কুসংস্কার এতটাই যে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হাত থেকে রেহাই পেলেন না অন্তঃসত্ত্বা বধূও।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে মাঝে-মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন শিক্ষিত ওই তরুণী। কিন্তু ভূতে ভর করেছে, এই সন্দেহে তাঁকে এক আশ্রমে সাধুর কাছে নিয়ে যান শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। অভিযোগ, ভূত তাড়ানোর নামে টানা তিন দিন ধরে চলে জিভে তির বিঁধে ঝাঁটা দিয়ে মারধর। অত্যাচারের জেরে গর্ভের সন্তান হারিয়েছেন শ্রাবন্তী ঘোষ নামে মঙ্গলকোটের ওই বধূ। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আপাতত তিনি কলকাতার বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে ভর্তি। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে শিকার ওই তরুণীর আতঙ্ক এখনও কাটেনি। তাঁর বোন কুমকুম বলেন, ‘‘হাসপাতালে পনেরো দিন দিদির চেতনা ছিল না। এখন চেয়ে দেখলেও কথা বলছে না’’
রবিবার ওই বধূর বাবা, কাটোয়ার কুঁয়ারা গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব দাস মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও আশ্রমের দুই সাধুর বিরুদ্ধে মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ করেন। বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানান, অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
বছর দুয়েক আগে মঙ্গলকোটের রাধানগর গ্রামের সাহেব ঘোষের সঙ্গে বিয়ে হয় বছর কুড়ির শ্রাবন্তীর। বর্ধমানের একটি কলেজের তৃতীয় বর্ষে পড়েন তিনি। কাটোয়ায় কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন জানান, মাস চারেক আগে অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার পর থেকে মাঝে-মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন শ্রাবন্তী। স্বামী ও শ্বশুর তাঁকে পাশের শীতল গ্রামে জ্যোতিপ্রকাশ হাজরার আশ্রমে নিয়ে যান। মাসখানেক আগের ঘটনা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি সন্ধ্যায় ওই বধূকে একটি স্তম্ভে প্রায় বিবস্ত্র করে বেঁধে চলত হোম-যজ্ঞ। মারধরও করা হত। সব জানতে পেরে তরুণীটির মামা লোকজনকে ডেকে ভাগ্নীকে উদ্ধার করেন। এর পরে শ্রাবন্তীকে বর্ধমান নার্সিংহোম নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরিবার সূত্রের খবর, অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাঁকে বাঁচাতে শেষ মুহূর্তে চিকিৎসকেরা গর্ভপাত করাতে বাধ্য হন। গত ৫ অগস্ট থেকে শ্রাবন্তী বাঙুরে ভর্তি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, খিঁচুনি হওয়ায় কড়া ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে তাঁকে। স্নায়ু স্থিতিশীল হলে জিভের প্লাস্টিক সার্জারি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy