Advertisement
০২ মে ২০২৪

উৎসব হোক কলেজে, টাকা দেবেন দিদিই

প্রথম ইনিংসে দরাজ হাতে দান-খয়রাতি করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও অনুদান-ভাণ্ডার উপুড় করে দেওয়া শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! আগে ক্লাব বা বিভিন্ন সংস্থাকে অর্থসাহায্য দিয়েছিলেন।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার মেয়ো রোডে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার মেয়ো রোডে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৪
Share: Save:

প্রথম ইনিংসে দরাজ হাতে দান-খয়রাতি করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও অনুদান-ভাণ্ডার উপুড় করে দেওয়া শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

আগে ক্লাব বা বিভিন্ন সংস্থাকে অর্থসাহায্য দিয়েছিলেন। এ বার সরকারি কোষাগারের অর্থানুকূল্য পেতে চলেছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদও! এবং এই সহায়তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনও উন্নয়ন বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে নিখাদ মেলা-উৎসবে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে এ বার রাজ্য সরকার সরাসরি ‘উপহার’ দেবে বলে শুক্রবার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি মঞ্চের বদলে মমতা এ দিন এই ঘোষণা করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মেয়ো রোডে ছাত্র-জমায়েতে।

খাস কলকাতায় এ দিনই টিএমসিপি-র গোলমালে একটি কলেজ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কেশপুরের কলেজে হেনস্থার শিকার শিক্ষিকা বলছেন, তিনি ছাত্র সংগঠনের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সুপরামর্শে আর ভরসা পাচ্ছেন না। শিক্ষায় নৈরাজ্য নিয়ে ফের প্রশ্ন যখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে, সেই সময়ে টিএমসিপি-র ‘দাদাগিরি’ বন্ধে সরাসরি কোনও কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শুনতে পায়নি শিক্ষা মহল। যা তারা প্রত্যাশা করেছিল। উল্টে ছাত্র সংসদের হাতে মেলা-উৎসবের জন্য দেদার টাকা তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাদের পিঠে প্রশ্রয়ের হাতই রাখলেন কি না, প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীদের কেউ কেউ।

কলেজে কলেজে কী ভাবে সাংস্কৃতিক আবহ বজায় রাখতে হবে, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে, স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তা নিয়ে পরামর্শ বিলোতে বিলোতেই মমতা এ দিন হঠাৎ ঘোষণা করেন, ‘‘ব্লকে ব্লকে যে মেলা হতো, এ বার থেকে তা কলেজে হবে। কলেজকে টাকা দেব। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা ভাল ভাবে করব।’’ কোনও পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই যে মুখ্যমন্ত্রী এই দানের ঘোষণা করে দিয়েছেন, তা-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তখনই। মঞ্চে আসীন যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যেই মুখ্যমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, ‘‘টাকা আছে তো?’’ শিক্ষামন্ত্রীর মুখাবয়বে বিশেষ ভাবান্তর না ঘটলেও একটু দূর থেকে অরূপের আশ্বাস পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আবার ঘোষণা, ‘‘সামনেই শিক্ষক দিবস। শিক্ষকদের সম্মান জানিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে। এর জন্য সব কলেজকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সময় বেশি নেই। টাকাটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে হবে!’’

শিক্ষক দিবস পালন থেকে শুরু হলেও এই মেলার বিস্তার যে বছরভরই তিনি চাইছেন, তা স্পষ্ট করতে মমতা বলতে থাকেন, ‘‘বিজ্ঞান মেলা, রাখির দিন সংস্কৃতি মেলা এবং আরও যে মেলাগুলো ব্লকে হতো, সেগুলো কলেজে হবে।’’ তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে ডেকে বলে দেন, ‘‘পৌষমেলার মতো কিছু একটা কলেজে হবে। এর জন্য তথ্য-সংস্কৃতি দফতর সাহায্য করবে।’’ মঞ্চে উপবিষ্ট ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেকেও মমতার নির্দেশ, ‘‘আপনার দফতরের প্রচার, প্রদর্শনী যা হয়, সব কিছুতে কলেজগুলোকে জড়িয়ে দেবেন।’’ বিজ্ঞান মেলার মাধ্যমে ছাত্রদের বিজ্ঞান সচেতন করার পাশাপাশি পড়ুয়াদের নিয়ে স্বাস্থ্য শিবির করার নির্দেশ এবং শীত কালে নির্দিষ্ট একটি দিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

এই সব মেলা, শিবিরের খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে তো বটেই। এ সব দেখভালের জন্য আস্ত একটা দফতর খোলার কথাও ভাবছেন মুখ্যমন্ত্রী। আপাতত যুবকল্যাণ দফতর অর্থসাহায্য দিলেও পরে নতুন ছাত্রকল্যাণ দফতর খুলে এই খাতে বরাদ্দ করা হবে বলে মমতা জানান। টানাটানির সংসারে মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন দরাজ হস্তকে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘উনি বলছেন, রাজ্যে টাকার অভাব, রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজে অসুবিধা হচ্ছে। এই টাকা কোথা থেকে আসছে? উনি যে ভাবে টাকা বিলোচ্ছেন, তাতে এর পরে হার্মাদ দিবস, মাতাল দিবসেও টাকা বিলোবেন! ’’

উৎসবে সাহায্যের সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্রদের মানসিক বিকাশে স্বরচিত ‘কথাঞ্জলি’ পাঠেরও পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ছাত্রদের সতর্ক করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘লোভ যেন আমাদের কিনে নিতে না পারে!’’ নিজের ছাত্র আন্দোলনের অতীত টেনে এনে মমতা বলেন, ‘‘টিউশন করে কলেজের পড়া চালাতাম। কত কষ্ট করতে হয়! হাতে টাকা না-ই বা থাকল, আস্তে আস্তে হবে।’’ সাংস্কৃতিক ভাবধারা বজায় রাখতে, সুরক্ষিত যান চলাচল বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ছাত্রদের গান বাঁধতেও উৎসাহ দিয়েছেন মমতা। ছাত্রদের তৈরি গানের মধ্য থেকে সেরাকে তিনিই বেছে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন।

কলেজে কলেজে কেউ কেউ ভয়ে ভয়ে থাকলেও মেজাজটাই যে আসল রাজা, টের পাওয়া গিয়েছে মেয়ো রোডে!

ক্যাম্পাস পার্বণ এ বার থেকে পালিত হবে

• শিক্ষক দিবস কলেজপিছু ২০ হাজার টাকা দেবে রাজ্য সরকার

• পৌষমেলা

• বিজ্ঞানমেলা

• রক্তদান শিবির

• রাখির দিন সংস্কৃতি দিবস

• তৃণমূল ব্লকে ব্লকে যে মেলা করে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata utsav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE