Advertisement
১৯ মে ২০২৪
শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

ফের আক্রান্ত পুলিশ, লাঠি কেড়ে মারধর

ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে এত দিন বিরোধী দলের কর্মীদের মারধর, তাঁদের বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। কোথাও কোথাও শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেও গোলমাল হচ্ছিল। এ বার সন্দেশখালিতে ভোট-পরবর্তী হিংসার শিকার হল পুলিশও!

নির্মল বসু
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৪:১৫
Share: Save:

ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে এত দিন বিরোধী দলের কর্মীদের মারধর, তাঁদের বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। কোথাও কোথাও শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেও গোলমাল হচ্ছিল। এ বার সন্দেশখালিতে ভোট-পরবর্তী হিংসার শিকার হল পুলিশও!

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিংসা বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, হিংসা এখনও বন্ধ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই রাজ্যে তৃণমূলের নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আর তার পরে এই
প্রথম পুলিশের উপরে হামলা হল।
এ ক্ষেত্রেও অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকেই। তবে, তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।

রবিবার দুপুরে সন্দেশখালিতে এক তৃণমূল নেতার বাড়ি পাহারা দিতে গিয়ে দুই পুলিশ কর্মী এবং এক সিভিক ভলান্টিয়ার আক্রান্ত হন। তৃণমূলেরই মিছিল ফেরত কয়েকজন কর্মী-সমর্থক পুলিশের লাঠি কেড়ে নিয়ে তাঁদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এর পিছনে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই ছায়া দেখছে পুলিশেরই একাংশ। বস্তুত, ভোট-পরবর্তী হিংসার মধ্যে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও রয়েছে। এ দিনই কেশিয়ারিতে এবং ধনেখালিতে তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ হয়। দিন কয়েক আগে একই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে হুগলির পান্ডুয়া। কিন্তু কোথাও পুলিশকে আক্রান্ত হতে হয়নি। যা রবিবার হল সন্দেশখালিতে।

তবে, গত পাঁচ বছরে কাজ করতে নেমে রাজ্যের শাসক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বারবার সামনে এসেছে। কখনও তা দেখা গিয়েছে বোলপুরে, কখনও আলিপুরে, কখনও নোয়াপাড়া, ইসলামপুর, পাত্রসায়র বা চাঁপদানিতে। সেই তালিকাতেই শেষ সংযোজন সন্দেশখালি। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। হামলাকারীদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের ফল প্রকাশের রাতেই সন্দেশখালি-১ ব্লকের বয়ারমারি-২ পঞ্চায়েতের ভেলোপাড়ায় বাসিন্দা তৃণমূল নেতা জুম্মান শেখের বাড়িতে হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতী। অভিযোগ, দলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ওই হামলা। জুম্মান বাড়িতে না থাকায় হামলাকারীরা তাঁর বাবা-মাকে মারধর করে। এলাকা সন্ত্রস্ত করতে গুলি ছোড়া হয় এবং কিছু তৃণমূল কর্মীর দোকান বন্ধ করে দিয়ে জরিমানা করা হয় বলেও অভিযোগ। তার পর থেকেই জুম্মান বাড়িছাড়া। তাঁর বাড়িতে দুই পুলিশকর্মী ও এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে পাহারার জন্য মোতায়েন করা হয়।

রবিবার সকালে পঞ্চায়েত এলাকায় বিজয়-মিছিল করে তৃণমূল। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মিছিল ফেরত একদল তৃণমূল সমর্থক জুম্মানের বাড়িতে ফের হামলা চালাতে উদ্যত হয় বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন পুলিশকর্মী সিরাজুল ইসলাম শেখ, নুর আলম খান এবং সিভিক ভলান্টিয়ার। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রথমে রাজবাড়ি ফাঁড়ি থেকে পুলিশ আসে। পরে মিনাখাঁ এবং সন্দেশখালি থানা থেকে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। নুর আলমকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মিনাখাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এলাকার এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘ভোটের অনেক আগে থেকেই এই এলাকায় দলের গোলমাল লেগে ছিল। মূলত পুরনো তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে সিপিএম ছেড়ে দলে আসা ছেলেদের মতবিরোধই গোলমালের কারণ। মনে হচ্ছে একই কারণে এ দিনের গোলমাল।’’ বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গোলমাল বা পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। সন্দেশখালির ঘটনায় পুলিশকে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Post poll violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE