Advertisement
১১ মে ২০২৪
আজ ছাত্র ধর্মঘটের ডাক

দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল রাজনীতি

সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের সামনে সিপি সমর্থকদের বিক্ষোভ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের সামনে সিপি সমর্থকদের বিক্ষোভ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৪
Share: Save:

রাজ্যে পালাবদলের পরে শিক্ষক নিগ্রহ, ছাত্র নিগ্রহের ঘটনা নতুন নয়। দীর্ঘ সেই তালিকায় এ বার সংযোজন হল সবং। এখানে শুধু নিগ্রহের ঘটনাই ঘটল না, এক ছাত্রের মৃত্যুও হল। সবং কলেজের ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানার মৃত্যুর পরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, এর শেষ কোথায়? গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত ছাত্র- সমাজও। সবং কলেজের এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ, শনিবার প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিভিন্ন বিরোধী ছাত্র সংগঠন।
সিপির রাজ্য সহ- সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা টিএমসিপি বোঝে না। তাই ওরা এ ভাবে দাপাদাপি করে। ছড়ি ঘোরায়। যখন বুঝবে, তখন পিছনে ফিরে দেখবে, কেউ নেই! ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে? রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, এই ঘটনা থেকেই তা বোঝা যায়।” সংগঠনের কর্মী খুনের ঘটনায় জড়িত সকলকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে সিপি। শনিবার রাজ্য জুড়ে পথ অবরোধ কর্মসূচি হবে বলেও জানিয়েছে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “তৃণমূল আমলে ক্যাম্পাসে যে সব ঘটনা ঘটে চলেছে, দীর্ঘ সেই তালিকায় সবংয়ের ঘটনা একটা সংযোজন। সুদীপ্ত গুপ্তকে মেরে ফেলা হয়েছে। কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকেও মেরে ফেলা হল। শুধু সবং কিংবা পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, রাজ্যের সর্বত্র এই সংস্কৃতি চলছে।” সৌগতর কথায়, “টিএমসিপির কর্মীরা কলেজে ঢুকে গুণ্ডামি করছে। যেন দখলদারির রাজনীতি চলছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। অরাজকতার প্রতিবাদে মুখ খুললে আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। সে যেই হোন, শিক্ষক কিংবা ছাত্র।”
পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রপ্রিয় সব ছাত্রছাত্রীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক। তাঁর বক্তব্য, “ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। শুধু প্রতিবাদ করলে হবে না। প্রতিরোধে সামিল হতে হবে। ছাত্রছাত্রীরাই পারে প্রতিরোধ করতে। ছাত্র- সমাজকে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। এ কাজ একা কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়। সবাই মিলে করতে হবে।” ডিএসও- র জেলা সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়েক বলেন, “সারা রাজ্যে কলেজে কলেজে নীতিহীন ক্ষমতা দখলের রাজনীতি এবং ছাত্র রাজনীতিতে দুস্কৃতীদের অনুপ্রবেশের অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং করুণ পরিণতি ঘটল সবং কলেজে। সিপি এবং টিএমসিপি আশ্রিত দুই দল দুস্কৃতীর সংসদ দখলের লড়াইয়ে প্রাণ গেল কৃষ্ণপ্রসাদ জানার। এদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কোনও পার্থক্য নেই। টিএমসিপি প্রশাসনিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি চালাচ্ছে। দিন কয়েক আগে খড়্গপুর কলেজেও প্রতিবাদী ছাত্রীরা নিগৃহীত হয়েছে। আমরা সবংয়ের ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে নিস্ক্রিয় প্রশাসনিক কর্তাদেরও শাস্তি দাবি করছি।”

কলেজ ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে মেদিনীপুর শহরে কংগ্রেসের মিছিল (বাঁ দিকে)।

প্রতিবাদে সরব এসএফআইও (ডান দিকে)। শুক্রবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

সবংয়ের ঘটনা নিয়ে কি প্রতিক্রিয়া শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির। টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “যে কোনও মৃত্যুই দু:খজনক। সবংয়ের ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এটা নিছক একটা দুর্ঘটনা। এ নিয়ে রাজনীতি করা অনুচিত!” জেলার এক কলেজ- শিক্ষকের কথায়, “শিক্ষাক্ষেত্রে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। ছেদ পড়ছেই না। অথচ, মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এ সবের বিরুদ্ধে কখনওই কড়া কথা শোনা যায়নি। কখনও ‘ছোট ছেলের ভুল’ বলে দায় এড়িয়েছেন, কখনও নীরব থেকেছেন। ফলে, যা হওয়ার তাই হচ্ছে! এমন ঘটনা বাড়ছে। এর শেষ কোথায়, সেটাই দেখার!” তাঁর কথায়, “এ ভাবে কোনও ছাত্রকে প্রাণ হারাতে হবে, এটা ভাবতেই কেমন লাগে।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগতর সংযোজন, “বর্তমানে এক সর্বাত্মক আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছাত্রসমাজ। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ভয়ঙ্কর নৈরাজ্যের পরিবেশ। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থেই পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার।” সবংয়ের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে এসএফআই। এই প্রথম নয়, এর আগে কখনও মেদিনীপুরে, কখনও গড়বেতায়, কখনও খড়্গপুরে, কখনও বেলদায়, কখনও ঘাটালে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নজির রয়েছে আরও।

অথচ, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির দাপাদাপি যে তাঁর একেবারেই পছন্দ নয়, রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পরে মহাকরণে দাঁড়িয়ে সেই বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, কে শোনে কার কথা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE