Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সারদার রিসর্ট ‘দখল’, অস্বস্তি তৃণমূলে

ডুয়ার্সের লাটাগুড়িতে সারদা সংস্থার বন্ধ রিসর্টটি এলাকার এক তৃণমূল নেতা কেন দখলে রেখেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল নেতৃত্বও এই ঘটনায় বিব্রত। সারদা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে গত বছর মে-তে রিসর্টটি বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকেই রিসর্টের চাবি মেটেলির ব্লক তৃণমূল নেতা তথা দলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সাধারণ সম্পাদক রেজাউল বাকির ‘দখলে’ রয়েছে। নিজের কাছে চাবি রাখার কথা তিনি স্বীকারও করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০২:৪৩
Share: Save:

ডুয়ার্সের লাটাগুড়িতে সারদা সংস্থার বন্ধ রিসর্টটি এলাকার এক তৃণমূল নেতা কেন দখলে রেখেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল নেতৃত্বও এই ঘটনায় বিব্রত।

সারদা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে গত বছর মে-তে রিসর্টটি বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকেই রিসর্টের চাবি মেটেলির ব্লক তৃণমূল নেতা তথা দলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সাধারণ সম্পাদক রেজাউল বাকির ‘দখলে’ রয়েছে। নিজের কাছে চাবি রাখার কথা তিনি স্বীকারও করেছেন।

তবে তাঁর যুক্তি, রিসর্টটি দখল করার উদ্দেশ্য তাঁর নেই। তাঁর দাবি, মালবাজার থানায় গিয়ে তিনি একাধিকবার চাবি দিতে চাইলেও, প্রশাসন তা জমা নেয়নি। প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, রেজাউল চাবি দিতে চাইলেও তা নেওয়া হয়নি, এমন কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই।

তবে রিসর্টটি সম্পর্কে প্রশাসন ওয়াকিবহাল। জলপাইগুড়ির জেলা শাসক পৃথা সরকার জানান, ওই রিসর্টটির বিষয়ে কী করণীয় তা শ্যামল সেন কমিশনের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই মতো নির্দেশ এলে পদক্ষেপ করা হবে।

এর মধ্যেই গত বছর পুজোর সময়ে এক মাসের জন্য রিসর্টটি পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। তাঁর যুক্তি, রিসর্ট নির্মাণের বকেয়া বাবদ ১৫ লক্ষ টাকা তাঁর সারদা গোষ্ঠীর কাছে পাওনা রয়েছে। তাই রিসর্টের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সেটা সুনিশ্চিত করতেই তিনি সেটি দেখভাল করছেন। এই ঘটনায় আমানতকারীদের প্রশ্ন, সারদার কাছে তাঁদেরও বহু টাকা বকেয়া রয়েছে, সে জন্য কী তাঁরা সম্পত্তি দখল করতে গিয়েছেন? প্রশাসনকে এড়িয়ে সম্পত্তি দখলকে তাঁরা বেআইনি বলেই মনে করছেন।

লাটাগুড়ির রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রিসর্টের বর্তমান বাজারদর প্রায় ১ কোটি টাকার কাছাকাছি।

পুজোর সময়ে রিসর্টটি খুলে দেওয়ায় পর্যটকদের কাছ থেকে পাওয়া ভাড়ার টাকায় যা উপার্জন হয়েছে, তা রেজাউলই নিয়েছেন বলে দাবি। রেজাউলের বক্তব্য, “ওই টাকায় রিসর্টটির সংস্কার করা হয়েছে।”

তবে এই ঘটনায় প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কংগ্রেসের জেলা পর্যবেক্ষক মোহন বসুর অভিযোগ, সারদার সম্পত্তি এ ভাবে নিজে থেকে কেউ ‘দখল’ করতে পারেন না। তাঁর বক্তব্য, “শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের মদত না থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না।” তিনি বিষয়টি নিয়ে পৃথক তদন্তের দাবি তুলেছেন।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বলেন, “সারদার সম্পত্তি বাঁচাতে কারা মাঠে নেমেছেন, তা আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”

এই ঘটনায় বিব্রত জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দানা বেধেছে দলের অন্দরেও। জেলা তৃণমূল সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “গত বছর পুজোর সময়ে রেজাউল রিসর্ট চালু করেছেন শুনে তাঁকে দল থেকে সর্তক করে দেওয়া হয়েছিল। এখন তিনি আর ওই রিসর্ট থেকে কোনও উপার্জন করেন না।” লাটাগুড়ির নেওড়া নদীর পাড়ে ২ বিঘা জমির ওপরে সারদা গোষ্ঠী ২০১৩ সালের গোড়ায় ‘ওয়াইল্ডার রেঞ্জ রিসর্ট’ উদ্বোধন করে। রেজাউলের দাবি, “রিসর্ট দখলের কোনও উদ্দেশ্য আমার নেই। রিসর্টটির ক্ষতি যাতে না হয়, সেই চেষ্টাই করেছি মাত্র।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sarada resort malbajar tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE