Advertisement
E-Paper

কোন এটিএমে ভরা হচ্ছে টাকা, তক্কে তক্কে পুলিশও

সুনসান শীতের সন্ধে। এটিএমে টাকা ভরে বেরোলেন এক ব্যাঙ্ককর্মী। দরজাটা খুলতেই এক কনস্টেবল হেসে জানতে চান, ‘‘স্যার, সব পিঙ্ক?’’

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:২৬

সুনসান শীতের সন্ধে। এটিএমে টাকা ভরে বেরোলেন এক ব্যাঙ্ককর্মী। দরজাটা খুলতেই এক কনস্টেবল হেসে জানতে চান, ‘‘স্যার, সব পিঙ্ক?’’

ব্যাঙ্ককর্মীর ঘাড় নেড়ে না বলতে যতটুকু দেরি। কনস্টেবল ঝট করে ঢুকে গেলেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই হাতে বেশ কয়েকটা নোট। কাকে যেন হাসি মুখে ফোন করে বললেন, ‘‘হ্যাঁ। স্যার। সব একশোয় পেয়ে গিয়েছি।’’

কাকে ফোন করছিলেন? উত্তর নেই। ইতিমধ্যে ওই সন্ধে-রাতেই এটিএমের সামনে লাইন জমতে শুরু করেছে। মুখে মুখে খবর ছড়িয়ে যাচ্ছে দ্রুত। তবে টহলদারি ভ্যানে যে ক’জন পুলিশকর্মী ছিলেন, তাঁরা তত ক্ষণে এক এক করে গিয়ে চটপট টাকা তুলে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁদেরই একজন শেষ পর্যন্ত একটু দাঁড়িয়ে বলে গেলেন, ‘‘বুঝতেই তো পারছেন। আমাদেরও সংসার রয়েছে। স্যারেদেরও রয়েছে।’’

একে তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভিআইপি ডিউটি। তার উপরে মাস খানেক হল ব্যাঙ্ক, এটিএম আর পাঁচটা লাইনের ঝঞ্ঝাট সামাল দিতেই দিন কাবার। তা হলে তাঁরা টাকা তুলবেন কখন? যখন ডিউটি নেই, তখন লাইনে দাঁড়িয়ে তুললেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটিএমে মিলছে গোলাপি দু’হাজার টাকার নোট। তাই ভেবেচিন্তে উপায় বের করেছে শিলিগুড়ির পুলিশ বাহিনী। গত এক মাস ধরে সন্ধে নামলে নজরদারির সময় অনেক টহলদারি জিপই তক্কে তক্কে থাকছে। চোখ রাখছে এটিএমের উপরে। আর গাড়ি পৌঁছলেই শুরু হচ্ছে ‘মেসেজ’ চালাচালি। সেই মতো পর্যায়ক্রমে এটিএমে গিয়ে টাকা তুলতে ছুটতে দেখা যাচ্ছে পুলিশের অনেক অফিসার-কর্মীদের।

শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক অফিসারের কথায়, দিনের বেলা হাজারটা ঝঞ্ঝাট। তা-ও সাদা পোশাকে লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার টাকা তুলেছেন। কিন্তু সহজ উপায়, সন্ধে-রাতের এটিএম।

এমনিতেই কোন এটিএমে কখন টাকা ভরা হবে, তার আগাম খবর থাকে পুলিশের কাছে। এখন সে খবর পাওয়া মাত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশের নানা স্তরে। তারপরে যে সন্ধ্যায় যাঁরা টহলদারি ভ্যানে, সে সন্ধ্যায় তাঁদের উপরে ‘দায়িত্ব’ টাকা তোলার। এলাকার উপরে খেয়াল রাখার পাশাপাশি এটিএমের উপরেও থাকছে কড়া নজর। তাই বুধবার রাত আটটাতেও শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে একটি এটিএমের সামনে নগদ ভরার গাড়ি দাঁড়াতেই, দেখা গেল টহলদারি একটি পুলিশ ভ্যানকেও। টাকা ভরার পরেই টহলরত পুলিশরা পালা করে এটিএমে ঢুকেছেন। খবর পেয়ে ক’জন অফিসারও এসে টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছেন। এক জন পুলিশকর্মী জানালেন, এটিএমে টাকা ভরার পরেই ছুটে গিয়ে টাকাটা তুলতে পেরেছিলেন বলে রাতের ডিউটিতে চা-টা অন্তত খেতে পারছেন। বললেন, ‘‘পুলিশ বলে ধারে চা তো আর খেতে পারি না। আবার শীতের রাতে কয়েকবার চা-টুকু না হলেও চলে না। কিন্তু খুচরো পাই কোথায় বলুন তো।’’

এক পুলিশ কর্তার কথায়, মাসপয়লা থেকে টানা সাত দিন রোজ রাতে এটিএমে গিয়ে গড়ে আড়াই হাজার টাকা করে তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আরে কার্ডে আর কতটা হয়? তারপরে সব ওই গোলাপি নোট। কোথায় ভাঙাই বলুন তো?’’

ATM machines Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy