Advertisement
E-Paper

কেন বন্ধু জলিলের হাতে খুন হতে হয় হজরতকে? দত্তপুকুরে কাটা মুন্ডুর রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ!

গত ৩ ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়ার মালিয়াকুর বাজিতপুর এলাকার একটি ফাঁকা জমিতে এক যুবকের মুন্ডুহীন দেহ দেখতে পান কৃষকেরা। জমির পাশে পড়ে ছিল দেহটি। গোটা শরীরে ক্ষতচিহ্ন।

(বাঁ দিকে) নিহত যুবক হজরত লস্কর। এখান থেকেই উদ্ধার হয়েছিল হজরতের দেহ (ডান দিকে)

(বাঁ দিকে) নিহত যুবক হজরত লস্কর। এখান থেকেই উদ্ধার হয়েছিল হজরতের দেহ (ডান দিকে) — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৬
Share
Save

এত দিনে প্রকাশ্যে এল উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে যুবকের মুন্ডুহীন দেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য! ধৃত মূল অভিযুক্ত জলিলকে দীর্ঘ জেরার পর খুনের প্রকৃত কারণ জানতে পেরেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, চুরি করা সোনার ভাগ নিয়ে বচসার জেরেই লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা হজরত লস্করকে ছক কষে খুন করেছিলেন তাঁর সহযোগীরা।

পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ধৃত জলিলকে সারা রাত জেরার পর এই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। জেরায় জলিল জানিয়েছেন, মৃত হজরত লস্কর, ওবায়দুল গাজি এবং জলিল— এঁরা সকলেই পেশাদার চোর ছিলেন। সম্প্রতি সকলে মিলে প্রায় ৪০০ গ্রাম সোনা চুরি করেন। কিন্তু চুরির মালের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বচসা শুরু হয় তিন জনের। সোনার ভাগ নিয়ে হজরত অন্যদের ঠকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তবে জলিলের দাবি, ঘটনার সূত্রপাত তারও আগে। জলিল জানিয়েছেন, তাঁরা অনেক দিন আগে থেকেই চুরি করতেন। এ রাজ্য থেকে চুরির পর দিন কয়েকের জন্য বাংলাদেশে গা-ঢাকা দিতেন তাঁরা। তার পর সব মিটলে ফের ফিরে আসতেন। বাংলাদেশে পালানোর ক্ষেত্রে তাঁদের সাহায্য করতেন আরও এক যুবক। সুকৌশলে জলিলদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর হাত থেকে বাঁচাতেন বলে ওই যুবকের নামও হয়ে গিয়েছিল ‘বিএসএফ’! দীর্ঘ দিন ধরে নির্বিঘ্নেই চলছিল জলিলদের এই কারবার! বাদ সাধেন হজরত। সম্প্রতি উত্তরপাড়ায় একটি চুরির ঘটনার পর সহযোগী ‘বিএসএফ’কে এ রাজ্যে ডেকে নিয়ে এসে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন হজরত। এ ছাড়াও, আরও নানা ঘটনায় হজরতের সঙ্গে ক্রমেই দূরত্ব বাড়তে শুরু করে তাঁর অন্য সহযোগীদের। শেষমেশ হজরতকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে শুরু করেন দলের বাকিরা।

পুলিশকে জলিল জানিয়েছেন, পরিকল্পনামাফিক তিনি হজরতকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান। এর পর মাঠের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে পিছন থেকে হজরতের মাথায় আঘাত করেন। আঘাতে অজ্ঞান হয়ে যান হজরত। তার পর ঠান্ডা মাথায় মাংস কাটার চপারের এক কোপে ধড় থেকে হজরতের মাথা আলাদা করে দেন জলিল। যাতে ধরা না পড়েন, সে জন্য কাটা মুন্ডুটি সরিয়েও ফেলেন জলিল।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়ার মালিয়াকুর বাজিতপুর এলাকার একটি ফাঁকা জমিতে এক যুবকের মুন্ডুহীন দেহ দেখতে পান কৃষকেরা। জমির পাশে পড়ে ছিল দেহটি। গোটা শরীরে ক্ষতচিহ্ন। উপড়ে নেওয়া হয়েছিল যৌনাঙ্গ। মৃতের হাত-পা বাঁধা ছিল। এ ছাড়া, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা মদের গ্লাস, চিপ্‌সের প্যাকেটও খুঁজে পায় পুলিশ। শুরু হয় কাটা মুন্ডুর খোঁজ। তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করা হয়। খালে ডুবুরিও নামানো হয়। মৃতের বাম হাতে দুটো উল্কি ছিল। একটি ‘লভ সাইন’ এবং আর একটিতে ইংরেজি হরফে লেখা ‘বি’। শেষ পর্যন্ত ওই উল্কির সূত্র ধরেই যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়। পুলিশ জানায়, নিহত যুবকের নাম হজরত লস্কর। তিনি আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা। পরে হজরতের পরিবারের লোকেরা বারাসাত মেডিক্যাল কলেজের মর্গে এসে দেহ শনাক্ত করেন। উদ্ধার হয় খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও। এর পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি উত্তর ভারতের জম্মু থেকে মূল অভিযুক্ত জলিলকে গ্রেফতার করে বারাসত থানার পুলিশ। ওই ঘটনায় আগেই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন জলিলের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন, হজরতের মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজি এবং গাজির স্ত্রী পূজা দাস।

Duttapukur Severed Head Murder

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}