Advertisement
০২ মে ২০২৪

জিনগত জটিল রোগের সফল অস্ত্রোপচার

হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট তথা উপাধ্যক্ষ শুভেন্দুবিকাশ সাহা, শল্য বিভাগের প্রধান দেবীপ্রসাদ ঘোষাল এবং শল্য চিকিৎসক পুরুষোত্তম সোম মিলিত ভাবে এই অস্ত্রোপচার করেন। ওয়াসরুল শেখ নামে ওই রোগী সুস্থ হওয়ার পরে রবিবার ছাড়া পেয়েছেন হাসপাতাল থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫৮
Share: Save:

বৃহদন্ত্রে অসংখ্য ছোট ছোট টিউমার। যার মধ্যে কয়েকটিতে ছড়িয়েছে ক্যানসার। এমনই একটি জিনগত বিরল রোগ ‘ফ্যামিলিয়াল অ্যাডেনোমেটাস পলিপোসিস’(এফএপি)-এ আক্রান্ত এক রোগীর সফল অস্ত্রোপচার তাঁরা করেছেন বলে দাবি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট তথা উপাধ্যক্ষ শুভেন্দুবিকাশ সাহা, শল্য বিভাগের প্রধান দেবীপ্রসাদ ঘোষাল এবং শল্য চিকিৎসক পুরুষোত্তম সোম মিলিত ভাবে এই অস্ত্রোপচার করেন। ওয়াসরুল শেখ নামে ওই রোগী সুস্থ হওয়ার পরে রবিবার ছাড়া পেয়েছেন হাসপাতাল থেকে।

এই রোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির আগে কখনও বাঁকুড়া মেডিক্যালে অস্ত্রোপচার হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত নন হাসপাতালের কর্তারা। শুভেন্দুবিকাশবাবু বলেন, “এফপিএ একটি জিনগত ও বিরল রোগ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বংশপরম্পরায় এই রোগ বহন করেন পরিবারের সদস্যেরা।’’

বীরভূমের ইলামবাজারের বাসিন্দা ওয়াসরুলের পরিবারের অন্য কেউও এই রোগে আক্রান্ত কিনা, তা জানতে তাঁদের কোলনোস্কপি করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও এই পরীক্ষা বাঁকুড়া মেডিক্যালে হয় না। তবে ওই পরিবার যাতে কলকাতার কোনও সরকারি হাসপাতাল থেকে ওই পরীক্ষা করাতে পারে, তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা বাঁকুড়া মেডিক্যাল করবে বলে জানিয়েছেন শুভেন্দুবিকাশবাবু।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, বেসরকারি জায়গা থেকে কোলোনোস্কপি করিয়েই গত ৭ সেপ্টেম্বর বাঁকুড়া মেডিক্যালের বহির্বিভাগে রিপোর্ট দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বছর পঁয়তাল্লিশের ওয়াসরুল। বিরল রোগে আক্রান্ত এই রোগীর উপরে প্রথম থেকেই বিশেষ নজর রেখেছিলেন হাসপাতালের কর্তারা। ১৬ সেপ্টেম্বর ওয়াসরুলের পেটে ছ’ঘণ্টার অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসকেরা তাঁর বৃহদন্ত্র ও মলদ্বার সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে কৃত্রিম মলদ্বার স্থাপন করেন শল্য চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, “হাসপাতালে কোনও গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজিস্ট নেই। এই পরিস্থিতিতে ওয়াসরুলের অস্ত্রোপচার করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাঁর পরিবারকে আমরা সব সমস্যা জানিয়েছিলাম। তার পরেও ওঁরা এখানেই অস্ত্রপচার করাতে চেয়েছিলেন।’’

ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, এ ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে পুরো কোলন বাদ দিতে হয়। যা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। জেলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যে উন্নতি হয়েছে, সেটা এ ধরনের অস্ত্রোপচারের সাফল্য প্রমাণ করে।

তাঁর কথায়, ‘‘আশা রাখছি, আগামী দিনে জেলা হাসপাতালগুলিতে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য আলাদা শল্য চিকিৎসার বিভাগ তৈরি হবে। তা হলে সাধারণ মানুষ আরও উপকৃত হবেন।’’

মঙ্গলবার ওয়াসরুল ফোনে জানান, ছোট থেকেই পেটে ব্যথা ও ঘন ঘন ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হতেন তিনি। কোনও দিনই ভাবতে পারেননি এমন একটি অসুখে তিনি আক্রান্ত। ওয়াসরুলের স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি দিনমজুরি করে সংসার চালাই। এত বড় অসুখের চিকিৎসার খরচ সামলানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে পরিষেবা পেয়েছি বলেই অস্ত্রোপচার করানো গেল।’’

গত ২৩ সেপ্টেম্বর বাঁকুড়া মেডিক্যালে আরও একটি জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। অগ্ন্যাশয়ে ক্যানসার নিয়ে ভর্তি হওয়া ঝাড়খণ্ডের ডুমুরতাড়া এলাকার বৃদ্ধ হিরালাল মাহাতোকে প্রায় আট ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে অগ্ন্যাশয়, পিত্তনালী, পিত্তথলী, খাদ্যনালী, ক্ষুদ্রান্ত বাদ দেওয়া হয়। বছর পঁয়ষট্টির হিরালালবাবু এখনও বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসাধী। শুভেন্দুবিকাশবাবু বলেন, “এই অস্ত্রোপচারটিও বেশ জটিল ছিল। এখানেও আমরা সাফল্য পেয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE