Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

হাতিয়ার নারদ, লড়ছে বিরোধীরা

সিপিএম কর্মীর হাতে ঝাঁ চকচকে ট্যাব-এর স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের পরিচিত সব মুখ। নেতারা টাকা নিচ্ছেন। ছবিতে সাদা পাঞ্জাবির ধোপদুরস্ত সুদর্শন নেতাটি খবরের কাগজ মুড়ে টাকার বাণ্ডিল ড্রয়ারে চালান করতেই চমকে উঠলেন ঝাড়গ্রামের জায়দা বিবি। বিস্ফারিত চোখে তাঁর প্রশ্ন, “ইনি তো জঙ্গলমহলে শান্তির সেনাপতি ছিলেন। উনিও টাকা নিয়েছেন!”

নারদ-কাণ্ড নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিপিএমের প্রচার।—নিজস্ব চিত্র।

নারদ-কাণ্ড নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিপিএমের প্রচার।—নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ১৭:৫৮
Share: Save:

সিপিএম কর্মীর হাতে ঝাঁ চকচকে ট্যাব-এর স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের পরিচিত সব মুখ। নেতারা টাকা নিচ্ছেন। ছবিতে সাদা পাঞ্জাবির ধোপদুরস্ত সুদর্শন নেতাটি খবরের কাগজ মুড়ে টাকার বাণ্ডিল ড্রয়ারে চালান করতেই চমকে উঠলেন ঝাড়গ্রামের জায়দা বিবি। বিস্ফারিত চোখে তাঁর প্রশ্ন, “ইনি তো জঙ্গলমহলে শান্তির সেনাপতি ছিলেন। উনিও টাকা নিয়েছেন!” নারদের ভিডিওতে শাসক দলের টাকা লেনদেনের কেচ্ছাছবি নিয়ে জঙ্গলমহলে ভোটের বাজার সরগরম। মঙ্গলবার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন আসনে সিপিএম ও তাদের জোটের শরিকরা মনোনয়ন দাখিল করেছেন। কিন্তু তার আগেই সকাল থেকেই গ্রামে গঞ্জে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় প্রচার শুরু করে দেন সিপিএম কর্মীরা।

সিপিএমের মহিলা সমিতির সদস্য নিয়তি সিংহ, ছিতা বাস্কে, মানেকা মাণ্ডিরা বলছেন, “পাঁচ বছর ধরে জঙ্গলমহলের আদিবাসী উন্নয়নের নামে অনেক মেলা আর খেলা দেখলাম। ঝাড়গ্রামের বিধায়কের কাছে টাকা না দিলে তো কোনও সার্টিফিকেটই মেলে না। এখন প্রমাণ হল তৃণমূলের নিচু তলা থেকে ওপর তলা সবাই চোর।’’ শিলদার একটি প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক অধীর পালের কথায়, “রাজ্য সরকার নিজস্ব ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে ভিডিওটি পরীক্ষা করিয়ে প্রমাণ করে দিন ভিডিওটি জাল।”

নারদ-নারদের সূত্র ধরে জঙ্গলমহলে শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গুলিকেও প্রচারের সামনে নিয়ে আসছেন বিরোধীরা। বিনপুর আসনের সিপিএম প্রার্থী দিবাকর হাঁসদা বলেন, “আমার বিধানসভা এলাকায় আদিবাসীদের গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি দেওয়ার নাম করে পুরো টাকাটাই ঠকিয়ে নিয়েছেন শাসক দলের এক নেতা। এরকম ভূরি ভূরি বিষয় আছে। তথ্য-সহ মানুষকে জানাচ্ছি।” ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার বিরুদ্ধে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্বে থাকাকালীন অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকার লালগড় ব্লকের রামগড় অঞ্চলের একটি বাঁধ তৈরির সময় ঠিকাদারের কাছ থেকে কাটমানি নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। আবার লালগড়ে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন একটি জলাশয় সংস্কারের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। ২০১২-২০১৪ পর্বে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় বন দফতরের মাধ্যমে জঙ্গলমহলে নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল। তাতেও বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসছে।

সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ সরকার বলেন, “ছবিই কথা বলছে। আমাদের বেশি কিছু বলতে হচ্ছে না।” ঝাড়গ্রাম আসনে বাম সমর্থিত ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর প্রার্থী চুনিবালা হাঁসদার অভিযোগ, “ঝাড়গ্রামে এরকম অনেক চোর মন্ত্রী ও শাসকদলের জনপ্রতিনিধারা রয়েছেন। যাঁদের টাকা না-দিলে কোনও কাজই হয় না। প্রচারে সে বিষয়গুলিও আনব।” তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “তৃণমূল ফের ক্ষমতায় ফিরবে বুঝতে পেরে সব বিরোধীরা এখন একজোট হয়ে কুত্‌সা প্রচার শুরু করেছে। এতে আমাদেরই জনসমর্থন আরও বাড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

narada scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE