Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Indian Museum

Park Street Museum Shootout: সহকর্মীদের ‘চক্রান্তের’ ক্ষোভেই কি পরপর গুলি

শনিবার রাতে কলকাতার বুকে জাদুঘর সংলগ্ন ব্যারাকে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে এক সহকর্মীকে মেরে ফেলে অক্ষয়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২২ ০৫:৩৭
Share: Save:

অফিসে সহকর্মীদের আচরণের জন্য আত্মহত্যার কথা ভেবেছিল সে। রবিবার জেরার মুখে এমনটাই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ)-র হেড কনস্টেবল অক্ষয়কুমার মিশ্র। তার আরও দাবি, এ কথা সে স্ত্রীকেও জানিয়েছিল।

শনিবার রাতে কলকাতার বুকে জাদুঘর সংলগ্ন ব্যারাকে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে এক সহকর্মীকে মেরে ফেলে অক্ষয়। গুলিতে আহত হন এক অফিসার। অক্ষয়ের অভিযোগ, জুনে তাকে এই ইউনিটের অস্ত্রাগার পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে সে অখুশি ছিল। তার ধারণা হয়, তাকে ফাঁসানোর জন্যই এই ঝামেলার কাজ দেওয়া হয়েছিল। ষড়যন্ত্র করতে তার ঘুমোনোর ছবি তুলে অন্যত্র পাঠানো হয়েছে বলে অক্ষয়ের অভিযোগ।

এক দিকে ‘চক্রান্তের’ ক্ষোভ। আবার প্রশ্ন উঠছে, ছুটি না-পাওয়ার জেরেই কি এত রাগ? মানতে চাইছেন না বাহিনীর কর্তারা। জানানো হয়েছে, বাবা মারা যাওয়ার পরে এক মাস ছুটি পেয়েছিল অক্ষয়। তখন জম্মু-কাশ্মীরে ডিউটিতে ছিল সে। তার পরে, গত ২৫ এপ্রিল তাকে কলকাতায় এসে কাজে যোগ দিতে বলা হয়।

পুলিশের অনুমান, দীর্ঘদিন ধরে অক্ষয়কে উপহাস ও ঠাট্টা করা এবং ভয় দেখানোর জন্যই নির্দিষ্ট করে চার জনকে নিশানা করেছিল সে। শনিবার সুযোগ পেয়ে গুলি চালিয়ে দেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, শনিবারের ঘটনায় সে অনুতপ্ত। এমনকি এ বার তার পরিবারের দিনযাপন নিয়েও চিন্তা প্রকাশ করেছে অক্ষয়। মৃত এএসআই রঞ্জিতকুমার ষড়ঙ্গীর ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী তিনটি বুলেট তাঁর শরীরে ঢুকে বেরিয়ে গিয়েছে।

রবিবার নেতাজি সুভাষ মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন ব্যানার্জিপাড়া রোডে বটতলায় ষড়ঙ্গীর ভাড়াবাড়ির কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি কাউকে। নিহতের বাড়ি ঘিরে সিআইএসএফের কড়াকড়ি প্রসঙ্গে বাহিনীর এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে কিছু বন্দোবস্ত করা হয়েছিল মাত্র।’’ ময়না-তদন্তের পরে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে সিআইএসএফ জওয়ানেরা ষড়ঙ্গীর দেহ নিয়ে রওনা দেন ওড়িশার উদ্দেশে। পুরীর স্বর্গদ্বার শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য হওয়ার কথা।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, গুলি চালানো হয়েছে পরিকল্পনা করেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই ষড়ঙ্গী, জখম অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট, এক ইনস্পেক্টর এবং অন্য এক জওয়ানের উপরে ক্ষোভ ছিল অক্ষয়ের। তার উপরে শনিবার রোল কলের সময় দেরিতে আসায় তাকে তিরস্কার করেন এক অফিসার। রোল কল শেষ হতেই সেন্ট্রি পোস্টে থাকা জওয়ানের হাত থেকে একে-৪৭ কেড়ে নিয়ে ওই চার জনের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে অক্ষয়। একদম সামনে পড়ে যান ষড়ঙ্গী। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান তিনি। গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট সুবীর ঘোষের ডান হাতে গুলি ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। বাকি দু’জন গাছের আড়ালে ঢুকে রক্ষা পান। রবিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সুবীর জানান, তাঁর উপরে অক্ষয়ের রাগ থাকার কথা নয়।

পুলিশি জেরার মুখে অক্ষয়ের অভিযোগ, ডিউটির সময় কোনও ভাবে অসতর্ক হয়ে পড়লে ওই সহকর্মীরা সেই ছবি তুলে উচ্চপদস্থ কর্তাদের নজরে নিয়ে আসত। রবিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক ২১ অগস্ট পর্যন্ত অক্ষয়কে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে ফরেন্সিক বিভাগ। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ছবি বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, শনিবার ব্যারাকে অস্ত্রভান্ডারের দায়িত্বে থাকলেও অক্ষয় সেখান থেকে অস্ত্র না-নিয়ে সেন্ট্রির কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয়। ডিউটির জন্য ৯০ রাউন্ড গুলি থাকে তাদের কাছে। এর মধ্যে ওই নিরাপত্তারক্ষীর কাছে ছিল ৬০ রাউন্ড গুলি, যা অক্ষয় নিতে পারেনি। বন্দুকের মধ্যে থাকা ৩০ রাউন্ড গুলির মধ্যে ১৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে সে।

রঞ্জিতের ভাড়াবাড়ির ভিতরে কার্যত মাছি গলার জো নেই। মুখে কুলুপ এঁটেছেন বাড়ির মালিক থেকে দোতলা বাড়ির নীচের তলার দোকানদারও। স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর দুই আগে ওই বাড়ি ভাড়া নেন ওই অফিসার। একতলায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন ৫৮ বছর বয়সি রঞ্জিত। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তাঁর মৃত্যুর খবর পৌঁছয় ওই বাড়িতে। ওড়িশায় থাকা রঞ্জিতের ছেলেরা বার কয়েক কলকাতায় এলেও এখানে থাকতেন না বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। বাড়ির মালিকের জামাই সুমন্ত নাথ বলেন, ‘‘শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ আমরা ঘটনার কথা জানতে পারি।’’ রবিবার এসএসকেএম হাসপাতালে রঞ্জিতের দেহের ময়না-তদন্ত হলেও তাঁর পরিবারের কেউ আসেননি। হাসপাতালে তাঁর গাড়িচালক আকাশ বর্মণ বলেন, ‘‘গুলির আওয়াজ পেতেই পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। এ-দিক ও-দিক রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। পুলিশ ভিতরে ঢুকলে ওখান থেকে বেরিয়ে আসি। তার পরে কী হয়েছে, জানি না।’’

এ দিন সকাল থেকে অন্যান্য দিনের মতো দরজা খোলে জাদুঘরের। দুপুরের দিকে কিছুটা ভিড় দেখা যায়। সিআইএসএফ জওয়ানেরা থাকলেও কাউকেই অস্ত্র হাতে ডিউটি করতে দেখা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Museum Park Street Dharmatala Shootout
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE