শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড মিটিং চলছে। —নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) আরও দুই ইঞ্জিনিয়র, সপ্তর্ষি পাল ও প্রবীণ কুমারের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের অনুমতি দেওয়া হল। সোমবার এসজেডিএ-এর জরুরি বোর্ড মিটিঙে ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।
সংস্থা সূত্রের খবর, দুই ইঞ্জিনিয়র সপ্তর্ষি পাল ও প্রবীণ কুমার ওই মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। ওই মামলার তদন্ত ভার পেয়েছে সিআইডি। ওই দুজনের বিরুদ্ধে সরকারি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে তদন্তের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি দরকার। না হলে সিআইডির পক্ষে চার্জশিট পেশ করা মুশকিল। সে কথা মাথায় রেখে আগেই সংস্থার সাসপেন্ড হওয়া এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কমৌলি সরকারের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি সিআইডিকে দিয়েছে এসজেডিএ। এ বার বাকি দু’জনের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সায় দিল এসজেডিএ। সংস্থার চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “সরকারি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে যে সব মামলা হয়েছে তার তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত করতেই ওই দু’জন ইঞ্জিনিয়রের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি দিতে জরুরি বোর্ড মিটিং ডাকা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিআইডিকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।” এ দিকে, এ দিন ওই মামলায় অভিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার সঞ্জীব ঘোষকে পাঁচ দিনের পুলিশে হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে শিলিগুড়ি আদালত।
বামেরা অবশ্য সিআইডি তদন্তের উপরে আস্থা রাখতে রাজি নন। বামেদের তরফে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য জানান, সারদা-কাণ্ডের মতো এসজেডিএ দুর্নীতি মামলার তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তিনি জানান, এসজেডিএ-এর বহু কোটি নয়ছয় হয়েছে বলে রাজ্য সরকারই মানছে। এসজেডিএ-এ প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোকবাবুর দাবি, “যাঁদের নির্দেশে ইঞ্জিনিয়র, ঠিকাদাররা ওই সব টাকা নয়ছয়ের সাহস পেয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। সেটা পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন করছিলেন বলে তাঁকে রাতারাতি বদলি করা হয়েছে। পরে পুলিশ কিছু করেনি। সিআইডিও নেতা-কর্তাদের ডাকার রাস্তায় হাঁটেনি। অতএব সিবিআই ছাড়া বিপুল অঙ্কের সরকারি নয়ছয়ের তদন্ত হবে না।”
প্রসঙ্গত, এসজেডিএ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন সংস্থার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস (সমতল) সভাপতি শঙ্কর মালাকার, তৃণমূল কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, তৃণমূলের জলপাইগুড়ির সাংগঠনিক সভাপতি চন্দন ভৌমিককে জেরা করেন। প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা মালদহের প্রাক্তন জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমারকে গ্রেফতার করেন তদানীন্তন পুলিশ কমিশনারর। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ কমিশনারকে বদলি করে রাজ্য সরকার। এর পরেই এসজেডিএ দুর্নীতিতে যুক্ত কয়েকজনকে আড়াল করতে প্রভাবশালী এক মহল অত্যন্ত সক্রিয় বলে অভিযোগ করেন বামেরা। কংগ্রেস নেতা সুজয় ঘটক ওই মামলার সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। বামেদের পক্ষ থেকে একই দাবিতে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের হয়।
এই অবস্থায়, কলকাতা হাইকোর্টে ওই মামলার তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট তলব করে। দার্জিলিং জেলা সিপিএমের কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকারের কটাক্ষ, “তদন্তের নামে আদতে কী ধরনের প্রহসন হচ্ছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।” বিপুল অঙ্কের সরকারি টাকা নয়ছয়ের হিসেব আমজনতাকে দিতেই হবে বলে জীবেশবাবু দাবি করেন।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য বামেদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তাঁর দাবি, “দুর্নীতির আঁচ পেয়েই নানা পর্যায়ে তদন্ত করিয়ে যে ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা নজিরবিহীন। মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেন না।” সেই সঙ্গে মন্ত্রীর পাল্টা অভিযোগ, “অভিযুক্ত বাস্তুকার, ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে সিপিএমের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেই তাদের দোষ লঘু করে দেখার চেষ্টা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, গোটা শিলিগুড়ি জানে, কোন ঠিকাদার কোন দাপুটে সিপিএম নেতার বাড়ির বারান্দায় বসে থাকতেন। কোন ইঞ্জিনিয়র কোন বড় মাপের সিপিএম নেতার আত্মীয় সেটাও শহরবাসীর অজানা নয়। প্রভাবশালী সিপিএম নেতার ঘনিষ্ঠ এক ইঞ্জিনিয়র দুম করে এসজেডিএ-এর চাকরি ছেড়ে ভাইপোকে বসিয়ে বিদেশ যাওয়ার নাম করে কেন দেশেই গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি। যথা সময়ে সব তথ্য জনসমক্ষে আনা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy