অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে নীরব থাকলেন প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সম্প্রতি প্রাথমিকের মামলায় আদালতে পেশ করা সিবিআইয়ের চতুর্থ সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়’ নামে এক ব্যক্তির নাম রয়েছে। এবং তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বৃহস্পতিবার জানান, সিবিআই চার্জশিটে তাঁর নাম দিলেও বাবার নাম, ঠিকানা কিছুই দেয়নি। এই ‘ভাববাচ্যে’র জন্য সিবিআইককে কটাক্ষও করেন তিনি। আর শুক্রবার বিচার ভবনের সিবিআই বিশেষ আদালতে ওই মামলার শুনানি ছিল। সংবাদমাধ্যমের তরফে সুজয়কৃষ্ণকে একাধিকবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু টুঁ শব্দটি করেননি তিনি। এ দিন সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবী সোমনাথ সান্যাল বলেন, ‘‘জামিনের শর্ত অনুযায়ী মামলা সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে সুজয়কৃষ্ণ মন্তব্য করতে পারবেন না।’’
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, প্রাক্তন শাসক দলের যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরুণ হাজরা নামে এক মিডলম্যানের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। ওই চার্জশিটে শান্তনু, সুজয়কৃষ্ণ এবং আর এক অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের বৈঠকের একটি ‘অডিয়ো রেকর্ডিং’ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, তাতে সুজয়কৃষ্ণ ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে বলতে শোনা গিয়েছে যে, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৫ কোটি টাকা দাবি করেছেন। সাংসদ অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসু এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ প্রতিষ্ঠিতই করেনি সিবিআই। শুধুমাত্র নাম ব্যবহার করেছে। এটি একটি ষড়যন্ত্র।
এ দিন ওই মামলার শুনানিতে সিবিআইয়ের তরফে অভিযুক্তদের চার্জশিট ও পেনড্রাইভে নথি দেওয়া হয়। ওই মামলায় জামিনে মুক্ত কুন্তল ঘোষ, নীলাদ্রি ঘোষ, কৌশিক মাজি আদালতে সশরীরে হাজির হয়েছিলেন। জামিনে মুক্ত তাপস মণ্ডল নামে আর এক অভিযুক্ত অসুস্থ বলে তাঁর আইনজীবী আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। জেল হেফাজতে থাকা শাসক দলের প্রাক্তন যুব নেতা শান্তনু বন্দোপাধ্যায়, প্রোমোটার অয়ন শীল এবং সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন।
মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ দিন তিনি ভার্চুয়াল শুনানিতেও থাকতে পারেননি। বেসরকারি হাসপাতালে কিছু দিন চিকিৎসার পরে পার্থ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ফিরে এসেছেন বলেই সূত্রের খবর। এ দিন পার্থের আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী বলেন, ‘‘আমার মক্কেল (পার্থ) নির্দোষ এবং এই মামলায় জড়িত নন। তিনি খুবই অসুস্থ। জেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর দু'টি পা ফুলে গিয়েছে। এবং কাঁধে একটি গুরুতর সমস্যা রয়েছে। কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা এবং বার্ধক্যজনিত বেশ কিছু জটিল উপসর্গে আক্রান্ত তিনি। বেসরকারি হাসপাতালের তরফে দেওয়া পার্থের মেডিক্যাল রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হোক।’’ বেসরকারি হাসপাতালের মেডিক্যাল রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। এ দিন চতুর্থ সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে অভিযুক্ত মিডলম্যান অরুণ হাজরাকে সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ মার্চ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)