অবরোধে আলুচাষিরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
হিমঘর কর্তৃপক্ষ আলু মজুত রাখতে অস্বীকার করায় ফের জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন কৃষকেরা। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটে থেকে ফালাকাটার রাইচেঙ্গা গ্রামের কাছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত অবরোধ চলে।
কৃষকদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা থাকা সত্যেও হিমঘরে আলু মজুত রাখার মতো জায়গা নেই বলে জানিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। ব্যাপক পরিমাণ আলু কোথায় রাখবেন তা নিয়ে দিশাহারা কৃষকরা শেষমেশ রাস্তা অবরোধের পথে নামেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক উদাসীনতার অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। ফালাকাটার বিডিও কৃষ্ণকান্ত ঘোষ বলেছেন, অবরোধের বিষয়টি শুনেছি। আজ, শুক্রবার আলু সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলিপুরদুয়ার মহকুমা শাসকের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দিকে, দিনের পর দিন আলুর দাম যে ভাবে পড়ছে তাতে উদ্বিগ্ন কৃষকরা। বর্তমানে ফালাকাটা ও ধূপগুড়ির পাইকারি বাজারে জ্যোতি আলুর দাম নেমে দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা কিলো আর লালপাহাড়ির দাম ৫ টাকা ২০ পয়সা কিলো। এই দামে আলু বিক্রি করলে চাষের খরচটুকুও উঠবে না বলে কয়েক মাস পরে দাম বাড়ার আশায় হিমঘরমুখী হয়ে পড়েছেন চাষিরা। হিমঘরের বাইরে আলু রাখলে পচন ধরার আশঙ্কা করছেন ওই কৃষকরা।
আলুর কালোবাজারি রুখতে রাজ্য সরকার হিমঘরে ৯০ শতাংশ আলু কৃষকরা মজুত রাখতে পারবেন বলে ফরমান জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি গত দু’বছর বাজারে আলু চড়া দামে বিক্রি হওয়ায় ভিন রাজ্যে আলু সরবরাহ বন্ধ করে দেয় রাজ্য সরকার। মূলত এই দুই কারণে আলু চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। তাঁরা জানান, উত্তরবঙ্গের আলুর একচেটিয়া বাজার ছিল অসম সহ উত্তর পূর্ব ভারতের চারটি রাজ্য। গত দু’বছর আলু রফতানি বন্ধ করার নির্দেশ রাজ্য সরকার জারি করার পর অসম সরকার পঞ্জাব থেকে বীজ এনে ওই রাজ্যের কৃষকদের সরবরাহ করে ব্যপক পরিমাণে আলু ফলিয়েছে। বিহারেও এ বার ফলন কয়েক গুণ বেড়েছে। অসমে যে পরিমাণ আলুর ফলন এ বছর হয়েছে তাতে উত্তরবঙ্গের আলুর চাহিদা সেখানে এখনও তেমন ভাবে নেই।
ফি বছর ব্যবসায়ীরা কৃষকদের থেকে আলু কিনে হিমঘরে মজুত রেখে ভিন রাজ্যে আলু পাঠাতেন। কৃষকরা চাষের খরচের জন্য যে ঋণ করতেন তা আলু বিক্রি করে ।মিটিয়ে দিতেন। তবে এ বার বাজার মন্দা থাকায় কৃষকদের একাংশকে যেমন হিমঘরে আলু মজুত রাখতে হচ্ছে, তেমনই হিমঘর উপচে পড়ায় জায়গা না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। ধূপগুড়ির আলু ব্যবসায়ীদের সংগঠনের পক্ষে স্বপন দত্ত বলেছেন, “দাম মেলার আশায় কৃষকরা মাসের পর মাস আলু হিমঘরে ফেলে রাখবেন। যার শেষ পরিণতি ভাল যে হবে না তা বুঝতে পারছি।” ফালাকাটার কৃষি আধিকারিক আবু বক্কর সিদ্দিকি বলেন, “আলুর ফলন ব্লকে অন্যবারের তুলনায় বেশি। ছয় হাজার হেক্টর আলুর জমিতে সাড়ে তিন হাজার টন আলু ফলন হয়েছে ।”
এ দিকে, উত্তরবঙ্গের তুলনায় দক্ষিনবঙ্গে আলুর বাজার দর কম থাকায় এখানকার ব্যবসায়ীরা কম দামে দক্ষিণবঙ্গ থেকে আলু কিনে ভিন রাজ্যে পাঠানোর চিন্তা ভাবনা করছেন। স্বপনবাবুর কথায়, “উত্তরবঙ্গ থেকে মালগাড়িতে চাপিয়ে অসমে আলু রফতানি করতে যা খরচ, দক্ষিণবঙ্গ থেকে সে রাজ্য পাঠাবার খরচ সামান্য হবার কারণে ভিন রাজ্যে চাহিদা থাকলে আমরা সেখানকার আলু কিনে রফতানির কথা ভাবছি।”
ফালাকাটার আলুচাষি নিতাই দাসের কথায়, “আমরা কী করব ভাবতে পারেছি না। বর্ষা আসন্ন। এই সময় ঘরে আলু রাখলে সবটাই পচে যাবে। সরকার কেন কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে না বুঝতে পারছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy