E-Paper

মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই, খাবার পেয়ে চোখে জল

রাস্তাঘাট ভেঙে পাহাড় এবং ডুয়ার্সের অনেক এলাকার পরিস্থিতি এখনও বিপজ্জনক রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় আর্থ মুভার নামিয়ে প্রশাসন রাস্তা ঠিক করাচ্ছে। দুধিয়া সেতু ভেঙে থাকায় এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মিরিক।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৩০
বৃষ্টিতে বিপর্যয়। পাহাড়ে ভেসে গেল গাড়ি। রবিবার দার্জিলিঙের মিরিকে।

বৃষ্টিতে বিপর্যয়। পাহাড়ে ভেসে গেল গাড়ি। রবিবার দার্জিলিঙের মিরিকে। —নিজস্ব চিত্র।

বিপর্যয়ের তেরাত্তিরের পরেও অন্ধকার কাটছে না মিরিকের দুধিয়ার নিমা লামা, দীপেন সুব্বাদের জীবন থেকে। কেউ রয়েছেন ত্রাণ শিবিরে, কেউ ঠাঁই পেয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। দুর্যোগে চোখের সামনে ভেঙেছে বাড়ি। ধসেছে, কাদায় তলিয়েছে চাষের সামান্য জমি। কী ভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন, সে ব্যাপারে সাহায্য মিলবে কি না বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। এর মধ্যে পাহাড়ে বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। বিজনবাড়ি পুলবাজারের বাসিন্দা উপেন্দ্রকুমার রামের (২৮) দেহ এ দিন ভোরে ছোট রঙ্গিত নদী থেকে উদ্ধার হয়। সব মিলিয়ে শনিবার রাতের দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা ৩৭।

রাস্তাঘাট ভেঙে পাহাড় এবং ডুয়ার্সের অনেক এলাকার পরিস্থিতি এখনও বিপজ্জনক রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় আর্থ মুভার নামিয়ে প্রশাসন রাস্তা ঠিক করাচ্ছে। দুধিয়া সেতু ভেঙে থাকায় এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মিরিক। প্রশাসন সূত্রের খবর, পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় আড়াইশোর বেশি রাস্তা নষ্ট হয়েছে। সেগুলি মেরামতের চেষ্টা চলছে। বিজনবাড়ির পুলবাজার সেতু সংস্কার পূর্ত দফতর দ্রুত শুরু করবে বলে দাবি করেছে। গোটা পাহাড়ে তিনশোর বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত।

পাহাড়, ডুয়ার্সের অনেক এলাকায় পানীয় জল, খাবারের সমস্যা রয়েছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। অনেক জায়গায় মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা কাজ করছে না। সরকারি এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ‘কমিউনিটি কিচেন’ই এখনও ভরসা কয়েক হাজার মানুষের।

মিরিকের কাছে সুখিয়া ব্লকের মধ্যে তাবাকোশি পর্যটন-গ্রামের অস্তিত্ব কার্যত বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নতুন জায়গা হিসাবে পর্যটন মানচিত্রে উঠে আসছিল নদী, সবুজে ঘেরা, চা বাগানের বুকে এই জায়গা। ৫০টির মতো হোম-স্টে ছিল। বেশিরভাগ হোম-স্টে এখন ধংসস্তূপ।

দু’দিন কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পরে, বন্যা কবলিত জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার বামনডাঙা চা বাগানের সঙ্গে এ দিন নানা ভাবে যোগাযোগের চেষ্টা হয়। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভীন, পুলিশ সুপার উমেশ গণপত খণ্ডবহালে, গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন ‘আর্থ মুভার’ করে গাঠিয়া নদীর জলস্রোত পেরিয়ে সেখানে গিয়েছেন। চা বাগানের কারখানার ত্রাণ শিবিরে নিজেদের হাতে তৈরি খাবার পরিবেশন করেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার। নাগরাকাটার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ইরফান মোল্লা রবিবার জ়িপ লাইনে বামনডাঙা পৌঁছেছিলেন স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে। এ দিনও তিনি ট্রাক্টর করে বাগানে পৌঁছে স্বাস্থ্যশিবির করেন। খাবার পেয়ে চোখে জল বামনডাঙার রিনা ওরাওঁয়ের। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার প্রবল জলস্রোতের মধ্যে কোনও মতে পালিয়ে বেঁচেছি। কাল পর্যন্ত ত্রাণ পাইনি। কী খেয়ে থাকতে হয়েছে তার খোঁজ কে রেখেছে! আজ ত্রাণ পেলাম।”

এ দিন দুধিয়ায় যান মুখ্যমন্ত্রী। মিরিক, সুখিয়া থেকে ধসে মৃতদের বাড়ির লোকেদের সেখানে নিয়ে এসেছিল প্রশাসন। তাঁদের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেওয়া হয়। এ দিন সকালে সেখানে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব সৌরিনিতে ত্রাণ শিবিরে যান।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Flood in North Bengal Natural Disaster North Bengal North Bengal Weather

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy