Advertisement
E-Paper

উন্নয়নে বঞ্চনা কেন, প্রশ্ন মদন-হোর্ডিংয়ে

টানা আট মাস তিনি ঘেরাটোপে বন্দি। অল্প দিন জেলের গরাদে, বাকি দিনগুলো হাসপাতালে। কিন্তু তিনি যত দিন নজরের বাইরে, বাংলার মানুষও তো তত দিন ‘উন্নয়নের বাইরে’— ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের অনুগামীদের সর্বশেষ দাবি এমনই!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৬
মদন মিত্রের মুক্তির দাবিতে পোস্টার। বুধবার কলেজ স্ট্রিট চত্বরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

মদন মিত্রের মুক্তির দাবিতে পোস্টার। বুধবার কলেজ স্ট্রিট চত্বরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

টানা আট মাস তিনি ঘেরাটোপে বন্দি। অল্প দিন জেলের গরাদে, বাকি দিনগুলো হাসপাতালে। কিন্তু তিনি যত দিন নজরের বাইরে, বাংলার মানুষও তো তত দিন ‘উন্নয়নের বাইরে’— ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের অনুগামীদের সর্বশেষ দাবি এমনই!

কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে সদ্যই লেগেছে কিছু নতুন হোর্ডিং। কোনওটার বক্তব্য, ‘২৪০ দিন বিনা অপরাধে মদন মিত্র বন্দি কেন? বাংলার মানুষ জবাব চায়!’ কোনওটায় বলা হচ্ছে: ‘২৪০ দিন সাধারণ মানুষ মদন মিত্রের উন্নয়ন যজ্ঞ থেকে বঞ্চিত। এর বিচার কে করবে?’ এমন হোর্ডিংয়ের কথা জানাজানি হতেই ফের ফিসফাস শুরু হয়েছে তৃণমূল শিবিরে। তাঁর বন্দিদশায় মদনের জন্য ‘সুবিচার’ চেয়ে ইতিমধ্যেই দফায় দফায় হোর্ডিং দেখেছে এই শহর। দেখেছেন তৃণমূল নেতারাও। কিন্তু এ বারের হোর্ডিং তাঁদের চোখ আরও কপালে তুলে দিয়েছে! প্রকাশ্যে তাঁদের কেউই এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। তবে দলের অন্দরের আলাপচারিতায় কেউ কেউ বলছেন, ‘‘এই লোকটা দেখছি কখন কী করবে, কিছু ঠিক নেই! রাজ্যের মানুষের জন্য উন্নয়নের কাজে দিনরাত পরিশ্রম করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও বাংলার মানুষ উন্নয়ন যজ্ঞ থেকে বঞ্চিত বলা মানে তো দিদির কাজ নিয়েই ঘুরিয়ে প্রশ্ন তোলা!’’ দলেরই আর এক নেতা বলছেন, ‘‘উন্নয়ন আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমার্থক। জেলে থেকে মদন কি এটাও ভুলে গেল!’’

মন্ত্রী মদনের ঘনিষ্ঠ আইনজীবী মহল-সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, হোর্ডিংয়ের বাণীর সঙ্গে তাঁদের ‘দাদা’র কোনও সম্পর্ক নেই। এক জনের কথায়, ‘‘উনি এখন হাসপাতালে, শরীরটাও ভাল নেই। তাঁর অনুগামীরা কোথায় কী হোর্ডিং বা ব্যানার লাগাচ্ছেন, দাদা জানবেন কী করে?’’ প্যানিক অ্যাটাক, জ্বর ও নিউমোনিয়ার জন্য সোমবার এসএসকেএম হাসপাতালের আইটিইউ-এ সরানো হয়েছিল মদনকে। জ্বরের প্রকোপ এতটাই বেড়েছিল যে, তিনি ভুল বকছিলেন। সঙ্গে খিঁচুনিও ছিল। রক্তে ভাল মাত্রায় সংক্রমণ মেলায় চিকিৎসকেরা নিউমোনিয়ার ব্যাপারেও নিশ্চিত হয়েছিলেন।

ঘটনাচক্রে, শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে যখন তাঁর নামাঙ্কিত নতুন হোর্ডিং লাগছে, তখন বুধবার হাসপাতালে খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন মদন। আইটিইউ থেকে বার করে এ দিন বিকেলে ফের তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উডবার্ন ওয়ার্ডের সাড়ে বারো নম্বর কেবিনে। তাঁর অক্সিজেন ও নেবুলাইজার চলছে। এসএসকেএমের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিকে সাড়া দিচ্ছেন মদন।

‘দাদার’ অনুগামীদের হোর্ডিংয়ে আদালত কি সাড়া দেবে? উত্তর জানতে হলে ধৈর্য ধরা ছাড়া গতি নেই। যদিও ঘটনাপ্রবাহের চাপে মদনের দলের নেতাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে।

চিকিৎসকদের মতে, জেল থেকে মদনকে যে হাসপাতালে সরিয়ে আনতে হয়েছিল, তার মূল কারণ ছিল ‘প্যানিক অ্যাটাক’। এখন কামারহাটির বিধায়কের অনুগামীদের ঠেলায় শাসক দলের নেতৃত্বেরই প্রায় প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার জোগাড়! এর আগে তাঁর ‘বিচারের’ দাবিতে এমন হোর্ডিং পড়েছিল শহর জুড়ে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশে পুরসভা সে সব হোর্ডিং খুলে ফেললেও কামারহাটিতে কিছু হোর্ডিং রয়েই গিয়েছিল। পরে মদন-অনুগামীরা আবার নতুন কায়দায় রবীন্দ্রনাথের আশ্রয় নিয়েছিলেন। ‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু’ শীর্ষক হোর্ডিং এখনও রয়েছে কলকাতার বুকে। এ বার কপিল সিব্বলকে এনেও হাইকোর্ট থেকে ‘দাদা’র জামিন না হওয়ার পরে তাঁর অনুগামীরা উন্নয়নের অস্ত্র ধরেছেন! তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘এই ধরনের বেশির ভাগ হোর্ডিংয়ে কারও নাম থাকে না। তাই দল সতর্ক করতে চাইলেও কাকেই বা করবে?’’

তাই ছেদ নেই হোর্ডিং-নাট্যেও।

Madan Mitra Poster hospital kamarhati
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy