Advertisement
১৯ মে ২০২৪
সবং-কাণ্ড

আদালত চত্বরে এসপি কেন, সরব বিরোধীরা

একে খুনের মামলায় ধৃতদের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করলেন না সরকারি কৌঁসুলি, অন্য দিকে সে মামলা চলাকালীন ঘণ্টা দু’য়েক আদালত চত্বরে হাজির জেলার পুলিশ সুপার—বুধবার এই দুই ঘটনাকে সামনে রেখে সবংয়ে কলেজ-ছাত্র খুনের ঘটনায় ফের সরব বিরোধীরা।

সবংয়ে ছাত্র খুনের মামলা চলাকালীন মেদিনীপুর আদালত চত্বরে পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র।

সবংয়ে ছাত্র খুনের মামলা চলাকালীন মেদিনীপুর আদালত চত্বরে পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

একে খুনের মামলায় ধৃতদের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করলেন না সরকারি কৌঁসুলি, অন্য দিকে সে মামলা চলাকালীন ঘণ্টা দু’য়েক আদালত চত্বরে হাজির জেলার পুলিশ সুপার—বুধবার এই দুই ঘটনাকে সামনে রেখে সবংয়ে কলেজ-ছাত্র খুনের ঘটনায় ফের সরব বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, ধৃতেরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) লোক হওয়ায় তাঁদের বাঁচাতে মরিয়া পুলিশ-প্রশাসন। নিহতের পরিবারেরও ক্ষোভ, তদন্তের নামে প্রহসন চলছে। যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ এবং তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

গত শুক্রবার সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র পরিষদের কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে কলেজ চত্বরেই পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠার পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী (পুলিশমন্ত্রীও) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘নিজেদের মধ্যে গোলমালে’র জেরেই এই ঘটনা। শনিবার ধৃতদের চার দিন হেফাজতে পেয়েও, সেই সন্ধ্যাতেই সাংবাদিক বৈঠক করে সেই ‘তত্ত্বেই’ প্রায় সিলমোহর দেন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। বলেন, কলেজের সিসিটিভি-র ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, একটি দলই দাপাচ্ছে। এমনকী, নিহত ছাত্রকে সেই দলের সঙ্গে মিশে হুমকি দিতে দেখা গিয়েছে বলেও দাবি করেন। এর পরেই বিতর্কের ঝড় ওঠে, যা এ দিন আদালতের ভিতর ও বাইরের ঘটনাকে ঘিরে নতুন ইন্ধন পেয়েছে।

মেদিনীপুরের সিজেএম মঞ্জুশ্রী মণ্ডলের এজলাসে মামলার শুনানি ছিল এ দিন। ধৃত তিন টিএমসিপি-কর্মী সানোয়ার আলি, অসীম মাইতি এবং শেখ মুন্না আলির পক্ষে দুই আইনজীবীর এক জন মেদিনীপুরের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর মৃণাল চৌধুরী, অন্য জন তৃণমূল লিগাল সেল-এর জেলা সভাপতি গৌতম মল্লিক। তাঁরা জামিনের আবেদন করেন। মৃণালবাবু বলেন, “সবং কলেজের ঘটনায় যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁরাও কিন্তু জখম হয়েছিলেন।’’ সত্যোদ্ঘাটনে সিসিটিভি-র ফুটেজ এবং কলেজের এক শিক্ষাকর্মীর গোপন জবানবন্দি দেখতে আদালতে আর্জি জানান তিনি।

পুলিশ ধৃতদের আর হেফাজতে চায়নি। জামিনের আবেদনের বিরোধিতা না করে সরকারি কৌঁসুলি সৈয়দ নাজিম হাবিব দাবি করেন, তদন্ত ঠিক পথেই এগোচ্ছে। ধৃতেরা পুলিশকে সব রকম সহযোগিতা করেছেন। আদালতে তাঁর মন্তব্য, “ফুটেজ দেখে আদালত জামিনের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করুক।”

কেন ধৃতদের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা হল না? সরকারি আইনজীবী পরে বলেন, “পুলিশ-প্রশাসনের বক্তব্য ঠিক বলে মনে হচ্ছে।” বিচারক অবশ্য ধৃতদের ১৪ দিন জেল-হাজতে পাঠান।

শুনানি চলাকালীন আদালত চত্বরে প্রায় দু’ঘণ্টা ছিলেন পুলিশ সুপার। সবং কলেজের শিক্ষাকর্মী ইন্দ্রজিৎ ঘোড়ই এ দিন মেদিনীপুরের এসিজেএম (৫ম) আদালতে গোপন জবানবন্দি দেন। দুপুর ২টো নাগাদ ইন্দ্রজিৎবাবু আদালতে পৌঁছনোর মিনিট তিনেকের মধ্যেই সেখানে ঢোকে পুলিশ সুপারের গাড়ি। আদালতের দোতলায় জবানবন্দি-পর্ব চলাকালীন একতলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশ সুপার। আদালত চত্বরে তিনি সাংবাদিকদের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেননি। ফোন করা হলে ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসের।

বিরোধীদের বক্তব্য, অনেক মামলা এমন আছে, যেখানে পুলিশ সুপারকে তলব করা হলেও তিনি চট করে আদালতে যান না। এ ক্ষেত্রে এসপি নিজে থেকে শুনানি চলাকালীন আদালত চত্বরে হাজির হলেন কেন? সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা সাংসদ মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘ভারতী ঘোষের মতো এসপি-রা নতুন ‘পুলিশ কোড’ তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর মনমতো মামলা সাজাচ্ছেন।’’ সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার দাবি, ‘‘অপরাধীদের সাজা হোক, তৃণমূল এটা চাইছে না। পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশও সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।’’ প্রায় একই সুরে নিহত ছাত্রের দাদা নারায়ণ জানা বলেন, ‘‘পুলিশ সুপার যে ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে সব তদারক করছেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছে পুলিশ আসলে ধৃতদের ছেড়ে দিতে চাইছে।’’

সবংয়ের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সাংবাদমাধ্যম প্রতিক্রিয়া চাওয়ায় এ দিন কলকাতায় কৃতী পড়ুয়াদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিন্তার কোনও কারণ নেই। তোমরা চার-পাঁচটা কলেজ নিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছ। হাজারটা কলেজ ঘুরে দেখো। খারাপ কাজ দেখানো অবশ্যই দরকার। কিন্তু ভাল কাজও দেখানোও দরকার।’’ তাই বলে কলেজে ছাত্র-হত্যার মতো ঘটনাও সংবাদমাধ্যমের নজর এড়াবে? পার্থবাবুর মন্তব্য: ‘‘তাতে কী হয়েছে? এমন করছ, যেন সব চন্দ্রালোকে রয়েছ। যেন এর আগে মৃত্যু হয়নি।’’

সবংয়ের দাঁকড়দা-বাটিটাকি গ্রামে নিহত কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়িতে এ দিন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান-সহ ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরাম’-এর সদস্যরা গিয়েছিলেন। মান্নানের মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন ও পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ যে আচরণ করছেন, তাতে সিবিআই তদন্ত না হলে সত্য জানা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE