ভিন রাজ্য থেকে একটি দুষ্কৃতী দল শহরে ঢুকেছে। গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া এই খবরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল পুলিশ মহলে। গত সপ্তাহে সেবক রোডের একটি সোনার দোকানে চুরির চেষ্টা সেই উদ্বেগকে আশঙ্কায় পরিণত করেছে। এর পরেই শিলিগুড়ির সোনার দোকানগুলির নিরাপত্তা নিয়ে তত্পর হয়ে উঠেছে পুলিশ। গত সোমবার থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের শিলিগুড়ি থানায় ডেকে নিরাপত্তা সম্পর্কিত নানা পরামর্শ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
বুধবার শিলিগুড়ি থানার আইসি অচিন্ত্য গুপ্তের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল কয়েকটি সোনার দোকানে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছেন। কয়েকটি বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে দোকানের কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীদের। গ্রাহক সেজে এসে দুষ্কৃতীরা দোকানে নজরদারি চালাবে ধরে নিয়ে সে বিষয়েও নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে বড় মাপের সব দোকানেই পরিদর্শন চালানো হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে গভীর রাতে সেবক রোডের একটি নামী সোনার দোকানে চুরির চেষ্টা হয়েছে। দুষ্কৃতীরা গ্যাস কাটার দিয়ে দোকানের পেছন দিকের দু’টি দেওয়াল কেটেও ফেলে। দোকানের পেছন ঘরে রাখা সিন্দুকের দেওয়াল অবশ্য দুষ্কৃতীরা ভাঙতে পারেনি বলে জানা গিয়েছে। পৌঁছতে পারেনি শো রুমের একেবারে ভিতরেও। রাতের বেলায় ওই দোকানে সশস্ত্র নিরাপত্তা কর্মীরা থাকেন বলে পুলিশ জেনেছে। পুলিশ মনে করছে, তাদের ফাঁকি দিতেই পিছন দিক থেকে হানা দেওয়ার ছক কষে দুষ্কৃৃতী দলটি।
যে কায়দায় সেবক রোডের সোনার দোকানটিতে লুঠের ছক কষা হয়েছিল তাতে পুলিশ যথেষ্ট উদ্বেগে। সঙ্গে গ্যাস কাটার নিয়ে আসায় দলে অন্তত ৫ জনের বেশি দুষ্কৃতী ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনায় রাতের বেলায় কেমন টহলদারি চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের অন্দরেই। এ দিন শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসিপি ভোলানাথ পান্ডে বলেন, “বিভিন্ন সোনার দোকানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। দোকানের মালিক-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সরেজমিনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
শিলিগুড়িতে সোনার দোকানে হামলার অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। ২০১১ সালে এনটিএস মোড় লাগোয়া একটি সোনার দোকানে ডাকাতির অভিযোগ ওঠে। দুষ্কৃতীদের গুলিতে দোকানের এক সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষীর মৃত্যু হয়, গুলিবিদ্ধ হন এক পথচারী। ওই ঘটনার পরে পুলিশি তত্পরতা শুরু হলেও, কিছুদিন বাদেই নজরদারিতে ফের ঢিলে পড়ে বলে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ। সম্প্রতি গোয়েন্দা সর্তক বার্তায় ফের নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, দোকানের সামনে এবং পিছনে দু’দিকেই নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন সহ রক্ষীদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ রয়েছে ককিনা তা যাচাই করে নিতে বলা হয়েছে। রাতের বেলাতেও যাতে দোকানের ভিতরে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা চালু থাকে তা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। দোকানের ভিতরে একাধিক ‘নাইট ভিশন’ ক্যামেরা বসানো ছাড়াও বেশ কয়েকটি দরজায় স্বয়ংক্রিয় সাইরেন লক বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেওয়ালে সাইরেন সার্কিট বসানোর কথাও বলা হচ্ছে পুলিশের তরফে। এই ব্যবস্থায় কোনও ভাবে দরজার লক অথবা দেওয়ালের কোনও অংশ ভাঙলেই সাইরেন বেজে উঠবে। দোকানে সন্দেহজনক গতিবিধি দেখলে পুলিশকে জানানো অথবা গ্রাহকদের নাম ঠিকানা রেখে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, পরামর্শ ছাড়াও পুলিশের তরফেও বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। যেমন রাতের বেলায় সোনার দোকানের সামনে পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট টহলদারি টিমের অফিসারদের নির্দিষ্ট সময় পরে কন্ট্রোলে রিপোর্ট করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিনের বেলায় সাদা পোশাকে নজরদারি চলছে বলে দাবি। সোনা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির ক্ষুদিরাম পল্লি শাখার সম্পাদক সুজিত রায় বলেন, “পুলিশের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।” পুলিশের এই তত্পরতায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা যাতে অযথা আতঙ্কিত হয়ে না পড়েন তার আবেদনও করা হয়েছে পুলিশের তরফে। এডিসিপি বলেন, “পুলিশ সক্রিয়। আতঙ্কের কারণ নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy