Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নারীসুরক্ষায় ব্যর্থ হয়েই কি পুলিশি ফতোয়া, বিতর্ক

রাজ্য পুলিশ মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ বলেই নীতি-পুলিশি করতে নেমেছে বলে মন্তব্য করলেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন। ইভটিজিং এবং অন্যান্য অপরাধ রুখতে সম্প্রতি বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি ডিডি কঙ্করপ্রসাদ বারুই নাগরিকদের জন্য কিছু নিদান দিয়েছেন সরকারি ওয়েবসাইটে। সেখানে মেয়েদের ভদ্র পোশাক পরা, ভদ্র ব্যবহার করা, রাতে না-বেরনো, ভিড় ট্রাম-বাসে না-চড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কঙ্করপ্রসাদ বারুই

কঙ্করপ্রসাদ বারুই

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

রাজ্য পুলিশ মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ বলেই নীতি-পুলিশি করতে নেমেছে বলে মন্তব্য করলেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন।

ইভটিজিং এবং অন্যান্য অপরাধ রুখতে সম্প্রতি বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি ডিডি কঙ্করপ্রসাদ বারুই নাগরিকদের জন্য কিছু নিদান দিয়েছেন সরকারি ওয়েবসাইটে। সেখানে মেয়েদের ভদ্র পোশাক পরা, ভদ্র ব্যবহার করা, রাতে না-বেরনো, ভিড় ট্রাম-বাসে না-চড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সমাজের নানা স্তরের মানুষ। ক্ষোভ গোপন করেননি রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রধানও। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ অপারগ বলেই নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে এই সব করছে।”

কঙ্করবাবুর নিজের অবশ্য ব্যাখ্যা, সাধারণ কিছু প্রস্তাবকে অহেতুক পোশাকবিধি বা ফতোয়া নাম দিয়ে জটিল করা হচ্ছে। মেয়েদের পোশাকের উপর নিয়ন্ত্রণ বসানোর উদ্দেশ্য পুলিশের নেই। তাঁরা যেমন খুশি সাজতে পারেন। অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল মাত্র। কঙ্করবাবুর কথায়, “মেয়েরা হটপ্যান্ট পরুক, জিনস পরুক, অফ শোল্ডার পরুক আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। শুধু বলতে চেয়েছিলাম জায়গা-পরিস্থিতি দেখে পরা উচিত। যাতে খুব দৃষ্টিকটু না লাগে, একটু ডিসেন্টলি পরা দরকার।”

‘ডিসেন্টলি’ পোশাক পরা বলতে বিধাননগরের পুলিশ প্রধান ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন? কঙ্করবাবুর উত্তর, “যাতে খুব উত্তেজক বা প্রোভোকেটিভ না লাগে। তবে আমাদের প্রস্তাব কেউ মানতেও পারেন, না-ও মানতে পারেন।”

শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা “হটপ্যান্ট, অফশোল্ডার টপ বা মিনি স্কার্ট এমনিতেই নিজের মতো করে ডিসেন্ট। আমি চাইলে বিকিনি পরেও বেরোতে পারি। পুলিশ তবে আছে কী করতে?” বিস্মিত ড্রেস ডিজাইনার অভিষেক দত্তও, “মুম্বই, দিল্লির রাস্তায় তো হামেশা মেয়েরা মাইক্রোমিনি স্কার্ট, হটপ্যান্ট পরে ঘুরছে। কলকাতা বরং তুলনায় অনেক রক্ষণশীল। তাতেও এখানকার পুলিশের হচ্ছে না?”

কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী থেকে শুরু করে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ-সহ বিরোধীরাও এক সুরে অভিযোগ করেছেন, পুলিশের একটা বড় অংশ বিরোধীদের ভয় দেখাতে এত ব্যস্ত যে, নিজেদের আইনরক্ষার কাজটা ঠিকঠাক করতে পারছেন না। তাই এই সব পরামর্শ ওয়েবসাইটে দিতে হচ্ছে।

গোয়েন্দাপ্রধানের এ হেন মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের একটা বড় অংশের মধ্যেও। কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার তুষার তালুকদার বলেছেন, “হিতোপদেশের মতো এক-দুই করে অর্থহীন কিছু উপদেশ দেওয়া হচ্ছে যা মহিলাদের পক্ষে অপমানজনক।” সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য বলেন, “এই ধরনের নির্দেশ দেওয়ার পিছনে একটি অসম্ভব পুরুষতান্ত্রিক মন কাজ করেছে।” অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “ইভটিজারদের বেলেল্লাপনাকে দমন না করে পুলিশ মেয়েদের কী করা উচিত তা বাতলাচ্ছে। রাগে আমার এসপ্ল্যানেডের মোড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে।”

কঙ্করবাবু কিন্তু এ দিন বারবারই বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর প্রস্তাবের ভুল মানে করা হচ্ছে। কী ভাবে চলাফেরা করলে মেয়েদের রাস্তাঘাটে সুবিধা হতে পারে তিনি শুধু সেই রকম কয়েকটি পরামর্শ বাতলেছিলেন। তার থেকে এত বিতর্ক কেন, তাঁর বোধগম্য হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE