Advertisement
E-Paper

মমতার বৈঠক শেষ হতেই পাহাড়ে আগুন, নামল সেনা

গোলমাল শুরু হয় বিকেল সাড়ে তিনটের কিছু পরে। মোর্চার অভিযোগ, তাদের সমর্থকেরা ইট ছুড়লে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। কিন্তু পুলিশ জানাচ্ছে, বোমার আওয়াজও পাওয়া গিয়েছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘প্রতি মুহূর্তে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে।’’ জিমখানা ক্লাব আর মহাকাল মন্দিরের রাস্তা থেকে মোর্চা সমর্থকেরা পাথর ছুড়েছে পুলিশের উপরে।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ০৪:৩৪
জ্বলন্ত: মোর্চা সমর্থকেরা আগুন দিয়েছে পুলিশের গাড়িতে। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙে ভানুভবন থেকে ম্যাল যাওয়ার রাস্তায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

জ্বলন্ত: মোর্চা সমর্থকেরা আগুন দিয়েছে পুলিশের গাড়িতে। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙে ভানুভবন থেকে ম্যাল যাওয়ার রাস্তায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

আগুন, লাঠি, কাঁদানে গ্যাস। সকাল থেকে যে অশান্তির আঁচ করতে পারেনি পুলিশ-প্রশাসন, বিকেলে তারই আতঙ্কে দিশাহারা দার্জিলিং। যার ধাক্কায় পিছনে চলে গেল পাহাড়ে নতুন সচিবালয় গড়ার সিদ্ধান্ত। পিছনে চলে গেল বিধানচন্দ্র রায় ও সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছুঁয়ে ফেলা। পিছনে চলে গেল পাহাড়ে এত দিনকার শান্তি, যা ফিরিয়ে এনেছিল পর্যটকের ঢল।

এ দিন দুপুরে যখন রাজভবনে ঢুকছেন মমতা, তখনও ভানুভবনের সামনে মোর্চা সমর্থকদের বিক্ষোভ সমাবেশ ছাড়া কোথাও কিছু নেই। সাংবাদিক বৈঠকেও মমতা জানালেন, দু’একটি রাস্তায় বিক্ষোভকারী রয়েছেন। তার বেশি নয়।

কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ-প্রশাসনকে চমকে দিয়ে দার্জিলিংকে অগ্নিগর্ভ করে তুললেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থকেরা। পর্যটকরা তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব-সহ একগাদা ভিভিআইপি বোঝাই দার্জিলিং শহর তার পরে কয়েক ঘণ্টা ধরে দেখল চূড়ান্ত তাণ্ডব। ইটের ঘায়ে জখম হলেন কমপক্ষে ৫ পুলিশ। এডিজি-র (উত্তরবঙ্গ) দেহরক্ষীর একটি চোখ ইটের ঘায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে। জখম হয়েছেন এডিজি-ও। আশঙ্কাজনক অবস্থা এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ৮টি সরকারি বাস ও গাড়ি।

গোলমাল শুরু হয় বিকেল সাড়ে তিনটের কিছু পরে। মোর্চার অভিযোগ, তাদের সমর্থকেরা ইট ছুড়লে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। কিন্তু পুলিশ জানাচ্ছে, বোমার আওয়াজও পাওয়া গিয়েছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘প্রতি মুহূর্তে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে।’’ জিমখানা ক্লাব আর মহাকাল মন্দিরের রাস্তা থেকে মোর্চা সমর্থকেরা পাথর ছুড়েছে পুলিশের উপরে। ভানুভবনের সামনে পুলিশ বুথে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ কর্তাদের কেউ কেউ বলেন, পেট্রোল-কেরোসিন নিয়ে তৈরি হয়েই এসেছিল মোর্চা। তাদের পিছনে বিজেপির উস্কানি ছিল বলেও অভিযোগ তৃণমূল নেতৃত্বের।

আরও পড়ুন:সে-দিন এ-দিনে বিস্তর ফারাক

মোর্চা সমর্থকদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে এই আশঙ্কায় হামলা রুখতে গিয়ে আগ্রাসী ভূমিকা নেয়নি পুলিশ। ফলে খণ্ডযুদ্ধের শুরুতে তারা পিছু হটে। পরে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো শুরু হয়। একটি অংশের দাবি, কয়েক জন পুলিশ গুলি চালাতে মরিয়া ছিলেন। কিন্তু এডিজি তাঁদের নিরস্ত করেন। সন্ধ্যার একটু আগে ভানুভবনে জিটিএ দফতরে ঢোকে পুলিশ। কিন্তু সেখানে মহিলা ও শিশু ছাড়া কারও দেখাই মেলেনি। পরে গুরুঙ্গের দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমাদের কেউ জড়িত নয়।’’

পুলিশের অভিযোগ সত্যি হলে প্রশ্ন, মোর্চার হাতে অস্ত্র এল কী করে? তাদের পরিকল্পনার আঁচও কেন পাননি গোয়েন্দারা? ঘটনার পরেই বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। লম্বা ছুটিতে পাঠানো হয় জিটিএ সচিব রবীন্দ্র সিংহকে। গুরুঙ্গের পুলিশি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলেও প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর।

শুক্রবার ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ ডেকেছে মোর্চা। তা বেআইনি ঘোষণা করেছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও বদমায়েসি সহ্য করব না।’’

Darjeeling Mamata Banerjee মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিং
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy