সংসার ও হেঁশেল সামলে ওঁরা গত পাঁচ বছর ধরে পশুপালন, মাছ ও সব্জি চাষ-সহ মুদিখানা দোকান করে স্বনির্ভর হয়েছেন। কেউ শুকনো খাবার তৈরি, সেলাই, নানা হস্তশিল্পের কাজ করে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হয়েছেন। উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লকের এ রকম ৫৫ মহিলা স্বনির্ভর দলের ৬০০ মহিলা নিয়ে সোমবার দিনভর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কেন্দ্রীয় কৃষি দফতরের অধীন জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের রায়গঞ্জ বিভাগীয় প্রকল্প।
উত্তর দিনাজপুর এবং মালদহের সীমানাবর্তী জয়হাটের প্রাথমিক স্কুল মাঠে এ দিন কয়েকশো গৃহবধূ দৌড়, সূঁচে সুতো পরানো, চামচে মার্বেল রেখে হাঁটা, বল ছোড়া সহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নেন। জয়হাট কৃষি উন্নয়ন সমিতির পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পর সফল মহিলাদের হাতে পুরস্কার হিসাবে বালতি, ট্রে-সহ বিভিন্ন বাসনপত্র ও গৃহস্থালি সামগ্রী তুলে দেন উদ্যোক্তারা। জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের রায়গঞ্জের বিভাগীয় আধিকারিক দীপান্বিতা বণিক দাস ও কর্মী শিপ্রা চক্রবর্তী বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা সারা বছর কাজ করে হাঁপিয়ে ওঠেন। তাই তাঁদেরকে কাজে উৎসাহ বাড়াতেই এই আয়োজন।”
ঘরোয়া মহিলাদের বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠতে দেখে নিজেদের উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি প্রশাসনিক কর্তারা। এ দিন উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জেলা পরিষদের এক সদস্য মোশারফ হোসেন। ছিলেন জেলা সমবায় উন্নয়ন আধিকারিক কল্যাণকুমার থাপা, রাজ্য হস্ততাঁত উন্নয়ন আধিকারিক বাঞ্ছারাম বসাক, জয়হাট সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ভূপালচন্দ্র বর্মন-সহ প্রশাসনিক কর্তারা। মোশারফবাবু বলেন, “কৃষি উন্নয়ন সমিতির আর্থিক সহযোগিতা জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের প্রশিক্ষণ ছাড়া জয়হাট এলাকার ৬০০ মহিলা স্বনির্ভর হতে পারতেন না।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, স্থানীয় কৃষি উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে রাজ্য সমবায় দফতর ও সমবায় ব্যাঙ্ক ঋণ দেয়। কম সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পেয়েই গত পাঁচ বছর ধরে ৫৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রায় ৬০০ জন মহিলা স্বনির্ভর হয়েছেন। এই সব গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়মিত পশুপালন, মাছ ও সব্জি চাষ, মুদিখানার ব্যবসা, সেলাই, কার্পেট ও পুতুল তৈরি সহ বিভিন্ন শুকনো খাবার তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ দিন ক্রীড়ায় সামিল হয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলার তরফে গোলহাট ও শিবতলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দুই সদস্যা পুষ্পা বর্মন ও মালতি বেসরা বলেন, “গোষ্ঠী গড়ে পঞ্চায়েত এলাকার বেশির ভাগ বধূ সংসার সামলে রোজগার করছেন। স্বামীর পাশে দাঁড়াতে পেরে খুশি।” মাতঙ্গিনী ও তাজমহল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দুই সদস্য তৃপ্তি থোকদার, ফিরদৌসি বিবি বলেন, “কৃষি উন্নয়ন সমিতি ও জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সহযোগিতা ছাড়া মহিলারা স্বনির্ভর হতে পারতেন না। বছরভর একঘেয়েমির পর এ দিন খেলায় মেতে ওঠার সুযোগ পাওয়ায় সত্যিই কাজের উৎসাহ বাড়িয়ে দিল।”