Advertisement
E-Paper

চিকেন’স নেক ঘেঁষে ত্রিভুজ এঁকে বুধবার বাংলায় জোড়া কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রীর, দুই জেলার জন্য হাজার কোটির প্রকল্প-শিলান্যাস

এক পাশে চিকেন’স নেক। অন্য পাশে ‘সেভেন সিস্টার্স’ অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য। ভারতের এই দু’টি ভূভাগের কথা সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নেতাদের মুখে বার বার শোনা যাচ্ছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ ১৬:২৯
PM Modi’s chopper to draw triangle besides Chicken’s Neck on Thursday as he visits Bengal and Sikkim with a bunch of programmes

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

রাত পোহালেই পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী। জোড়া কর্মসূচি নিয়ে বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে আসছেন নরেন্দ্র মোদী। আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডের কর্মসূচিস্থলে পৌঁছোনোর আগে তথাকথিত চিকেন’স নেক ঘেঁষে বৃহস্পতিবার ত্রিভূজ আঁকতে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর উড়ানপথ। মোদীর ‘হঠাৎ সফর’ ঘিরে এমনিতেই উত্তরবঙ্গ বিজেপিতে উৎসাহ তুঙ্গে। উত্তরের দুই জেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে প্রকল্পের শিলান্যাস করতে চলেছেন, ২০২৬ সালের নির্বাচনে তাকে প্রচারের ‘হাতিয়ার’ করার কথাও বিজেপি নেতৃত্ব ভেবে ফেলেছেন। তবে অনুপ্রবেশ সমস্যা রুখতে কোনও কঠোর পদক্ষেপের কথা মোদী বলেন কি না, সে দিকেও তাকিয়ে উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতা-কর্মীরা।

বিজেপি সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর যে সফরসূচি জানা যাচ্ছে, সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাগডোগরা বিমানঘাঁটিতে নামবে মোদীর বিমান। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী রওনা দেবেন সিকিমে। দু’দিক দিয়ে চিন-পরিবেষ্টিত পাহাড়ি রাজ্য সিকিম এখন ভারতভুক্তির ৫০ বছর উদ্‌যাপন করছে। প্রধানমন্ত্রীর সিকিম সফর তারই অঙ্গ। সিকিমে তিনি একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন করবেন। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মূর্তি উন্মোচনও করবেন। তার পরে হেলিকপ্টারেই পৌঁছোবেন আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে। অর্থাৎ চিকেন’স নেকের সামান্য উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নামছেন। তার পরে তাঁর হেলিকপ্টার নেপাল, চিন, ভুটান এবং বাংলাদেশের মাঝে ত্রিভুজাকার যাত্রাপথে চক্কর দেবে দিনভর। এক পাশে চিকেন’স নেক এবং অন্য পাশে ‘সেভেন সিস্টার্স’ অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য। ভারতের এই দু’টি ভূভাগের কথা সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নেতাদের মুখে বার বার শোনা যাচ্ছে। দু’টি ভূভাগেই ভারতের ‘কর্তৃত্ব’ এবং ‘নিয়ন্ত্রণ’ কতটা ‘দৃঢ়’ এবং ‘মসৃণ’, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে সেই ছবিও তুলে ধরা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।

দুপুর ২টো নাগাদ আলিপুরদুয়ারে পৌঁছোনোর কথা মোদীর। প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রথমে প্রশাসনিক মঞ্চে যাবেন তিনি। দুপুর ২টো ১৫ নাগাদ সেই মঞ্চ থেকে আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার জন্য ‘নগর গ্যাস সরবরাহ’ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক জানাচ্ছে, ওই প্রকল্প ১০১০ কোটি টাকার। তাতে দুই জেলায় আড়াই লক্ষ পরিবারকে পাইপলাইনের মাধ্যমে রান্নার গ্যাস সরবরাহ করা হবে। শতাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকেও পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করার বন্দোবস্ত হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটির আওতায় ওই দুই জেলায় ১৯টি সিএনজি স্টেশনও তৈরি হবে, যাতে সিএনজি চালিত যানবাহনে জ্বালানি ভরার সমস্যা কমে।

৩টে নাগাদ জনসভার মঞ্চে পৌঁছোবেন মোদী। সেই মঞ্চে মোদীর ভাষ্য কী হতে চলেছে, গোটা রাজ্যের বিজেপি কর্মীরা সে দিকে তাকিয়ে। প্যারেড গ্রাউন্ডে মোদীর জনসভার যাবতীয় ব্যবস্থাপনা দেখভাল করছেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণ এবং আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা। আলিপুরদুয়ার ছাড়াও জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, শিলিগুড়ি এবং দার্জিলিং সাংগঠনিক জেলা থেকে বড় সংখ্যায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মোদীর সভায় নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় চলছে। দুই দিনাজপুর এবং মালদহ থেকেও বেশ কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থক আলিপুরদুয়ারে পৌঁছোবেন। ফলে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বলার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ কোনও বার্তা থাকে কি না, অনেকেই তা দেখার অপেক্ষায়।

দীপক বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই আমাদের জানানো হয়, তিনি আলিপুরদুয়ার জেলায় সভা করবেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে দেশবাসীকে বার্তা দেওয়ার জন্য তিনি যে সব জায়গাকে বেছে নিচ্ছেন, তার মধ্যে যে আলিপুরদুয়ারের কথা ভেবেছেন, এটাই আমাদের কাছে বড় ব্যাপার।’’ প্রায় একই সুর শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষের গলায়ও। তিনি বলছেন, ‘‘প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গে আসাটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমরা তো আশাই করিনি, যে তিনি এই সময়ে আমাদের উত্তরবঙ্গে সভা করতে আসবেন। দ্বিতীয়ত, উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি, অবস্থান, সুবিধা-অসুবিধা প্রধানমন্ত্রীর নখদর্পণে। ফলে উত্তরবঙ্গে যখন আসছেন, তখন কী বার্তা দেওয়া দরকার, সেটা তিনি ভাল জানেন। তিনি যে বার্তা দিয়ে যাবেন, সেই পথ ধরে আমরা কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব।’’

দেশের বর্তমান সন্ধিক্ষণ নিয়ে কথা বলতে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফর স্থানীয় আবেগকে কিছুটা হলেও স্পর্শ করেছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গ শুধু ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের কাহিনি শোনার অপেক্ষায় নেই। প্রধানমন্ত্রী যখন আসছেন, তখন উত্তরবঙ্গের জন্যও বিশেষ কোনও বার্তা দিয়ে যাবেন, এমন আশাও রয়েছে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির উদ্যোগে বরাদ্দ হওয়া এমস হাসপাতাল শেষ পর্যন্ত রায়গঞ্জে হয়নি। দক্ষিণবঙ্গের কল্যাণীতে স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের জন্য আবার একটা এমস হাসপাতালের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী করবেন কি না, অনেকে সে দিকেও তাকিয়ে রয়েছেন। পাশাপাশিই তাঁরা দেখতে চান, অনুপ্রবেশ রোখার বিষয়ে কোনও কঠোর এবং কার্যকর পদক্ষেপের কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে শোনা যায় কি না। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ উত্তরবঙ্গের একটি সমস্যা, যা সমাধানে বিএসএফের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি নেতারাই বার বার অভিযোগ করছেন যে, অনুপ্রবেশের জেরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় জনবিন্যাসও বদলে গিয়েছে। সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেন কি না, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে।

PM Narendra Modi West Bengal Politics Bengal BJP Chicken’s Neck Seven Sisters Operation Sindoor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy