Advertisement
০৬ মে ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

সুবিধা হয় ভাতায়, তবু আছে কাজের তাগিদও

রাজ্যে সরকারি প্রকল্পের ছড়াছড়ি। তার সুবিধা পান গ্রামের বহু মানুষ। সেই ছায়া কি পড়বে এ বারের গ্রামের ভোটে?

Amoti Roy

আমোতি রায়। ছবি: নারায়ণ দে।

পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩ ০৬:৩১
Share: Save:

এ গ্রামের কাছে মাথা উঁচিয়ে আছে শহর। এ গ্রামের গায়ে তাই শহুরে হাওয়া। পাকা, দোতলা বাড়ি, বাঁধানো রাস্তা, পায়ে পায়ে এমন আরও কিছু জড়িয়ে আছে এই গ্রামে। মাস পয়লায় তেমনই লাইন পড়ে শহরের ব্যাঙ্কে। অনেকেই আসেন ‘পাশবই আপডেট’ করাতে। যদি দেখেন টাকা এসে গিয়েছে, এক গাল হেসে ফিরে যান গ্রামের বাড়িতে। যদি দেখেন টাকা আসেনি, তখন আবার কোথায় ছুটতে হবে ভেবে কুঁচকে যায় ভুরু।

এই শহর আলিপুরদুয়ার। গ্রামটি হল শহরের কাছে বনচুকামারি পঞ্চায়েতের ঘাগড়া গ্রাম।

গ্রামের মূল পাকা সড়ক থেকে বাঁ দিকে চলে গিয়েছে একটি ছোট মাটির রাস্তা। বৃষ্টি ভেজা পথে জায়গায় জায়গায় জমে রয়েছে জল। এড়িয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ। কিন্তু সেই রাস্তা নিয়ে যত না ক্ষোভ, তার থেকে বেশি অভিযোগ বার্ধক্য ভাতা নিয়ে। সেই ভাতা নাকি নিয়মিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকে না।

গ্রামের কিছুটা এগোলে লক্ষ্মী বর্মণের বাড়ি। দাওয়ায় বসেছিলেন প্রৌঢ় লক্ষ্মী। বললেন, কিছুটা অনুযোগের সুরেই, “আমার স্ত্রী গীতা রায় বর্মণ তিন-তিন বার লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত পাননি।” কিছুটা ক্ষোভই ওঁর গলায়। বললেন, “আর আমরা লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদন করব না।”

সবাই অবশ্য এক ভাবে বিষয়টা দেখেন না। যেমন কানন রায়। নিঃসন্তান কাননের বাড়িতে রয়েছেন শুধু তাঁর স্বামী। কানন বলেন, “আমাদের সামান্য জমি রয়েছে। স্বামীকে তাই এই বয়সেও দিনমজুরি করতে হয়। সেই কাজ আবার সব সময় জোটে না। তাই সরকারি ভাতা আমাদের কাছে অন্তত ‘লক্ষ্মী’।” তিনি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ থেকে মাসে এক হাজার টাকা পান। কানন বললেন, “আমার স্বামী এক হাজার টাকা বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন। স্বামীর যখন কাজ থাকে না, তখন এই টাকাগুলোই আমাদের সংসার চালানোর একমাত্র ভরসা।” ভবেন রায়ের বড় সংসার। কিন্তু ছেলেরা সব আলাদা হাঁড়ি। তাই, ভবেনের কথায়, “আমরা বুড়ো-বুড়ি আলাদা খাই। তা লক্ষ্মীর ভান্ডার আর বার্ধক্য ভাতায় যে সাড়ে তিন হাজার টাকা ঘরে আসে, বিপদে আপদে তা কাজে দেয়।” ওঁদেরই পড়শি আমোতি রায়ের স্বামী রাজ্যের কৃষি পেনশন পাচ্ছেন। তবে আমোতির আক্ষেপ, “স্বামীর কৃষি পেনশন প্রতি মাসে সময়ে চলে এলেও, আমার বৃদ্ধভাতা পেতে অনেক সময় দেরি হয়।”

বনচুকামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় অর্ধেক ভোটার রাজবংশী সম্প্রদায়ের। তার বাইরে, সাধারণ ভোটার এবং আদিবাসী ভোটারও রয়েছেন এখানে। ঘাগড়া গ্রামটিও রাজবংশী প্রধান। একটি হিসাব বলছে, ১২০ নম্বর অংশে (পার্টে) এক হাজারের বেশি ভোটারের মধ্যে আটশোর বেশি ভোটার রাজবংশী। এলাকায় আদিবাসী ভোটার রয়েছেন পঞ্চাশের বেশি। আর সাধারণ ভোটার দু’শোর কাছাকাছি।

গ্রামের বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্যা, বিজেপির নমিতা রায় অধিকারী বলছিলেন, বিরোধী দল বলে তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ রাজ্য সরকারি কোনও প্রকল্পের সুবিধা নেননি। তাঁর দাবি, “বার বার ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে যাতায়াতই সার হয়েছে। অনেকের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর আবেদন গৃহীত হয়নি।’’ তবে বনচুকামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের দলনেতা রঞ্জিত ঘোষের দাবি, “ঘাগড়া-সহ গোটা বনচুকামারিতে হাতে গোনা কয়েক জন বাদে, প্রত্যেকেই রাজ্য সরকারের সমাজিক প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন।”

সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা পেয়েই কি সবাই খুশি? গ্রামের বাসিন্দা নন্দিতা আমিন বলছিলেন, “স্বামী অসুস্থ। জমানো টাকার সুদ আর লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়ে আমার সংসার চলে। ছেলের কথা বলায় কিছু সমস্যা রয়েছে। তবু চাই, সে যেন একটা কাজ পায়। তা হলে আমার লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রয়োজন থাকবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE