Advertisement
১৬ জুন ২০২৪

হাতে-কলমে পঠনপাঠন ও পরীক্ষা ষষ্ঠ শ্রেণিতেই

প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে করে দেখালে তবেই মিলবে নম্বর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০৪:০০
Share: Save:

প্রতিফলনের সংজ্ঞা মুখস্থ করে খাতায় লিখলেই হবে না, সেটা করে দেখাতে হবে হাতে-কলমে। ভূগোলের লেখার পাশে আঁকলেই হল না, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে করে দেখালে তবেই মিলবে নম্বর।

মাধ্যমিক পর্যন্ত এখন প্র্যাক্টিক্যাল বা হাতে-কলমে পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই। এ বার ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই কার্যত প্র্যাক্টিক্যাল চালু করে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। মুখস্থ বিদ্যার বদলে ছাত্রছাত্রীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্কুলে অভিনব উপায়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।

পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২০টি স্কুলকে। আগামী অগস্টে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ক্লাসের দ্বিতীয় সামেটিভ পরীক্ষায় এই পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। পুথিগত বিদ্যার গণ্ডি পার করে পড়ুয়াদের বৃহত্তর ক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ বলে জানান জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা। তবে আদৌ এটা রাজ্যের সব স্কুলে চালু হবে কি না, সেই বিষয়ে কেউই কিছু বলতে পারেননি।

স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২০টি স্কুলে নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে। তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান ও ভূগোলকে। ইতিহাস এই পর্যায়ে বাদ থাকছে। বারুইপুর গার্লস হাইস্কুলও রয়েছে ওই কুড়িটি স্কুলের তালিকায়। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা ভট্টাচার্য জানান, পুথিগত বিদ্যার গণ্ডি ছাড়িয়ে হাতে-কলমে কাজ করলে পড়ুয়ারা দ্রুত পুরো বিষয়টা শিখে নিতে পারবে। অগস্টে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে এই পদ্ধতিতে সামেটিভ পরীক্ষা হবে। এর জন্য জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের তরফে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার জন্য পড়ুয়াদেরও যথাযথ ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এত দিন প্রতিফলনের সংজ্ঞা মুখস্থ করে খাতায় লিখতে হত। এ বার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে পড়ুয়ারা সেটা করে দেখাবে। তার ভিত্তিতে পরীক্ষায় নম্বর দেবেন শিক্ষকেরা।

শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, এটা গোটা রাজ্যেই চালু হওয়া উচিত। কারণ যেটা ক্লাসে পড়ানো হচ্ছে, সেটা হাতে-কলমে করলে বিষয়ের ভিতরে ঢুকতে পারবে পড়ুয়ারা। বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সঙ্গে সরকারি স্কুলগুলোর প্রতিযোগিতা যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে পড়াশোনার মান ও পদ্ধতির পরিবর্তন না-হলে স্কুলগুলির ভবিষ্যৎও সঙ্কটে পড়বে। ইতিমধ্যে সেই তালিকায় ঢুকে পড়েছে কলকাতা, হাওড়া-সহ বেশ কয়েকটি জেলা। তাই এই উদ্যোগ বলে জানান জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট স্কুলগুলিতে এই পদ্ধতি সফল ভাবে চললে গোটা জেলাতেই তা চালু করা হতে পারে।’’

নতুন পদ্ধতির প্রশংসা করলেও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণের উপরেই জোর দিয়েছেন পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের কাজে আমরা জোর দিয়েই থাকি। কিন্তু পরীক্ষা পদ্ধতির নিয়ম মেনেই সব কিছু করা উচিত।’’ বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানান, ভাল উদ্যোগ। কিন্তু রাজ্যের সর্বত্র একই নিয়মে পরীক্ষা বাঞ্ছনীয়। বিভিন্ন জেলার মধ্যে সমন্বয় না-থাকলে অসুবিধা হতে পারে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও জেলা স্কুলশিক্ষা প্রশাসন একত্রে এই কাজ করছে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে অভিজিৎ বর্ধন বলেন, ‘‘সব কিছুই নিয়ম মেনে করা হচ্ছে। এর ফলে পড়ুয়ারা উপকৃত হবে বলেই মনে করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

practical examination Education শিক্ষা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE