেলারিং ম্যানুফ্যাকচার কারখানা তৈরিতে উদ্যোগী হন। এজন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও নেন। কিন্তু ওই তালুকে বিদ্যুত, রাস্তা, কালভার্ট তৈরি না হওয়ায় প্রকল্প গড়ে তুলতে পারেননি। অথচ ওই ৬ বছর ধরে ব্যাঙ্কের ঋণের সুদ টানতে হচ্ছে বিশ্বনাথবাবুর মতো শিল্পোদ্যোগীদের।
বালুরঘাট বণিক সভার সম্পাদক হরেরাম সাহার ক্ষোভ, “তপনে পাটের দড়ি তৈরির কারখানা, বুনিয়াদপুরে পরিত্যক্ত কাপড় থেকে তুলো তৈরির কারখানা গড়ার মতো বড় প্রকল্প নিয়েও উদ্যোগীরা এগিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনও সাহায্যই মেলেনি।”