Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সভার শর্ত ভেঙে সরব সিভিক ভলান্টিয়াররা

শর্ত সাপেক্ষে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ারদের সংগঠনকে। কিন্তু সেই শর্ত ভেঙেই সভা শেষ করলেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। সভায় নাম না করে পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রীকে ‘প্রতারক’ বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কনুয়ার গোপালপুরের একটি আমবাগানে সিভিক ভলান্টিয়ারদের রাজ্য সমাবেশ ছিল। লোকসভা ভোটের আগে ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার্স নিয়োগ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু গত ১০ জুলাই কলকাতার রানি রাসমণি রোডে সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়াররা বিক্ষোভ সমাবেশ করার পরে সেই মাসেই তাঁদের নাম থেকে ‘পুলিশ’ শব্দটি ছেঁটে দেয় রাজ্য সরকার। সেই সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে কোনও কারণ দেখানো হয়নি।

সিভিক ভলান্টিয়ারদের সভার অনুমতিপত্র।—নিজস্ব চিত্র।

সিভিক ভলান্টিয়ারদের সভার অনুমতিপত্র।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৩
Share: Save:

শর্ত সাপেক্ষে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ারদের সংগঠনকে। কিন্তু সেই শর্ত ভেঙেই সভা শেষ করলেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। সভায় নাম না করে পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রীকে ‘প্রতারক’ বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

শুক্রবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কনুয়ার গোপালপুরের একটি আমবাগানে সিভিক ভলান্টিয়ারদের রাজ্য সমাবেশ ছিল। লোকসভা ভোটের আগে ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার্স নিয়োগ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু গত ১০ জুলাই কলকাতার রানি রাসমণি রোডে সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়াররা বিক্ষোভ সমাবেশ করার পরে সেই মাসেই তাঁদের নাম থেকে ‘পুলিশ’ শব্দটি ছেঁটে দেয় রাজ্য সরকার। সেই সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে কোনও কারণ দেখানো হয়নি। তবে প্রশাসনের কয়েক জন কর্তা তখন জানিয়েছিলেন, ইউনিফর্ম পরে ওই বিক্ষোভ নবান্ন ভাল চোখে দেখেনি। তা ছাড়া, বিক্ষোভ সমাবেশে সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়াররা চাকরি স্থায়ীকরণ সহ একাধিক দাবি তুলেছিলেন। তাই ‘পুলিশ’ শব্দটি কেটে দিলে তাঁদের চাকরির স্থায়ীকরণের দাবিও অনেকটাই লঘু হয়ে যাবে বলে ধরে নেওয়া হয়।

তারপর থেকেই এই সংগঠনের তৎপরতাও বাড়তে থাকে। প্রশাসনের সঙ্গে বারবার সংঘাতের পথেও গিয়েছে তারা। এর আগে মালদহতেই পরপর ৩ বার সিভিক ভলান্টিয়ারদের সভা ভেস্তে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে। সব ক্ষেত্রেই বিনা অনুমতিতে সভা হচ্ছে দাবি করে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে তা ভেস্তে দেয়। এ দিন যে আমবাগানে সভা হয়েছে, সেখানেই ষষ্ঠীর দিন সভা ভেস্তে দিতে পুলিশ লাঠিও চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বারে অবশ্য পুলিশ সভার অনুমতি দিয়েছিল লিখিতভাবে পাঁচ দফা শর্তে। অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল, সভায় সরকারবিরোধী কোনও কথা বলা যাবে না। কোনও রাজনৈতিক আলোচনা করা যাবে না, এমনকী কোনও রাজনৈতিক নেতাকেও সভায় রাখা যাবে না বলে শর্ত ছিল। সভাস্থলে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশবাহিনী। সভায় কী আলোচনা হচ্ছে, তার প্রমাণ রাখতে পুলিশ সভার ভিডিও তোলে।

যদিও, উর্দিধারী পুলিশ, সরকারি ভিডিও ক্যামেরা উপেক্ষা করে সরকার বিরোধী বক্তব্য দিয়েই সভা শুরু হয়। ঘণ্টা দু’য়েকের সভায় আগাগোড়া নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকারের সমালোচনা ও আক্রমণ করা হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় পোরিয়া বক্তৃতার শুরুতেই পুলিশমন্ত্রীকে ‘প্রতারক’ বলে দাবি করেন। পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “কে আপনাকে দাতা কর্ণ হতে বলেছিল? কাজ দিতে না পারলে আমাদের নিলেন কেন? নেওয়ার সময় বলা হল সিভিক পুলিশ। আবার এখন বলা হচ্ছে পুলিশ নয়, ভলান্টিয়ার।” সঞ্জয়বাবুর বক্তব্য, “কোনও ভাবেই আমাদের দমানো যাবে না।” তাঁর অভিযোগ, “শ্রমমন্ত্রীও প্রতারক।” তিনি দাবি করেন, সামাজিক সুরক্ষা, মাইনে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কথা রাখা দূরের কথা, এখন উল্টে ছাঁটাই করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে আমি না কি বিজেপি-র লোক।”

চাঁচলের মহকুমাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, “শর্ত সাপেক্ষে ওই সভার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পুলিশও ঘটনাস্থলে ছিল। বিধি ভাঙা হলে ওই সভা পুলিশের বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল।” জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রশাসনের দেওয়া বিধি ভেঙে সভা হয়েছে কি না, তা দেখতে ভিডিও ফুটেজ দেখা হবে। তারপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে সভার অনুমতি দিতে এই ধরনের শর্ত দেওয়াটাও গণতান্ত্রিকভাবে কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর পাল্টা বক্তব্য, “সরকারের কাজ করে, বেতন নিয়ে সরকারেরই সমালোচনা করা চলতে পারে না। যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁরা আগে পদত্যাগ করুন।”

পুলিশ সূত্রকে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টার সময়েই সভার অনুমতি মেলে। আগে থেকেই সভাস্থলে বিরাট পুলিশ বাহিনী হাজির ছিল। আমবাগানে ত্রিপল পেতে বসে পড়েন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শ’দুয়েক সিভিক ভলান্টিয়ার। শর্ত মেনেই মাইক ব্যবহার করা হয়নি সভায়। সঞ্জয়বাবুর দাবি, “আমরা কী চোর-ডাকাত, যে শর্ত মেনে সভা করতে হল?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

civic volunteer chanchol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE