Advertisement
E-Paper

আধার-আঁধারে নাকাল আম আদমি

আধার— আম আদমি কা অধিকার। পরিচয়পত্রে ফলাও করে লেখা রয়েছে কথাটা। কিন্তু আধার কার্ড না মেলায় সেই আম আদমিই আঁধারে। পেনশন থেকে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি, সরকারি ভাতা, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মজুরি— নানা ক্ষেত্রেই এখন আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কিন্তু বারবার ছবি তুলেও কার্ড না মেলায় ভোগান্তি বাড়ছে আমজনতার। মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহরে সেই দুর্ভোগের ছবি তুলে ধরলেন বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী।আধার-বিভ্রাটে জেরবার মেদিনীপুর ও খড়্গপুর দুই শহরের বাসিন্দারাই। অনেকে এখনও আধার কার্ড তৈরির সুযোগ পাননি। অনেকে একাধিকবার ছবি তুলেও কার্ড পাননি। অনেকের আবার কার্ড তৈরি হলেও ডাকযোগে তা পৌঁছয়নি।

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৪

সমস্যা দুই শহরেই

আধার-বিভ্রাটে জেরবার মেদিনীপুর ও খড়্গপুর দুই শহরের বাসিন্দারাই। অনেকে এখনও আধার কার্ড তৈরির সুযোগ পাননি। অনেকে একাধিকবার ছবি তুলেও কার্ড পাননি। অনেকের আবার কার্ড তৈরি হলেও ডাকযোগে তা পৌঁছয়নি। অগত্যা বাড়তি খরচ করে সাইবার ক্যাফে থেকে আধার ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হচ্ছে। স্কলারশিপ, ফেলোশিপ, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় অনুদানের ক্ষেত্রেও আধার বাধ্যতামূলক করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠানো নির্দেশিকায় ইউজিসি জানিয়েছে, স্কলারশিপ বা অনুদানের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর আধার কার্ড না থাকলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষের কাছে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। আইআইটি-র শহর খড়্গপুরে অবশ্য ৬০ শতাংশ বাসিন্দারই আধার হয়নি।

সঙ্কটে ভাতা, ভর্তুকি

বিভিন্ন জনকল্যাণকারী প্রকল্পে পরিচয়পত্র হিসেবে আধারের ব্যবহার শুরু করছে সরকার। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা— সবেতেই এখন আধার জরুরি। আর রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি তো আধার ছাড়া মিলবেই না। আধার না থাকলে ব্যাঙ্কে ‘জিরো ব্যালেন্স’ অ্যাকাউন্টও খোলা যাচ্ছে না। মেদিনীপুর শহরের কাউন্সিলর সৌমেন খান মানছেন, “অনেকেরই আধার কার্ড নেই। ওই সব ক্ষেত্রে আধার বাধ্যতামূলক হলে অনেকেই সমস্যায় পড়বেন। বিশেষ করে ভাতা প্রাপকেরা।” মেদিনীপুরের বিধবা ভাতা প্রাপক মঞ্জুরা বেগম, টেরেসা টুডুদের কথায়, “শুনছি ভাতা পেতে আধার কার্ড লাগবে। ছবি তুলেছি। তবে কার্ড পাইনি। ভাতা বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যা হবে। ওই টাকাটুকুই তো সম্বল।” বার্ধক্য ভাতা প্রাপক কিশোর কাঁড়ি বলেন, “একবার শিবিরে গিয়ে ছবি তুলেছিলাম, আঙুলের ছাপ দিয়েছিলাম। মাসের পর মাস পেরিয়ে গেল। এখনও কার্ড পাইনি।” প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপক শ্যামলেন্দু বসুর কথায়, “আধার কার্ড না থাকার জন্য ভাতা বন্ধ হয়ে গেলে তার থেকে খারাপ কিছু হবে না। প্রশাসনের ভেবে দেখা উচিত।”

একশো দিনে কাঁটা

একশো দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গেও আধার কার্ড নম্বর যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অগস্টের মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, এই জেলায় একশো দিনের প্রকল্পে যত সংখ্যক শ্রমিক রয়েছেন, তারমধ্যে মাত্র ৩৪ শতাংশের আধার কার্ড রয়েছে। বাকি ৬৬ শতাংশের নেই। আগামী দিনে শুধু জবকার্ড থাকলে হবে না। প্রকল্পে কাজ পেতে হলে আধার কার্ডও থাকতে হবে। ফলে, সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড নম্বর যুক্ত না হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শিবিরেও সমস্যা

সমস্যা মেটাতে বাড়তি শিবিরের বন্দোবস্ত হয়েছিল খড়্গপুরে। কিন্তু লাভ হয়নি তাতে। শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী মিন্টু চৌধুরী বললেন, “আমি দু’বার ছবি তুলেছি। কিন্তু এখনও আধার কার্ড পাইনি। ইন্টারনেটেও কার্ড মেলেনি। ওয়ার্ডে শিবির হওয়ায় অনেক আশা করেছিলাম। কিন্তু যাঁদের আগে ছবি তোলা হয়েছে তাঁরা আর সুযোগ পাবে না বলে শিবিরে জানানো হয়। তাই পেনশন ও গ্যাসের ভর্তুকি না পাওয়ার আশঙ্কা করছি।”

খড়্গপুর পুরসভা সূত্রে খবর, শিবিরে প্রথমে পাঁচটি করে কম্পিউটার ব্যবহার হবে বলে এজেন্সি জানিয়েছিল। ফলে, রোজ একটি ওয়ার্ডে তিনশো জনের ছবি তোলা যাবে বলে ভাবা হয়েছিল। তবে বাস্তবে দেখা যায়, মাত্র দু’টি করে কম্পিউটার ব্যবহার করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্সি। ফলে, দিনে ওয়ার্ড পিছু ১২০ জনের বেশি ছবি তোলা যায়নি। তা ছাড়া, শুধুমাত্র এজেন্সির কর্মীদের কাছে থাকা তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের ছবি তোলা হচ্ছিল। ফলে, দিনভর লাইনে দাঁড়িয়েও ছবি না তুলতে পারায় গোলমাল বাধে। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য শিবির বন্ধ করে দিয়েছে ওই এজেন্সি।

মেদিনীপুরে এখনও শিবির শুরু হয়নি। কাউন্সিলর সৌমেন খানেরও মত, “আধার কার্ড যাতে সবাই পান সে জন্য শহরের সব ওয়ার্ডে শিবির করা উচিত।’’

ভোগান্তির দায় কার

এই পরিস্থিতিতে পুরসভা আর প্রশাসনের দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলছেন, “প্রশাসনের উচিত এজেন্সিকে দিয়ে মানুষের আধার কার্ড দ্রুত তৈরি করা। নাগরিক পরিষেবার স্বার্থে আমরা এজেন্সিকে দিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে শিবির করে সকলের আধার সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এজেন্সির কর্মীরা অনেকের ছবি না তোলায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়। বন্ধ হয় শিবির। বিষয়টি জেলাশাসককে জানিয়েছি।” অবশ্য আধার নিয়ে জটিলতার কথা স্বীকার করে মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “শহরের অধিকাংশ মানুষের আধার কার্ড না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে জানি। আমি সংশ্লিষ্ট এজেন্সির সঙ্গে কথা বলব। তবে পুরসভার এই বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত।” আর জেলা প্রশাসনের এক কর্তার আশ্বাস, “জেলার সর্বত্র সমান সংখ্যক শিবির হয়নি। তাই কিছু সমস্যা রয়েছে। আগামী দিনে আরও বেশি সংখ্যক শিবির করা হবে।”

Aadha card Dwellers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy