Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ভোটের নথি শাসকের হাতে, প্রশ্ন বিরোধীদের

যে কোনও মূল্যে গণনা স্থগিতের সিদ্ধান্ত ঠেকাতে হবে। তাই প্রাক্তন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের ঘরে ঢুকে চেষ্টার কোনও কসুর করেননি তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

যে কোনও মূল্যে গণনা স্থগিতের সিদ্ধান্ত ঠেকাতে হবে। তাই প্রাক্তন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের ঘরে ঢুকে চেষ্টার কোনও কসুর করেননি তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। কমিশন সূত্রের খবর, গণনায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার বা নতুন করে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত আটকাতে শাসক দলের নেতাদের অন্যতম হাতিয়ার ছিল প্রিসাইডিং অফিসারদের ডায়েরি, পর্যবেক্ষকদের রিপোর্ট-সহ নানা নথি। যে নথিপত্র নির্বাচন কমিশনেই জমা পড়ার কথা, সে সব কী করে শাসক দলের হাতে চলে গেল— তা-ই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। স্তম্ভিত বিরোধীরা এই নিয়ে নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহিও চাইছে।

নিয়ম অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরে প্রিসাইডি়ং অফিসার বা পর্যবেক্ষকদের রিপোর্ট পৌঁছে যাওয়ার কথা কমিশনের কাছে। পুরভোট বা পঞ্চায়েত ভোট হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে। ভোটের কাজে যাঁরা দায়িত্ব পান, তাঁরাও রাজ্য সরকারেরই কর্মচারী। তৃণমূল সূত্রের খবর, শাসক দলের কর্মী সংগঠনের সুবাদে বিধাননগর, বালি বা আসানসোলের বেশ কিছু বুথের প্রিসাইডি়ং অফিসারদের রিপোর্টের প্রতিলিপি জোগাড় করা হয়েছিল। সেই প্রতিলিপি দেখিয়েই সুশান্তবাবুকে পাল্টা চাপে ফেলেছিলেন তৃণমূলের চার নেতা-মন্ত্রী। কিন্তু এমন কাজ যে কোনও ভাবেই আইনসম্মত নয়, সেই প্রশ্ন তুলেই সরব হয়েছে বিরোধীরা।

গোটা ঘটনা অত্যন্ত ‘সাঙ্ঘাতিক’ বলে মন্তব্য করে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বুধবার দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশনারের ঘরে সিসিটিভি থাকলে তার ফুটেজ নিয়ে তদন্ত করা হোক। তাঁর কথায়, ‘‘যদি সবং কলেজের নির্দিষ্ট কিছু ফুটেজ দেখিয়ে যদি ভারতী ঘোষ দাবি করে ফেলতে পারেন অমুক অমুক খুন করেছে, তা হলে এত গুরুত্বপূর্ণ ও সাঙ্ঘাতিক ঘটনায় কেন সিসিটিভি দেখা হবে না? যদি অবশ্য সে সব নষ্ট করা না হয়ে ফেলে থাকে! কমিশনের মধ্যে থেকেই কেউ তথ্যপাচার করেছেন কি না, তা-ও তো জানা দরকার!’’ অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেওয়ার পরিকল্পনাও নিয়েছে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে পদত্যাগী কমিশনার সুশান্তবাবুর কাছে সাহায্যের আবেদনও জানান মানসবাবুরা।

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের মতে, ‘‘একে তো প্রিসাইডিং অফিসারদের দিয়ে তৃণমূল বহু জায়গায় জোর করে লিখিয়ে নিয়েছে, কোনও অশান্তি হয়নি। তার উপরে কাগজে পড়েছি, শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা এতটাই নির্লজ্জ ও উদ্ধত যে, কমিশনারের কাছে গিয়েই সেই সব রিপোর্ট দেখাচ্ছেন!’’ সুশান্তবাবুর প্রস্থান ও আলাপনবাবুর আগমনে নির্বাচন কমিশনই যে হেতু এখন টালমাটাল অবস্থায়, তাই এ সব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে অবশ্য একটু দেখে নিতে চাইছে সিপিএম। সেলিমের কথায়, ‘‘অভিযোগ করলেই বা কাকে করব! এই রাজ্য সরকার কোনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব স্বীকারে রাজি নয়, সেটা এখন মানুষের কাছে ধরা পড়ছে। নির্বাচন কমিশনের হাল ভেঙে সেই ভাঙা হাল আবার ধরার চেষ্টা হচ্ছে থিম্পু থেকে!’’ আইনি লড়াই এখনই শুরু করে দিলেও আলাপনবাবু শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেন, তার জন্য অবশ্য অপেক্ষা করার কথাই বলেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তাঁর কথায়, ‘‘আশা করছি, নতুন কমিশনার তিনটি পুরসভার ভোট বাতিল করবেন। তিনি কী সিদ্ধান্ত নেন, দেখা যাক!’’

তিনটি পুরসভায় আজ, বৃহস্পতিবার কোনও বুথে পুনর্নির্বাচন হচ্ছে না— এইটুকু ছাড়া আলাপনবাবু বিশেষ কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি কী করেন, তার জন্য একটু মেপে এগোতে চাইছে বিজেপি-ও। সেই কারণেই আজ শহরে তাদের ‘প্রতিবাদ মিছিল’ স্থগিত রাখা হয়েছে। যদিও নতুন কমিশনারে খুব আশাবাদী হওয়ার কারণও তারা দেখছে না। বিজেপি-র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘সংবাদমাধ্যম থেকে জানলাম, কমিশনের নথি শাসক দলের নেতারা হাতে নিয়ে কমিশনারকে শাসিয়ে এসেছেন! সাংবিধানিক ব্যবস্থার আর অস্তিত্ব থাকছে না এখানে। আর নতুন কমিশনারের প্রথম দিনের বক্তব্যে মনে হচ্ছে, নিজের বিশ্বাসযোগ্যতায় নিজেই প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছেন!’’

বিরোধীদের আক্রমণের মুখেও শাসক দলের নেতৃত্ব অবশ্য অনুশোচনায় নারাজ! কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামেরা অভিযোগ করেছে, শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা সুশান্তবাবুর সঙ্গে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, সেটাও তাঁর পদত্যাগের বড় কারণ। সেই অভিযোগ ‘অসত্য’ বলে উড়িয়ে দিয়ে বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, ‘‘ভব্যতা নষ্ট করে কোনও কথা বলিনি। যে চার জন গিয়েছিলাম, আমি নিজেও ছিলাম ওই দলে। স্কুলে পড়া কোনও ছেলে সেখানে যায়নি!’’ তাঁদের তরফে কোনও রকম ‘চাপ’ সুশান্তবাবুকে দেওয়া হয়নি দাবি করে সুব্রতবাবুর আরও মন্তব্য, ‘‘মেজাজ বা নীতিবোধ হারাইনি আমরা। তবে আমাদের দাবিটা স্পষ্ট করে বলেছিলাম। তাতে কেউ পদত্যাগ বা পদলাভ করলে আমাদের কিছু করার নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE