Advertisement
E-Paper

বিশ্বজিতের জন্য কাঁদল সূর্যবৃন্দা

পুজোয় বোনের জন্য অনেক জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে কথা দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ ঘোড়ই। কিন্তু মঙ্গলবার তাঁর কফিনবন্দি দেহ ফিরল সাগরের সূর্যবৃন্দা পাড়ার বাড়িতে।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
শেষকৃত্যের পথে। নিজস্ব চিত্র।

শেষকৃত্যের পথে। নিজস্ব চিত্র।

পুজোয় বোনের জন্য অনেক জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে কথা দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ ঘোড়ই। কিন্তু মঙ্গলবার তাঁর কফিনবন্দি দেহ ফিরল সাগরের সূর্যবৃন্দা পাড়ার বাড়িতে।

উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হানায় নিহত জওয়ান বিশ্বজিতকে শেষবারের মতো দেখার জন্য এ দিন সকাল থেকেই এলাকায় ভিড় থিক থিক করছে। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সাগর হেলিপ্যাডে কফিনবন্দি দেহ নামে বিশ্বজিতের। ছেলেটিকে একবার দেখার জন্য সকাল ৭টা থেকে দাঁড়িয়ে এলাকার মানুষ।

জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো একটি গাড়িতে করে বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হয় শহিদের দেহ। সরু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে গ্রামের অনেক মহিলাই গাড়ির পিছন পিছন বেশ কিছুটা হাঁটলেন। চোখ মুছতে মুছতে এক মহিলা বলে উঠলেন, ‘‘কিছুদিন আগেও যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেল, কাকিমা, ভাল থেকো। আমি পুজোতে আসছি।’’ গ্রামের অনেক মহিলার মুখেই এ দিন শোনা গেল, ‘‘যারা এ কাজ করল তাদের শাস্তি চাই।’’

প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়িতে দেহ ঢুকল। টালির চালের মাটির দেওয়ালের বাড়িটিতে এ দিন ভিড়। মা রেখা ঘোড়ই ছেলের কফিনবন্দি দেহ দেখে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। বোন বুল্টি দাদাকে ছোঁয়ার জন্য কফিন খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন সেনাদের। দু’চোখ দিয়ে অঝরে জল পড়ছে দাদার। গ্রামের লোকেরা শহিদের কফিন একবারের জন্য ছোঁয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে এককোণে দাঁড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে কফিনের দিকে তাকিয়ে বাবা রবীন্দ্রনাথবাবু বললেন, ‘‘ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। সুযোগ থাকলে ছোট ছেলেকেও সেনাবাহিনীতে পাঠাব।’’

প্রায় মিনিট কুড়ি বাড়িতে দেহ রাখার পরে সেনাবাহিনী গঙ্গাসাগর মহাশ্মশানের দিকে রওনা দেওয়া হয়। সেখানে গান স্যালুট দিয়ে সম্মান জানানো হয় শহিদ জওয়ানকে।

এ দিন তাঁকে মালা দিয়ে প্রণাম জানান দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়, স্থানীয় বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা, পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী প্রমুখ। শোভনবাবু বলেন, ‘‘আমি বিশ্বজিতের বাবার কথায় অবাক। এই ঘটনার পরেও তিনি ফের বড় ছেলেকে দেশরক্ষার কাজে পাঠাতে চান।’’ এ দিন সাগরের একটি অস্থায়ী দমকল কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। য়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অমর শহিদ বিশ্বজিৎ ঘোড়ই (সাগর)।’ গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতের প্রধান হরিপদ মণ্ডল চান, কেন্দ্র ও রাজ্য দুই ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াক।

নতেন্দ্রনাথ হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিলেন বিশ্বজিৎ। ছোট থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তিন বার পরীক্ষা দেওয়ার পরে তাঁর স্বপ্নপূরণ হয় বলে জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিমলকুমার জানা। তবে গোটা গ্রামের মানুষ এখন গর্বিত তাঁদের আদরের বিশাকে (বিশ্বজিৎ) নিয়ে।

uri death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy