Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অনলাইনে জালিয়াতি জেলা জুড়ে

জালিয়াতির ফাঁদ পাতা ভুবনে। এ ফাঁদ অনলাইনের। ছোট ছোট ‘দোকানির’ পাতা ফাঁদে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বেশ কয়েক জন বিদেশি নাগরিক। জালিয়াতির বহর এতই যে মাঠে নামতে হয়েছে ইন্টারপোলকে। তাদের কাছ থেকে সিবিআই মারফত খবর এসেছে এ রাজ্যের পুলিশের কাছে। এ রাজ্যে এই জালিয়াতির বহর খুঁজছেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা।

দিবাকর রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৪
Share: Save:

জালিয়াতির ফাঁদ পাতা ভুবনে।

এ ফাঁদ অনলাইনের। ছোট ছোট ‘দোকানির’ পাতা ফাঁদে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বেশ কয়েক জন বিদেশি নাগরিক। জালিয়াতির বহর এতই যে মাঠে নামতে হয়েছে ইন্টারপোলকে। তাদের কাছ থেকে সিবিআই মারফত খবর এসেছে এ রাজ্যের পুলিশের কাছে। এ রাজ্যে এই জালিয়াতির বহর খুঁজছেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা।

পুলিশ সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগেই এমন এক ঘটনার সন্ধান পান এ রাজ্যের গোয়েন্দারা। এক বিদেশি গ্রাহক অনলাইনে ‘অ্যান্টিভাইরাস’-এর দাম দেখেন ৩০ ডলার। কিনতে গিয়ে দেখলেন, অ্যান্টিভাইরাস বাবদ তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০০০ হাজার ডলার কেটে নেওয়া হয়েছে! এর পরে নিজের এলাকার পুলিশকে ঘটনাটি জানান ওই বিদেশি নাগরিক। সেই তদন্তের জাল এসে শেষ হয় এ রাজ্যের সল্টলেক পাঁচ নম্বর সেক্টরে! পুলিশ সূত্রে খবর, সল্টলেকের একটি বিপিও সংস্থার কর্মীরা অনলাইনে জালিয়াতি করে ওই ডলার হাতিয়ে নিয়েছিলেন। দুর্গাপুর, আসানসোল, শ্রীরামপুর, শিলিগুড়ি, খড়্গপুরের বিভিন্ন ছোট বিপিও-র বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ মিলেছে। সব ক’টি ক্ষেত্রেই গোয়েন্দারা দেখছেন অনলাইন জালিয়াতির শিকার হয়েছেন বিদেশি নাগরিকেরাই।

কী ভাবে হচ্ছে এই জালিয়াতি?

প্রাথমিক তদন্তের পর গোয়েন্দা ও সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানান, রাজ্যের ছোট ছোট বিপিওগুলি ইন্টারনেট মারফত ফোন করে অ্যান্টি ভাইরাস বা অন্য কোনও পরিষেবা বিক্রি করে। সেই পরিষেবা বিক্রির সময় ওই গ্রাহকের ব্যাঙ্কের সিস্টেম হ্যাক করে নেয় অভিযুক্তেরা। সেখানেই কারসাজি করে পরিষেবার মূল্য বাড়িয়ে নেওয়া হয়। যত ক্ষণে ওই গ্রাহক বিষয়টি টের পান, তত ক্ষণে টাকা অভিযুক্তদের হাতে চলে আসে। গোয়েন্দারা জানান, শুধু এক বার প্রতারণাতেই জালিয়াতি থেমে থাকছে না। অ্যান্টিভাইরাস পরিষেবা দেওয়ার নাম করে ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ‘ডাইরেজা’ নামে এক ট্রোজান ভাইরাস ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একটি বিশেষ ‘অপারেটিং সিস্টেম’ ব্যবহারকারীদেরই টার্গেট করছে দুষ্কৃতীরা। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত ই-মেল ব্যবহার করেই এই ট্রোজান ছড়ানো হচ্ছে। ই-মেলের সঙ্গে ‘পিডিএফ’ বা ‘জিপ’ ফরম্যাটের ফাইলে এই ট্রোজান ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ট্রোজান ঢুকে গেলে ব্যাঙ্কের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। সাইবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, এই ধরনের ট্রোজান হানা মানুষের কম্পিউটারে হলে তা আরও বিপজ্জনক। ব্যাঙ্কের পরিষেবা সামালানোর জন্য ইঞ্জিনিয়ার থাকেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রযুক্তি সম্পর্কে এতটা ধারণা থাকে না।

এই জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে দেশের সাইবার সুরক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম অফ ইন্ডিয়া (সার্ট-ইন) বিষয়টি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সর্তক করে। সার্ট-ইনের পক্ষে এটি অতি বিপজ্জনক তকমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ছোট ছোট বিপিও সংস্থাগুলির বিষয়ে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। কম্পিউটার এবং ই-মেলে বাড়তি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে নিয়মিত অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার পরীক্ষা করাতে বলা হয়েছে। এ ধরনের মেল যাতে ইনবক্সে না ঢুকতে পারে সে ব্যবস্থাও করতে বলেছে সার্ট-ইন।

সাইবার আইন বিশেষজ্ঞরা জানান ছোট ছোট বিপিওগুলি অনেক সময়ই নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। ফলে জালিয়াতি করলেও নির্দিষ্ট তথ্য পান না গোয়েন্দারা। বিভাসবাবু বলছেন, “এই জালিয়াতির ঘটনা বাড়লে একটি অশনি সঙ্কেত রয়েছে। এ রাজ্যে ভারী শিল্প না থাকায় বিপিও কর্মসংস্থানে বড় জায়গা। জালিয়াতির ঘটনা বাড়তে থাকলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। অর ফলে কমতে পারে ব্যবসার বহরও। “যার প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানেও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE