সকাল সাড়ে ৭টা। মেদিনীপুর শহর তখনও কনকনে শীতের চাদরে মোড়া। সেই সময়েই আধো-অন্ধকারে সেন্ট্রাল জেলের মেন গেটের ছোট্ট দরজাটা খুলে গেল। একে একে বেরিয়ে এলেন চাদর অথবা মাফলার জড়ানো তিন জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। কারও হাতে কোদাল, কারও হাতে গাঁইতি আর তৃতীয় জনের হাতে ঝু়ড়ি। এঁদের কেউ ধর্ষণ, কেউ খুন বা ডাকাতির মামলায় জেল খাটছেন।
বৃহস্পতিবারের এই সাতসকালে লৌহকপাটের বাইরে ওঁরা কোথায় যাচ্ছেন? জেল পালাচ্ছেন নাকি?
না। ওঁরা আসলে ‘একস্ট্রাম্যুরাল গ্যাং’ (কারা-প্রাচীরের বাইরে খাটতে বেরোনো বন্দি)। পশ্চিমবঙ্গে জেলের মানচিত্রে এমন ‘গ্যাং’ ফেরত এল প্রায় ৩০ বছর পরে। এবং এল বিবেকানন্দের জন্মদিনে। ওই বন্দিদের গন্তব্য, কারাগার সংলগ্ন চাষের জমি। জেল থেকে বেরিয়ে ওঁরা সেই জমিতে কাজ করেন। দিনের শেষে আবার নিজেরাই ফিরে আসেন জেলে।
মুক্ত জেলের ক্ষেত্রে বন্দিদের বাইরে পেশার খোঁজে ঘুরে বেড়ানোই দস্তুর। সেখানে বন্দিরা থাকেন তাঁদের পরিবারের সঙ্গেই। কিন্তু সেন্ট্রাল জেল থেকে দীর্ঘদিন বন্দিদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। ব্রিটিশ আমলে এই ধরনের একস্ট্রাম্যুরাল গ্যাং থাকত প্রায় সব জেলেই। দণ্ডিতদের জেলের বাইরে পাঠানো হতো কাজ করার জন্য। স্বাধীনতার পরেও তা চালু ছিল। কিন্তু সত্তরের উত্তাল দশকে জেলের অন্দরের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল একস্ট্রাম্যুরাল গ্যাং। আশির দশকের মাঝামাঝি তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্দিদের সংশোধন করার জন্য জেলের ভিতরে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে তাঁদের বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু একস্ট্রামুরাল গ্যাং আর চালু হয়নি। এ দিন একস্ট্রাম্যুরাল গ্যাংয়ের সেই কাজকর্ম ফের শুরু হল।
মেদিনীপুর জেল থেকে এ দিন কাজে বেরিয়েছিলেন বাবুলাল হেমব্রম, মিলন দাস এবং অমল পাত্র। প্রত্যেকেরই বয়স চল্লিশের কোঠায়। জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী জানান, প্রাথমিক ভাবে ওই তিন বন্দিকে জেলের বাইরে পাঠানো হল জেলের একেবারে পাশের জমিতে কাজ করার জন্য। কারা দফতরের খবর, এই ব্যবস্থা সফল হলে অনেক বন্দিকে বাইরে দূরে কাজ করতে পাঠানো হবে।
কারা দফতরের সূত্র জানাচ্ছে, মেদিনীপুর জেলে একস্ট্রাম্যুরাল গ্যাং-কে দিয়ে কাজ করানোর ব্যবস্থা নতুন ভাবে চালু হল। দমদম এবং আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের বন্দিরাও বাইরে বেরিয়ে কাজের সুযোগ পাবেন। কারা দফতরের এক কর্তা জানান, আলিপুর জেলের বাইরে একটি খাবারের দোকান তৈরির চেষ্টা চলছে। সেটি চালাবেন বন্দিরাই। দিনের বেলা বন্দিরা জেলের বাইরে ওই দোকান চালাবেন। ‘‘এই বিষয়ে গত সপ্তাহেই কারা দফতরের ডিজি অরুণ গুপ্তের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছি আমরা,’’ বললেন ওই কারাকর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy