তৃণমূলের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে এক পুলিশ অফিসারকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে। কিন্তু ওই দুই তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ সেই বিষয়ে খেনও কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। কিন্তু ওই দু’জনের বিরুদ্ধেই ছ’মাসের একটি পুরনো মামলার তদন্তে জোর দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশের এক অফিসারের বক্তব্য, গঙ্গারামপুরের ঘটনায় পুলিশকর্মীই হেনস্থা হওয়ার পরেও সেই ব্যাপারে কোনও মামলা দায়ের না হওয়ায় একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একাংশ পুলিশকর্মীও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তা চাপা দিতেই এখন পুরানো মামলাকে হাতিয়ার করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, “পুলিশ তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হওয়ায় চরিত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কেননা, দীর্ঘ ৬ মাস ধরে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত ওই দুই তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ এতদিন ধরেনি। এখন পুলিশকর্মী হেনস্থার পরে ওই পুরনো মামলায় তাদের ধরার নামে নতুন নাটক তৈরি করছে। মানুষ সব দেখছেন।” গঙ্গারামপুরের ওই ঘটনার পর হঠাত্ কেন পুরানো মামলায় অভিযুক্ত ওই দুই তৃণমূলকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সক্রিয় হয়ে উঠল, এ প্রশ্নের উত্তর দেননি পুলিশকর্তারা। তবে জেলা পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়ার বক্তব্য, “পুলিশকে হেনস্থার কোনও ঘটনা ঘটেনি। তা ছাড়া পুরানো মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া সারা বছর ধরে চলে।”
গত শুক্রবার রাতে গঙ্গারামপুর শহরের বড়বাজার এলাকায় বাইক পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। তখন পুলিশের এক সহকারী সাব ইন্সপেক্টর এবং দমকলের এক আধিকারিককে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে বাবু চৌধুরী ও ওমপ্রকাশ চৌধুরী নামে তৃণমূলের ওই দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। শনিবার তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রকে পুলিশের তরফে বিষয়টি জানানো হয়। দলীয় সূত্রের খবর, পুলিশকে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে দলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু নিগৃহীত ওই এএসআই তাঁকে হেনস্থা করা হয়নি বলে দাবি করেন। জেলা পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়াও প্রকাশ্যে পুলিশ হেনস্থার কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে জানানোয় জেলা পুলিশের একাংশের মধ্যে চাপা ক্ষোভও রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, নিগৃহীত দমকলের অফিসারের তরফে ওই দুই তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় কি না তা দেখা হচ্ছিল। রবিবারেও দমকলের তরফেও এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। দমকলের ওসি জয়দেব ঘোষ বলেন, “অভিযোগ দায়ের করার মতো কোনও বিষয় নেই।”
এই অবস্থায় শেষে ৬ মাস আগে এক আদিবাসীকে নিগ্রহের অভিযোগের একটি পুরনো অপরাধের মামলাকে সামনে রেখেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ করতে চাইছে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের একাংশ। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত দুই তৃণমূলকর্মী শনিবার থেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। ফলে শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়েও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। যদিও ঘটনার পর দুই জনই দাবি করেছিলেন, “কাউকে হেনস্থা করা হয়নি। বাইক পুড়ছে দেখে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল।”
তবে পুরানো মামলা নিয়ে একাংশ পুলিশকর্মী আগ্রহ দেখালেও অভিযুক্তদের আদৌ ধরা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা আইনজীবী নীলাঞ্জন রায়। তিনি বলেন, “গঙ্গারামপুর থানার আইসি-র ভূমিকা নিরপেক্ষ নয়। শাসক দলের কোনও সমর্থকের বিরুদ্ধে তাঁকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের জেলা সভাপতি যেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কড়া অবস্থান নিতে বলেছেন, সেখানে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না, তা নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি দলের অন্দরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “অন্যায় কাজের সঙ্গে যুক্তদের রং বিচার না করে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
তবে গঙ্গারামপুর থানার আইসি অসীম গোপের মোবাইলে একধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। এসএমএসের জবাবও দেননি। সেই সঙ্গে হরিরামপুরে বিনা অনুমতিতে বাইক মিছিলের বিষয়টি নিয়েও পুলিশ সুপার এদিনও শুধু খোঁজ নেবেন বলে মন্তব্য করে দায় সেরেছেন।
শুক্রবার রাতে গঙ্গারামপুরের বড়বাজার এলাকায় কালীপুজোয় বাইক রাখা নিয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজনের গোলমাল হয়। পরে তাঁদের বাইকটি পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই সময় দুই জন পুজো দেখতে গিয়েছিলেন। পরে পুলিশ এবং দমকল এলে, দু’জনই থানার ওই অফিসারকে হুমকি দেওয়া ছাড়াও ধাক্কাধাক্কি করেন বলে অভিযোগ। দমকলের অফিসারকে গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy