Advertisement
E-Paper

মোদীর ভাষণে এ বার ক্ষুদিরাম, বীরগাথার সবিস্তার বিবরণও! তৃণমূল বলছে ‘এ মনের কথা নয়’, কী বলছে বাংলার বিজেপি

মোদীর কথায়, ‘‘ভোরবেলা, বিহারের মুজফ্ফরপুর শহর। তারিখ ১১ অগস্ট, ১৯০৮। সব গলি, সব মোড়, সব গতিবিধি তখন যেন থমকে গিয়েছিল। সাধারণ মানুষের চোখে জল ছিল, কিন্তু মনে আগুন ছিল। তাঁরা একটা জেল ঘিরে রেখেছিলেন, যেখানে একজন ১৮ বছরের যুবক ইংরেজের বিরুদ্ধে নিজের দেশপ্রেম ব্যক্ত করার মূল্য চোকাচ্ছিলেন।’’

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ২০:০৮
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ক্ষুদিরাম বসু।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ক্ষুদিরাম বসু। — ফাইল চিত্র।

বিনায়ক দামোদর সাভারকরের নাম নয়, শোনা গেল ক্ষুদিরাম বসুর নাম। ঠিক যেমন ‘জয় শ্রী রামে’র পরিবর্তে শোনা গিয়েছিল ‘জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা’।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে রবিবার আরও এক বার বাংলার গৌরবের উল্লেখ। যদিও শহিদ ক্ষুদিরামকে শুধু ‘বাংলার গৌরব’ হিসেবে উল্লেখ করেননি মোদী। বরং গোটা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘আত্মবলিদানের’ অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবেই সে নাম শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাতে’। কিন্তু নেতাজির মতো সর্বভারতীয় স্তরের নেতা ছাড়া অন্য কোনও বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথা এত বিশদে মোদী আগে কখনও কোনও ভাষণে উল্লেখ করেছেন কি না, বঙ্গ বিজেপির সামনের সারির নেতাদের অনেকেও তা মনে করতে পারছেন না।

প্রসঙ্গ ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অগস্ট মাসের গুরুত্ব। এ বছরের অগস্ট শুরুর কয়েক দিন আগে সম্প্রচারিত ‘মন কি বাত’ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অগস্ট মাসে কোন কোন মাইলফলক ঘটনা ঘটেছে। তাতে ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের উল্লেখ যেমন থেকেছে, তেমনই ১৪ অগস্ট (বিজেপি পালিত) ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’ বা ৭ অগস্ট স্বদেশি আন্দোলন শুরুর কথাও শোনা গিয়েছে। কিন্তু গোটা প্রসঙ্গের অবতারণা মোদী করেন ‘১১ অগস্ট, ১৯০৮’ তারিখের কথা উল্লেখ করে। যে দিন বিহারের মুজফ্ফরপুর কারাগারে ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়েছিল।

মোদীর কথায়, ‘‘আপনারা কল্পনা করুন, একেবারে ভোরবেলা, বিহারের মুজফ্ফরপুর শহর। তারিখ ১১ অগস্ট, ১৯০৮। সব গলি, সব মোড়, সব গতিবিধি তখন যেন থমকে গিয়েছিল। সাধারণ মানুষের চোখে জল ছিল, কিন্তু মনে আগুন ছিল। তাঁরা একটা জেল ঘিরে রেখেছিলেন, যেখানে একজন ১৮ বছরের যুবক ইংরেজের বিরুদ্ধে নিজের দেশপ্রেম ব্যক্ত করার মূল্য চোকাচ্ছিলেন। জেলের ভিতরে ইংরেজ আধিকারিক সেই যুবককে ফাঁসি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।’’ ফাঁসির আগের মুহুর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘তাঁর (ক্ষুদিরামের) মুখে কোনও ভয়ের ছাপ ছিল না, বরং গর্বে পরিপূর্ণ ছিল, যে গর্ব দেশের জন্য প্রাণদানকারীদের থাকে। সেই বীর, সেই সাহসী যুবক ছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। মাত্র ১৮ বছরের বয়সে তিনি সেই সাহস দেখিয়েছিলেন, যা পুরো দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।’’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘তখন সংবাদপত্রও লিখেছিল, ক্ষুদিরাম বসু যখন ফাঁসির দড়ির দিকে এগোচ্ছিলেন, তখন তাঁর মুখে হাসি ছিল।’’

বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীর আত্মবলিদান সম্পর্কে এই সবিস্তার উল্লেখের মাধ্যমেই গোটা স্বাধীনতা সংগ্রামের মহাত্ম্য বর্ণনায় প্রবেশ করেন মোদী। বলেন, ‘‘এ রকমই অগণিত বলিদানের পরে, বহু বছরের তপস্যার পরে, আমাদের স্বাধীনতা এসেছিল। যাঁরা দেশ অন্ত প্রাণ ছিলেন, তাঁরা নিজেদের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার আন্দোলনকে সিঞ্চন করেছিলেন।’’

দেশের প্রধানমন্ত্রীর কোনও একটি ভাষণে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মবলিদানের দৃষ্টান্ত হিসেবে একজন মাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথা এত বিশদে উঠে আসছে এবং তিনি একজন বাঙালি, এমন ঘটনা আগে ঘটেছে কি না, অনেকেই তা মনে করতে পারেননি। তৃণমূল এর মধ্যে ‘ভোট পাওয়ার কৌশল’ দেখছে।

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘প্রথমত, ওটা মোদীজির মন কি বাত নয়। কারণ মোদীজির মনের কথা আমরা জানতে পারি না। মোদীজি তো অন্য কারও লিখে দেওয়া ভাষণ টেলিপ্রম্পটার দেখে পড়েন। তাই ওটা আসলে তাঁর হোমওয়ার্কের প্রতিফলন, যিনি ওই ভাষণ লিখে দিয়েছেন।’’ কুণালের কথায়, ‘‘গোটা দেশে বাংলা এবং বাঙালির উপরে অত্যাচার করতে গিয়ে বিজেপি ফেঁসে গিয়েছে। তাই এখন এই সব ভাষণ লিখে সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’

লোকসভায় তৃণমূলের উপনেতা কাকলি ঘোষ দস্তিদারের কথায়, ‘‘ওঁরা (বিজেপি বা আরএসএস) স্বাধীনতা সংগ্রামে ছিলেন না। দেশের জাতীয় পতাকা সম্পর্কে ওঁদের ভিন্ন বক্তব্য ছিল। জাতীয় সঙ্গীত যখন বাজছে, তখন প্রধানমন্ত্রী হাঁটছেন, এমন দৃশ্য রাশিয়ায় তৈরি হয়েছিল। সুতরাং জাতীয়তাবোধ বলতে যা বোঝায়, তা ওঁদের নেই।’’ মোদীর ভাষণে ক্ষুদিরামের অত্মবলিদানের উল্লেখ সম্পর্কে তাই কাকলি বলছেন, ‘‘এগুলো সবই লোকদেখানো, মানুষকে ভুল বোঝানো এবং ভোট পাওয়ার কৌশল।’’

গত ১৮ জুলাই দুর্গাপুরের জনসভায় ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানের বদলে ‘জয় মা কালী-জয় মা দুর্গা’ বলে মোদী বাঙালিয়ানা অনুসরণের ‘ব্যর্থ প্রয়াস’ করেছেন বলে তৃণমূল বার বার তোপ দাগছিল। রবিবার স্বাধীনতা সংগ্রামীর বীরগাথা নিয়ে মোদীর চর্চাও ওই ‘জয় মা কালী-জয় মা দুর্গা’র পরবর্তী পর্ব বলেই তৃণমূলের অনেকের দাবি।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য তৃণমূলের ‘কৌশল’-কটাক্ষ নস্যাৎ করছেন। তিনি বলছেন, ‘‘ক্ষুদিরামকে যাঁরা ভুলিয়ে দিয়েছেন, রাসবিহারী বসু, মাস্টারদা সূর্য সেন, বিনয়-বাদল-দীনেশ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বাঘা যতীনকে যাঁরা ভুলিয়ে দিয়েছেন, তাঁরাই আজ ক্ষুদিরামের আত্মবলিদানের কথা দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখে শুনলে কষ্ট পাচ্ছেন।’’ শমীকের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কোথাও জয় মা কালী-জয় মা দুর্গা বলেছেন আর আজ শহিদ ক্ষুদিরামের কথা উল্লেখ করেছেন, এই দুটোকে জুড়ে দিয়ে যাঁরা এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজার চেষ্টা করছেন, তাঁদের আচরণ বা মতামত দুর্ভাগ্যজনক।’’

Prime Minister Narendra Modi Man Ki Baat Kshudiram Bose Freedom Fighter Indian Freedom Struggle BJP AITC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy