দার্জিলিঙের সিংমারির বাসিন্দা প্রমীলা ছেত্রীর (আসল নাম নয়) অস্ত্রোপচার হয়েছে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে। তাঁর পিত্তথলিতে থেকে পাথর বার করা হয়েছে। কিন্তু বন্ধ থাকায় তাঁর পরিবারের লোকজন আলাদা গাড়ি করে আসতে পারেননি। তাঁর সঙ্গেই অ্যাম্বুল্যান্সে গাদাগাদি করে শিলিগুড়িতে নেমেছিলেন পরিবারের চার জন। শনিবার অস্ত্রোপচারের পরে প্রমীলাদেবীর বাড়ির দু’জন নার্সিংহোমের সামনেই হন্তদন্ত হয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের চালকের সঙ্গে দরাদরি করে মোটা টাকা ভাড়া গুণে ফিরে গিয়েছেন। ৬২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা প্রমীলাদেবী বললেন, ‘‘কী করব! প্রতি পরিবার থেকে রোজ দু’জনকে মিছিলে যেতেই হবে। না হলে বাড়িতে ভাঙচুর হবে। লুঠপাটও হতে পারে।’’
আরও পড়ুন: রায়গঞ্জে বাম হাতই দেখছে নবান্ন
আবার চকবাজার লাগোয়া হরদাসহাট্টার এক বৃদ্ধ দম্পতির কথা ধরা যাক। ছেলে বেঙ্গালুরুতে চাকরি করছে। মেয়ে শিলিগুড়িতে বহুজাতিক প্রসাধনীর বিপণনে যুক্ত। এক মাস ধরে বন্ধ চলায় বাবা-মায়ের খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে তাঁদের নামিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন তরুণী কন্যা। কিন্তু, বাবা-মা জানিয়ে দিয়েছেন, পাহাড় ছেড়ে সমতলে গেলে জাতিবিদ্বেষী তকমা দিয়ে ঘরদোর লুঠপাট হয়ে যাবে। আগুনও ধরিয়ে দিতে পারে। হিলকার্ট রোডের অফিসে বসে দু-হাতে মুখ ঢেকে ওই তরুণী বললেন, ‘‘কী করি বলুন তো! বাবা-মা তিন দিন ধরে শুধু আলুসেদ্ধ-ভাত খাচ্ছেন। আটাও ফুরিয়ে গিয়েছে। পাঠাতে পারছি না। গেলে আমাকেও আন্দোলনে নামতে হবে।’’
শুধু তাঁরা নন। পাহাড়ের এমন আরও অনেকে একই ভয় পাচ্ছেন।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা অবশ্য এ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরি কিংবা যুব নেতা প্রকাশ গুরুঙ্গরা বারেবারেই দাবি করছেন, ‘‘পাহাড়ের সকলেই স্বেচ্ছায় গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আত্মত্যাগ করছেন।’’ কিন্তু সোনাদার এক তরুণী শিলিগুড়ির সেবক রোডের অফিসে বসে বললেন, ‘‘ক’দিন আগে বড় মাপের এক নেতা সোনাদা গিয়ে সেখানে কেন বড় আন্দোলন হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েক জনকে ধমকান।’’ ঘটনাচক্রে, এর পরেই রাতে পুলিশের গাড়ি আটকানোর সময়ে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এক যুবকের।
দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙের যে কয়েক হাজার তরুণ তরুণী শিলিগুড়িতে কর্মসূত্রে রয়েছেন, তাঁদের অনেকেই একান্তে এমন বিবরণ দিতে গিয়ে ভেঙে পড়ছেন। নাম প্রকাশিত হয়ে গেলে পাহাড়ে তাঁদের পরিবার আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
জিএনএলএফের আন্দোলনের সময়ে পাহাড় থেকে নেমে আর ফিরতে পারেননি গুরুঙ্গবস্তি লাগোয়া এলাকার একাধিক বাসিন্দা। কারণ, ঘরদোর ভেঙে, পুড়িয়ে জমি দখল হয়ে গিয়েছিল। তাই বুক ফাটলেও মুখ ফুটছে না দার্জিলিঙের অনেক বাসিন্দারই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy