Advertisement
১৮ মে ২০২৪

অধ্যক্ষের অভাব মেটাতে দাওয়াই, ভাবনায় অর্থও

মুখের আবেদনে চিঁড়ে ভিজছে না। কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ পেতে এ বার তাই আর্থিক টোপ দিতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৮
Share: Save:

মুখের আবেদনে চিঁড়ে ভিজছে না। কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ পেতে এ বার তাই আর্থিক টোপ দিতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে!

রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলিতে অধ্যক্ষ পাওয়া যাচ্ছে না বলে স্বীকার করে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে এই সঙ্কট কাটিয়ে বেরোতে তাঁর দাওয়াই, অধ্যক্ষ পদের আর্থিক সুবিধা এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া। পাশাপাশি, পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া অন্যান্য যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা যাবে কি না, তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-কে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হবে।

সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলিতে অধ্যক্ষের সঙ্কট তৈরি হয়েছে অনেক দিন ধরেই। বিধানসভায় বৃহস্পতিবার স্কুল শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষা দফতরের বাজেট বিতর্কের শেষে জবাবি ভাষণ দেওয়ার পরে নিজের কক্ষে শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু জানান, ইতিমধ্যে সরকার ১২৬ জন অধ্যক্ষকে নিয়োগ করেছে। কিন্তু এখনও ১৭০টি অধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে। তার জন্য আবেদনপত্র এসেছে মাত্র ৭৫টি। পার্থবাবুর যুক্তি, কলেজ শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ হলে বেতন-ভাতা যে হেতু সামান্যই বাড়ে, ওই বাড়তি দায়িত্ব নিতে শিক্ষকদের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে। তাই আর্থিক সুবিধা বাড়িয়ে দিয়ে অধ্যক্ষ পদকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইছে শিক্ষা দফতর। সঙ্কটের আশু মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আরও আবেদনপত্র জমা পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে না। আপাতত যে ৭৫ জন আবেদন করেছেন, জুলাইয়ে তাঁদের ইন্টারভিউ শেষ করে অগস্টের মধ্যে নিয়োগ সেরে ফেলা হবে। তাতে অন্তত কিছু কলেজ অধ্যক্ষের অভাব থেকে মুক্তি পাবে।

এই সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা দফতরের। ভাবা হয়েছে, ইউজিসি-কে চিঠি দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করার অনুমতি চাওয়া হবে। কারণ, পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য আবেদনই করছেন না। যদিও ইউজিসি-র নিয়মে অধ্যক্ষের জন্য যে ন্যূনতম যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া আছে, সেখানে পিএইচডি থাকা বাধ্যতামূলক।

বিরোধীদের প্রশ্ন, বাম জমানাতেও কলেজ শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ হলে বেতন-ভাতা সামান্যই বাড়ত। তা হলে তখন অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে এত অনীহা দেখা যেত না কেন? আর রাজ্যে পিএইচডি ডিগ্রি-সম্পন্ন কলেজ শিক্ষকের অভাব নেই। তা হলে পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া অধ্যক্ষ নিয়োগ করার দরকার কী? বিরোধী বাম এবং কংগ্রেসের বক্তব্য, সমস্যাটা আসলে বেতন-ভাতা বা পিএইচডি ডিগ্রিতে নেই। তৃণমূল জমানায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, অধ্যক্ষদের উপরে আক্রমণ, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার ফলেই কলেজ শিক্ষকেরা অধ্যক্ষের পদে যোগ দিতে চাইছেন না। সরকার সেই বাস্তবকে আড়াল করতে অর্থ এবং ডিগ্রির তত্ত্ব দিচ্ছে বলে বিরোধীদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha chatterjee Teacher university
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE