Advertisement
২৮ মার্চ ২০২৩

পার্কে বাঘ-সিংহ পোষায় আপত্তি, নালিশ মমতাকে

বাঘের ছানা কোলে টেনে সেলফি তোলার হিড়িকটা নতুন নয়। তাইল্যান্ড কিংবা কম্বোডিয়া, প্যাকেজ ট্যুরে পাড়ি দিয়ে এ ছবি তোলেননি, এমন বাঙালি পর্যটক নিতান্তই কম।

রাহুল রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:২৭
Share: Save:

বাঘের ছানা কোলে টেনে সেলফি তোলার হিড়িকটা নতুন নয়।

Advertisement

তাইল্যান্ড কিংবা কম্বোডিয়া, প্যাকেজ ট্যুরে পাড়ি দিয়ে এ ছবি তোলেননি, এমন বাঙালি পর্যটক নিতান্তই কম।

তবে সে সুযোগ, একেবারে হাতের তেলোতে এনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চমকে দিয়েছেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।

দিন কয়েক আগে, সরকারি এক অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়েছিলেন— সিঙ্গাপুরের ইকোলজিক্যাল পার্কের আদলে তৈরি আস্ত একটা প্রমোদ বাগান অচিরেই তিনি তুলে দেবেন কলকাতার হাতে। বাইপাসের ধারে সাড়ে চারশো একর জলা ভুমির কোল ঘেঁষে, পিপিপি মডেলে গড়ে তোলা সেই পার্কে বাঘ-সিংহের শাবকদের রীতিমতো পুষ্যি করে দর্শকদের নাগালে দেওয়া হবে।

Advertisement

আপত্তিটা উঠেছে সে আশ্বাস শুনেই। শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণ সংস্থাগুলিও প্রশ্ন তুলেছে, পর্যটক টানতে বাঘ-সিংহকে এমন নিরীহ পুষ্যি করে তোলা যে বন্যপ্রাণ আইন ভাঙা, রাজ্য সরকার কি তা জানে না? তাদের যুক্তি, সার্কাসে শ্বাপদের খেলা বন্ধ হয়েছে তো সে কারণেই।

আপত্তিটা সটান মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছে তারা। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে বিশ্বের তাবড় সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড অ্যানিম্যাল প্রোটেকশন’ (ডব্লিউএপি) সটান চিঠি লিখে বসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ডব্লিউএপি-র পক্ষে শুভব্রত ঘোষ বলছেন, ‘‘পর্যটনের আকর্ষণ বাড়ানো মানে তো আইন ভাঙা নয়! শুধু বাঘ কেন, বন্যপ্রাণ আইন অনুসারে বিপন্ন প্রজাতির কোনও প্রাণীকে পর্যটনের স্বার্থে ব্যবহার করা যায় না।’’

তাইল্যান্ডের ধাঁচে, কলকাতার বুকেও, বাঘের ছানার মুখে ফিডিং বোতল ঠেসে ধরার ‘আকর্ষণীয় পর্যটনের’ আঁচ পেয়ে কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রককে আগাম সতর্ক করেছে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ)। দেশে, বাঘ সংরক্ষণের সর্বোচ্চ ওই সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রীকে আমরা জানিয়ে রেখেছি, জাতীয় পশু নিয়ে এমন ছেলেখেলা যেন কোথাও না হয়।’’

ঘটনাচক্রে শোভন, রাজ্যের পরিবেশ দফতরেরও মন্ত্রী। এনটিসিএ এবং ডব্লুএপি-র আপত্তি এখানেই— পরিবেশমন্ত্রী হয়ে এমন পরিকল্পনায় সায় দিচ্ছেন কী করে শোভনবাবু?

ডব্লুএপি’র পক্ষে গজেন্দ্র শর্মা বলছেন, ‘‘পর্যটন মার খাবে জেনেও তাইল্যান্ড যে ব্যবসা বন্ধ করে দিল, তা নিয়ে আমরা নতুন করে ভাবনা শুরু করলাম। তা-ও আবার বাইপাসের বিস্তীর্ণ জলাভুমি বুজিয়ে। ইকোপার্কের সংজ্ঞাটাই তো বদলে দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা!’’

কলকাতার মেয়র অবশ্য জানিয়ে রেখেছেন, যা হবে, সবই আইন মেনে।

পর্যটক টানতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে, বাঘ নিয়ে এমন ‘ব্যবসা’র বয়স বেশ পুরনো। তা বন্ধ করতে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)-এর ক্রমাগত লড়াইও দীর্ঘ দিনের। সেই চাপে, শেষতক পিছু হটেছে ওই দেশগুলি। গত বছর, তাইল্যান্ডের কাঞ্চনবুড়ি-সহ সর্বত্র নিষিদ্ধ হয়েছে ‘টাইগার এন্টারটেনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি’।

শ্যাম দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ মন্ত্রকের সচিব চোটি তারছু ই-মেল বার্তায় জানাচ্ছেন, ‘‘এক দিনেই হয়তো সাফল্য আসবে না। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন কোণায় এই বার্তা পাঠানো হচ্ছে— টাইগার এন্টারটেনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি’ বা বাঘ নিয়ে এমন ছেলেখেলায় কোনও দেশের সরকার যেন প্রশ্রয় না দেয়।’’

গজেন্দ্র বলছেন, ‘‘সে বার্তা কলকাতা পুরসভা কানে তুললে হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.