Advertisement
১১ জুন ২০২৪

ভোরে কাঁপল বাড়ি, মন্তেশ্বরে মৃত প্রৌঢ়

আতঙ্কে তড়িঘড়ি বাড়ির নীচে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু আর কাউকে নেমে আসতে না দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দেন, ‘কেউ ভূমিকম্প টের পেয়েছেন? আতঙ্কে নীচে এসেছি। কিন্তু কাউকে দেখছি না। আমার কি তবে ভুল হচ্ছে!’ দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা তথা চিকিৎসক সত্যজিৎ বসুকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাঁর সহকর্মী চিকিৎসক জয় সান্যাল জানিয়ে দিলেন, কোনও ভুল হয়নি। সত্যিই ভূমিকম্প হয়েছে।

স্বজন হারিয়ে কান্না। নিজস্ব চিত্র।

স্বজন হারিয়ে কান্না। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:২১
Share: Save:

আতঙ্কে তড়িঘড়ি বাড়ির নীচে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু আর কাউকে নেমে আসতে না দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দেন, ‘কেউ ভূমিকম্প টের পেয়েছেন? আতঙ্কে নীচে এসেছি। কিন্তু কাউকে দেখছি না। আমার কি তবে ভুল হচ্ছে!’ দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা তথা চিকিৎসক সত্যজিৎ বসুকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাঁর সহকর্মী চিকিৎসক জয় সান্যাল জানিয়ে দিলেন, কোনও ভুল হয়নি। সত্যিই ভূমিকম্প হয়েছে।

তখন সোমবার ভোর ৪টে ৪০। বামুনাড়ায় বহুতলের বাসিন্দা, বেসরকারি সংস্থার কর্মী প্রসেনজিৎ সরকার সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সেই সময়েই লিখলেন, ‘ভূমিকম্প হচ্ছে। নিরাপদে থাকুন!’ সিটি সেন্টারের একটি বহুতলের বাসিন্দা সুব্রত সরখেল খানিক ক্ষণের মধ্যে ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করে ফেললেন, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও মাত্রা কত। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি সেই তথ্য দিয়ে বাকিদের আশ্বস্ত করলেন, এই শহরে ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

ভূমিকম্প নিয়ে ভোর থেকে এ ভাবেই জেলার নানা প্রান্তে সরগরম হলেন বাসিন্দারা। চলল বার্তা-পাল্টা বার্তার পালা। সকালে আবার হাটবাজার, পাড়ার মোড়ে কাঁপুনিটা ঠিক কেমন ছিল, কে কী ভাবে টের পেলেন, সে সব নিয়ে চর্চা। নেপালে ভূমিকম্পের দিন শহর কেঁপেছিল দিনের বেলায়। অনেকে রাস্তাঘাটে ছিলেন। কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু এ দিন প্রায় সবাই ছিলেন বিছানায়। কম্পনের চোটে অনেকেরই ঘুম ভেঙে যায়। বহুতলে যাঁদের বাস তাঁরা কম্পন আরও বেশি করে টের পেয়েছেন বলে জানান। আতঙ্কে তাঁদের নীচে নেমে আসেন।

ভূমিকম্পের আতঙ্কে মন্তেশ্বরের মাঝেরগ্রামের বসতপুর গ্রামে বছর পঞ্চান্নর এক প্রৌঢ়ের পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় বলে পরিবারের দাবি। শান্তি বিশ্বাস (৫৫) নামে ওই ব্যক্তির প্রতিবেশীরা জানান, স্ত্রী ও কিশোর ছেলেকে নিয়ে ঘরে শুয়েছিলেন তিনি। ভূমিকম্পের সময়ে তাক থেকে মুড়ির টিন পড়ার শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা বিশ্বাসের দাবি, তখন পুরো বাড়ি কাঁপছিল। তড়িঘড়ি বিছানা থেকে নামতে গিয়ে মেঝেতে পড়ে যান শান্তিবাবু। কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘আমরা গিয়ে দেখি, মেঝেতে নিথর শরীর পড়ে রয়েছে।’’ স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি জানান, শান্তিবাবুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে কালনা মহকুমা হাসপাতালে দেহের ময়না-তদন্ত হয়। চিকিৎসকেরা জানান, হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে প্রৌঢ়ের।

বর্ধমানের কাঞ্চননগরের বাসিন্দা পতিতপাবন দত্ত বলেন, ‘‘ভোরে ঘুম ভেঙে দেখি, ফ্যান ঘুরছে। বাইরে হইহল্লা। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’ কালনার বধূ কল্পনা সেন বলেন, ‘‘ঘুম ভেঙে আলমারি কাঁপছে দেখে স্বামী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে রাস্তায় চলে যাই।’’ প্রতিদিন ভোরে ভ্যানে করে বাজারে মাছ নিয়ে যান কালনার জিউধারার গোবিন্দ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘তখনও অন্ধকার। দেখি, ভ্যানটা কাঁপছে। প্রথমে মনে হল, ভ্যানেরই কিছু গোলমাল। পড়ে লোকজনের চেঁচামেচিতে বুঝি ভূমিকম্প হচ্ছে।’’ অনেকেই আবার সোশ্যাল নেটাওয়ার্কিং সাইটে সকলকে রাস্তা নেমে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন। অনেককে আতঙ্কে সকাল পর্যন্ত রাস্তার ধারে বা মাঠে বসে থাকতেও দেখা গিয়েছে।

দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের একটি বহুতলের বাসিন্দা পঙ্কজ বিশ্বাস জানান, ভোরে হঠাৎ দরজা-জানলা ঝনঝন করে কেঁপে ওঠে। তিনি বলেন, ‘‘তাড়াহুড়োয় বিছানায় উঠে বসি। তখনও সব কাঁপছিল।’’ চণ্ডীদাস বাজারে সব্জি কিনতে এসেও ক্রেতাদের মুখে শুধুই ভূমিকম্প। ডিএসপি-র প্রাক্তন কর্মী শিবম দাসের কথায়, ‘‘একতলা আবাসনে থাকি। তা-ও ভাল কাঁপুনি টের পেয়েছি। তবে সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে পড়ায় ভয় কেটে যায়।’’ বেনাচিতির বাসিন্দা চন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ‘‘নেপালের ভূমিকম্পের কথা মনে পড়ছিল। হাড় হিম হয়ে গিয়েছিল।’’

বড়দিনের টানা ছুটির পরে শহরের বহু স্কুল খুলেছে এ দিন। সেখানেও পড়ুয়াদের মধ্যে দিনভর ছিল ভূমিকম্পের কথা। বিধাননগরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া কবিতা দত্ত, রজত বসুরা অবশ্য মোটেও আতঙ্কিত নয়। তাদের কথায়, ‘‘আগে বড়দের কাছে ভূমিকম্পের গল্প শুনতাম। এখন তো দেখছি মাঝে-মাঝেই হচ্ছে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূমিকম্পের জেরে কোনও ক্ষতির খবর সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলেনি। হাসপাতালগুলিতেও কারও অসুস্থ হয়ে ভর্তি থাকার খবর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Earthquake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE