রাজ্জাক সর্দার খুনের মামলায় মূল অভিযুক্ত ইয়ার আলি সর্দার। শনিবার। ছবি: সামসুল হুদা।
ভাইফোঁটার দিনে ভাঙড়ে জোড়া খুনের ঘটনায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত দিলীপ মণ্ডল ওরফে দিল্লে ওরফে রাজুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার কেএলসি থানার উশপাড়া থেকে তাকে ধরা হয়। তবে তার আগে উশপাড়াতেই তল্লাশি চলাকালীন শুক্রবার রাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আরাবুল ইসলাম-বিরোধী আর এক তৃণমূল নেতা খুনের প্রধান অভিযুক্ত ইয়ার আলি সর্দার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায় খুন হন ভাঙড়-১ ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি তথা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রাজ্জাক সর্দার। রাজ্জাক খুনে খোঁজা হচ্ছিল ইয়ার আলিকে।
দিলীপকে শনিবার বারুইপুর আদালতে আনা হলে বিচারক ৬ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, দিলীপ এবং ইয়ার আলির সুবাদে জোড়া খুনের মামলার তদন্তে দ্রুত এগোনোর আশায় রয়েছেন তারা।
গত শনিবার ভাঙড়ের কেএলসি থানার বেঁওতা গ্রামে রমেশ ঘোষাল ও বাপন মণ্ডল নামে দুই তৃণমূল কর্মী খুন হন। রমেশ-হত্যায় জড়িত থাকা এবং পরে থানায় গিয়ে রীতিমতো ‘দাদাগিরি’ করে অভিযোগকারীদের উপরে চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ ওঠে আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। দলে বিরোধী গোষ্ঠীর উপরে চাপ বজায় রাখতে গিয়ে আরাবুল ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেছিল পুলিশের একাংশ। ইতিমধ্যে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত ওই নেতার বিরুদ্ধে আদালতের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছে রমেশের পরিবার।
শুক্রবার নিজস্ব সূত্রে পুলিশ খবর পায় উশপাড়ায় লুকিয়ে রয়েছে দিলীপ। তার বিরুদ্ধে তোলাবাজি, খুন-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, বেঁওতা-১ পঞ্চায়েতের বর্তমান তৃণমূল প্রধান সৌমেন নস্করের অনুগামী বলে সে এলাকায় পরিচিত। রাতে তার খোঁজে তল্লাশি চলার সময় পুলিশের কাছে খবর আসে এলাকায় ইয়ার আলিকে দেখা গিয়েছে। পুলিশ খোঁজ করছে খবর পেলে সে পালাতে পারে বুঝে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীর ভেক ধরে এক পুলিশকর্মী তার উপরে নজর রাখেন। তবে অন্য পুলিশকর্মীরা সেখানে হাজির হওয়ার আগে খবর পৌঁছে যায় ইয়ার আলির কাছে। সে পালায়। তার দুই শ্যালক তাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ ইয়ার আলিকে ধরে ফেলে।
ভাঙড়ে জোড়া খুনের ঘটনায় অন্যতম মূল উপযুক্ত দিলীপ মণ্ডল ওরফে দিল্লে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্জাক খুন ছাড়াও, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুর থানা এলাকায় ডাকাতির সময় এক বাড়ির মালিককে খুন, ভাঙড়ের চন্দনেশ্বরে সিপিএম নেতা কালীপদ নস্কর-সহ একাধিক খুনের ঘটনাতেও অভিযুক্ত ইয়ার আলি। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, জেরায় ওই লোকটি পুলিশকে জানিয়েছে, আরাবুল-বিরোধী এক তৃণমূল নেতাকে সরানোর মতলবও ছিল তার। আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ১২ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
ওই কর্তাটি বলেন, “আদালতে হাজির করানোর আগে ইয়ার আলির কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ভাঙড়ের জোড়া খুনের মামলায় অভিযুক্ত দিলীপকেও পুলিশ হেফাজতে পেয়েছে। সব মিলিয়ে জোড়া খুনের তদন্তে দ্রুত এগনোর আশা করা হচ্ছে।”
আরাবুল অবশ্য এ দিন ভাঙড়ের গাজিপুরের বাড়ি থেকে বেরনোননি। ঘনিষ্ঠদের দাবি, আইনি পরামর্শ নিতে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy