নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের আদালতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজিরা দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জীবনকৃষ্ণ সাহা প্রমুখ। সোমবারও কালো চশমা পরে, হাসপাতালের বেডে শুয়েই হাজিরা দিতে দেখা গেল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। আবার জানালেন, তিনি ‘নির্দোষ’! আরও অনেক কিছু বলতে গেলেন, কিন্তু থামতে হল বিচারকের বারণে।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নবম-দশম শ্রেণিতে নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় সোমবার আলিপুরে সিবিআই বিশেষ আদালতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির করানো হয়েছিল পার্থদের। সেখানে ফের চোখে কালো চশমা পরেই হাজিরা দিয়েছেন পার্থ। শুনানি চলাকালীন বেশির ভাগ সময়টাই হাসপাতালের বেডে শুয়ে, মোটা নথির পাতা উল্টে কাটিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী। আর তাঁর হয়ে সওয়াল করে গিয়েছেন আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী।
পার্থের আইনজীবীর দাবি, এই মামলায় মোট চারটি চার্জশিট জমা পড়েছে। প্রথম দিকের চার্জশিটে তাঁর মক্কেলের নাম ছিল না। অথচ শেষে গিয়ে দাবি করা হয়েছে, এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত পার্থ। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন পার্থের আইনজীবী। তাঁর দাবি, তৎকালীন মন্ত্রী হওয়ায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। নিরপেক্ষ কোনও সাক্ষীর বয়ানেও কখনও দাবি করা হয়নি যে, পার্থ বেআইনি ভাবে নিয়োগের সঙ্গে জড়িত। শুধুমাত্র এক জনের বয়ানের ভিত্তিতে তাঁকে অভিযুক্ত বলা হচ্ছে। পার্থকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনও করেন তাঁর আইনজীবী। তবে বিচারপতি বলেন, যেটুকু কেস ডায়েরি তিনি দেখেছেন, যে কোনও দফতরের আধিকারিকদের নিয়োগের ফাইল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং নিয়োগের ফাইল সরাসরি গিয়েছে এসএসসি দফতরে।
অন্য দিকে, নীলাদ্রি দাস, সুবীরেশ ভট্টাচার্যদের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত আদালতে জানান, তাঁরা সাক্ষীর নথি পাননি। সিবিআই জানায়, এই মুহূর্তে নথি প্রস্তুত নেই, মঙ্গলবার নথি দেওয়া হবে। তার আগে এসএসসি-র অন্য মামলাগুলির তদন্তকারীদের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। তখন সঞ্জয় জানতে চান, তবে কি তিনটি মামলাই এক? তা হলে তা লিখিত আকারে দেওয়া হোক।
এসএসসি-র নবম-দশমের মামলায় চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। বিচারক সমস্ত অভিযুক্তকে অভিযোগগুলি পড়ে শোনান। বিচারক বলেন, ‘‘আপনারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে ষড়যন্ত্র করে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। পরীক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রাপ্ত নম্বরকেও বিকৃত করা হয়েছে।’’ জীবনকৃষ্ণ সাহা, প্রসন্ন রায়-সহ একাধিক অভিযুক্তের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘‘আপনারা এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন। চাকরিপ্রার্থীদের প্রভাবিত করে ঘুষ দিতে বাধ্য করেছেন।’’ তা ছাড়া, কখনও ভুয়ো নিয়োগপত্র ব্যবহার করে, কখনও আবার বৈদ্যুতিন নথি জাল করে প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে বলেও জানান বিচারক। পার্থের উদ্দেশে বিচারক আরও বলেন, অশোক সাহা, শান্তিপ্রসাদ সিংহ, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে নিয়োগ করে অবৈধ কাজ করিয়েছেন তিনি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
যদিও পার্থ ফের দাবি করেন, তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। পার্থ বলেন, ‘‘আমি আপনার উপর আস্থা রাখছি। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। রোজ একই কথা বলব।’’ এর পর আরও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দেন বিচারক। বলেন, ‘‘আপনার আইনজীবী রয়েছেন, কিছু জানার থাকলে তাঁকে বলুন।’’ পাল্টা পার্থ বলেন, ‘‘তা হলে আমার কিছু বলার অধিকার রইল না?’’ বিচারক উত্তর দেন, ‘‘যখন সেই সময় আসবে, তখন বলবেন। এখন যতটুকু জানতে চাওয়া হয়েছে, ততটুকু বলুন।’’
নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২২ সালে পার্থকে গ্রেফতার করে ইডি। পরবর্তী কালে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-সহ একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। পরে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই-ও গ্রেফতার করে পার্থকে। পাশাপাশি, সিবিআইয়ের প্রাথমিক নিয়োগ মামলাতে নাম জড়ায় পার্থের। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তাঁকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই। সম্প্রতি সিবিআই এসএসসির নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের মামলায় চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে। গ্রুপ সি মামলাতেও আলিপুর আদালতে শেষ চার্জশিট জমা পড়েছে।
জানা গিয়েছে, ২০২২ সালে এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত শুরুর ৫১ দিনের মাথায় যে প্রথম চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই, তাতে পার্থ ছাড়াও নাম ছিল সমরজিৎ আচার্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, অশোককুমার সাহা, অ্যাডহক কমিটির সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, বেআইনি ভাবে নিযুক্ত প্রার্থী দীপঙ্কর ঘোষ, সুব্রত খাঁ, অক্ষয় মণি, ইদ্রিস আলি মোল্লা প্রমুখের। শেষ চার্জশিটে অবশ্য নতুন করে কারও নাম নেই। তবে কিছু নতুন তথ্যপ্রমাণ এবং নথি রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।