ঘরের প্রত্যন্ত কোণে ধুলোয় মেশানো সামান্য বিস্ফোরক। তা-ও ওদের চোখ এড়ায় না!
প্রমাণটা সদ্য পাওয়া গিয়েছে। বর্ধমানের বাদশাহি রোডে, রেজাউল শেখের বাড়িতে। রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি যেখান থেকে ঘুরে এসে হাত উল্টে জানিয়েছিল, সেখানে কিচ্ছুটি নেই। অথচ বৃহস্পতিবার সেই বাড়িরই ফল্স সিলিংয়ের অন্তরাল থেকে ৩৫টি তাজা গ্রেনেড বার করে আনল এনএসজি! যা দেখে রাজ্য পুলিশের দুঁদে অফিসারেরাও একান্তে বলছেন, “হ্যাঁ, কেরামতি বটে!”
বস্তুত বিস্ফোরক সংক্রান্ত বিষয়ে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের পারদর্শিতা এমনই উচ্চতায় যে, তারা এখন আমেরিকার এফবিআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। এনএসজি-র বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইন্টারপোল নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। হরিয়ানার মানেসরে আছে এনএসজি-র ন্যাশনাল বম্ব ডেটা সেন্টার (এনবিডিসি), যার শাখা রয়েছে দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে। বিস্ফোরক নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে এনবিডিসি-তে।
“বিশ্বের কোথায় কোন জঙ্গি সংগঠন কী ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করছে, তার খুঁটিনাটি এনবিডিসি-তে মজুত।” জানাচ্ছেন এক অফিসার।
এই দক্ষতার সঙ্গে মিশেছে অত্যাধুনিক সাজ-সরঞ্জামের উপযুক্ত ব্যবহার। যার একাংশের সাহায্যে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থল থেকে শুরু করে শিমুলিয়ার মাদ্রাসা, বাবুরবাগে কওসরের ডেরা, বাদশাহি রোডে রেজাউল শেখের বাড়ি সমস্ত জায়গা ধরে ধরে ‘স্টেরিলাইজ’ করছে এনএসজি। ঠিক যেমন করতে হয় সংসদ ভবন বা প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলকে। প্রক্রিয়াটির নাম রেন্ডার সেফ প্রসিডিওর (আরএসপি)।
আর তা করতে গিয়েই রেজাউলের বাড়িতে মিলেছে শক্তিশালী বিস্ফোরকের সম্ভার।
তদন্তকারী এনআইএ-র ধারণা, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় বিভিন্ন ডেরায় নানা ধরনের বিস্ফোরক লুকানো রয়েছে। তারই হদিস করতে এনএসজি-কে তলব। সূত্রের খবর: আপাতত এনএসজি-র বিস্ফোরক সন্ধানীরা এনআইএ-র সঙ্গে থাকবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবে বিস্ফোরক উদ্ধারের নানান যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম। যেগুলোর নাম শুনে রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি-র অনেকের স্বীকারোক্তি, এ সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান নিতান্তই সীমিত।
যেমন ধরা যাক, রিয়েল টাইম ভিউয়িং সিস্টেম (আরটিভিএস)। ছোট্ট, বহনযোগ্য ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। সিমেন্টের দেওয়ালের পিছনে লুকানো বিস্ফোরক ধরতে এর জুড়ি নেই। তরল ও প্লাস্টিক বিস্ফোরক তো বটেই, মাদক ধরতেও ওস্তাদ। সন্দেহ ছিল, শিমুলিয়ার মাদ্রাসায় চোরাগোপ্তা কুঠুরিতে, দেওয়ালের পিছনে বা মাটির নীচে বিস্ফোরক থাকতে পারে। তাই ওখানে কুকুর ছাড়াও আরটিভিএস ব্যবহার করেছে এনএসজি।
সঙ্গে নিয়ে আসা হয়েছে ডিপ সার্চ মেটাল ডিটেক্টর (ডিএসএমডি)। মাটির সাত ফুট নীচেও বিস্ফোরক বা মাইন পোঁতা থাকলে এই যন্ত্র তা বলে দিতে পারে। এক অফিসারের কথায়, “অনেক সময় ফাঁদ পাতা থাকে। সুড়ঙ্গ ভেবে মাটি খুঁড়তে গেলেই বিস্ফোরণ। এ সব ক্ষেত্রে ডিএসএমডি অত্যন্ত জরুরি।” এ প্রসঙ্গে এক বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, “মাঝে খবর এসেছিল, শিমুলিয়ার মাদ্রাসার ভিতরে ট্রাঙ্ক সরিয়ে কুঠুরির সন্ধান মিলেছে। কিন্তু খালি হাতে ট্রাঙ্ক সরানোটা মোটেই ঠিক হয়নি। ট্রাঙ্কে বিস্ফোরক থাকলে তা ফেটে বিপর্যয় ঘটতে পারত।”
উপরন্তু তরলের মধ্যে কী রাসায়ানিক রয়েছে, জানার জন্য এনএসজি’র রয়েছে বটলড লিকুইড স্ক্যানার (বিএলএস)। ইলেকট্রনিক স্টেথোস্কোপ বলে দেয়, ব্যাগ বা বাক্সে টাইমার বোমা আছে কি না। থকথকে পদার্থ বা পাউডারে মেশানো রাসায়নিকের চরিত্র নির্ধারণ করে দেয় গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি মেশিন। তাজা শক্তিশালী বোমার উপরে বম্ব ব্ল্যাঙ্কেট চাপিয়ে দিলে বোমা ফাটার পরেও আশপাশের বিশেষ ক্ষতি হয় না। নন লিনিয়ার জাংশন ডিটেক্টর (এনএলজেডি), বম্ব স্যুট-এর মতো জিনিসও এনএসজি’র ভাণ্ডারে মজুত।
বর্ধমান-তদন্তে অবশ্য এখনই সব সরঞ্জাম আনা হয়নি। এনএসজি-র এক কর্তা বলেন, “আপাতত ন্যূনতম যন্ত্রপাতি দিয়ে অফিসারদের পাঠানো হয়েছে। তাঁরা দরকার মনে করলে অন্যগুলো পাঠানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy